ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অফিসে দায়িত্ব ফেলে টিকটকে ব্যস্ত প্রকৌশলী, উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৬, ৭ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ২১:৪৭, ৭ জুলাই ২০২৫
অফিসে দায়িত্ব ফেলে টিকটকে ব্যস্ত প্রকৌশলী, উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ

ডিপিডিসির সাতমসজিদ জোনের সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সাজেদুল ইসলাম সোহাগ

দপ্তরেই অফিসিয়াল আইডি ঝুলিয়ে বসে থাকা চেয়ার, কিংবা অফিসের বারান্দায় ঘোরাঘুরি। এ দৃশ্যগুলো সাধারণ কর্মজীবনের নয়, বরং জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকের জন্য ধারণ করা ভিডিও’র দৃশ্য।

এই অদ্ভুত সমীকরণে এখন বিতর্কের কেন্দ্রে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) এক প্রকৌশলী।

সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় বিনোদনের উদ্দেশ্যে অফিস প্রাঙ্গণ ব্যবহার এটিকে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে করছে না প্রশাসনিক মহল। বরং বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ গিয়ে ঠেকেছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে, লিখিত অভিযোগ দাখিল হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বরাবর।

গত ১৯ জুন রাজধানীর এক বাসিন্দা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের  উপদেষ্টার দপ্তরে একটি বিস্তারিত অভিযোগপত্র পাঠান। অভিযোগে নাম উঠে আসে ডিপিডিসির সাতমসজিদ জোনের সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সাজেদুল ইসলাম সোহাগের।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, অফিস চলাকালে সরকারি সম্পদ, সময় ও পরিকাঠামো ব্যবহার করে তিনি একাধিক টিকটক ভিডিও তৈরি করেন। ভিডিওগুলোতে তাকে অফিসিয়াল আইডি কার্ডসহ অফিস প্রাঙ্গণে দেখা যায় যা সরকারি আচরণবিধি ও শৃঙ্খলা বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।

অভিযোগকারীর ভাষায়, এটি শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, বরং জনসম্পদ ব্যবহারের অপব্যবহার ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলার অবমাননা।

প্রমাণ হিসেবে সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে একাধিক ভিডিও লিংক ও স্ক্রিনশট। যেগুলোতে দেখা যায়, অভিযুক্ত প্রকৌশলী কখনো অফিস চেয়ারে বসে, কখনো অফিস চত্বরের বারান্দা বা করিডোরে হেঁটে বেড়াচ্ছেন, কখনো আবার অফিসের ল্যাম্প বা ডেস্ককে ফ্রেমে এনে বিনোদনমূলক কনটেন্ট তৈরি করছেন।

ভিডিওর ক্যাপশনে বা অডিওতে কোনো আপত্তিকর ভাষা না থাকলেও, দাপ্তরিক পরিবেশে এমন ভিডিওধারণ এবং তা পাবলিকলি প্রকাশ প্রশাসনিক বিবেচনায় গুরুতর বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।

সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধি, ১৯৭৯ এবং শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুসারে এ ধরনের কর্মকাণ্ড স্পষ্টতই শাস্তিযোগ্য। প্রতিষ্ঠান ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোনো আচরণ বরদাশতযোগ্য নয়। তাছাড়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় কোনো ভিডিও বা কনটেন্ট প্রতিষ্ঠানবিরোধী বা বিভ্রান্তিকর হলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, “আমি ভুল করেছি। টিকটক করাটা একেবারে শখের বসে শুরু করেছিলাম। তবে আমার দায়িত্ব ও পদমর্যাদার সঙ্গে এটি যায় না। এখন আমি আমার আইডি বন্ধ করে দিয়েছি।

ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অ্যাডমিন অ্যান্ড এইচআর) সোনামনি চাকমা বলেন, “আমরা অভিযুক্তকে শোকজ করেছি। তিনি তার জবাব দিয়েছেন। এখন সেটি পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। সার্ভিস রুল অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ ধরনের কাজ ডিপিডিসির মতো একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির জন্য হুমকি। প্রকৌশলী সোহাগের ঘটনা আমাদের জন্য 'ওয়ার্নিং বেল'। তাকে আদর্শ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সরকারি দপ্তরে ভিডিও বানিয়ে প্রচারের অভিযোগ নতুন নয়। গত কয়েক বছরেই এমন ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে, ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বরখাস্ত, ২০২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক পুলিশ কনস্টেবল সাময়িক বরখাস্ত, ২০২৪ সালে নোয়াখালীর এক সিনিয়র নার্সের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা অন্যতম।

অভিযোগকারী মনে করেন, যেখানে অতীতে শাস্তির নজির রয়েছে, সেখানে যদি এই ঘটনায় শৈথিল্য দেখানো হলে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।

ডিপিডিসির  গ্রাহক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “সামাজিক মাধ্যমে এখন অনেকেই বলছেন, যদি অভিযুক্ত প্রকৌশলীর কোনো রাজনৈতিক ব্যাকআপ থাকে, তাহলে তদন্ত কীভাবে প্রভাবমুক্ত থাকবে? সরকার কি আদৌ কঠোর বার্তা দিতে পারবে?”

তিনি বলেন, “এটি কেবল এক ব্যক্তির শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা নয় এটি গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থার দায়। এর প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যাবে, সরকারি সেবাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলার মান কতটুকু কার্যকর। অফিসে টিকটক করার মতো ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে শখ মনে হলেও, এর গভীরতা অনেক বেশি।”

তিনি আরো বলেন, “রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের সময় এমন বিনোদন কতটা বৈধ ও নৈতিক, সে প্রশ্ন আবারও সামনে এনে দিয়েছে প্রকৌশলী সোহাগের ঘটনা। এখন দেখার বিষয় প্রতিষ্ঠান ও সরকার কী বার্তা দেয়, উদাহরণ সৃষ্টি করে নাকি দৃষ্টান্ত হারিয়ে ফেলে।”

ঢাকা/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়