ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কোরবানির শিক্ষা ও করোনায় করণীয়

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ১ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
কোরবানির শিক্ষা ও করোনায় করণীয়

‘ঈদ মোবারক’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন: ‘ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই,/ সুখ দুখ সম-ভাগ করে নিব ভাই,/ নাই অধিকার সঞ্চয়ের।’

‘কোরবানি’ শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে। এর অর্থ ত্যাগ করা, সমর্পণ করা, উৎসর্গ করা বা উপহার দেওয়া। কোনো মহান উদ্দেশ্যে নিজের সবকিছু উৎসর্গ করার নাম কোরবানি।

বছর ঘুরে এসেছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহা। অতীতের বছরগুলোর তুলনায় এবার ঈদ এসেছে ভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে। বিগত বছরগুলোতে পৃথিবী ছিল সুস্থ। কিন্তু এবার পৃথিবী করোনাসৃষ্ট মহামারিতে আক্রান্ত। বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির। ইসলামের অন্যতম একটি অপরিহার্য কাজ হজ পালনেও আনতে হয়েছে বিশেষ সতর্কতা, কমিয়ে আনা হয়েছে পরিসর।

এমন বৈরি পরিবেশের মধ্যেই এবার এসেছে ঈদুল আজহা। এই পরিস্থিতিতে কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা কী হওয়া উচিত? বিষয়টি বুঝতে হলে এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের দিকে দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন। আমরা যে কোরবানি করি তা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর সুন্নাত। তিনি মহান আল্লাহর কাছ থেকে তার নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু সন্তান হযরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করেন। এখানে ‘প্রিয় বস্তু’ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামর্থ্যবানের কাছে তার প্রিয় বস্তু অর্থ সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যোগ্য প্রাপ্যদের নিকট বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই কোরবানির তাৎপর্য লুকিয়ে আছে। এর মাধ্যমেই কোরবানির প্রকৃত হক আদায় হবে।

একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারি- সভ্যতার বিকাশে ত্যাগ ও কোরবানির গুরুত্ব অপরিসীম। কোরবানি না দিয়ে কোনো সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সাফল্যের পেছনেও থাকে কারো না কারো কোরবানি। পিতা-মাতার ত্যাগ ও কোরবানির বদৌলতে সন্তান প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে।

কোরবানি ঈদ আমাদের স্পষ্ট করে বলে দেয় যে, সামর্থ্যবানের ত্যাগই সমাজের বঞ্চিত আর অসহায়দের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। সমাজে নিয়ে আসবে অকৃত্রিম বন্ধন ও সমতা। তবে এ বিষয়টিও মনে রাখা দরকার- সামর্থ্যবানের সম্পদে গরিবের জন্য করুণা নয় বরং রয়েছে অধিকার। তাই তাদের কোরবানি গরিবের জন্য কোনোভাবেই দয়া প্রদর্শন নয়। এই ঈদ আমাদের সেই শিক্ষা দেয়। ত্যাগের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শিক্ষা দেয়।

বিশ্বজুড়ে পবিত্র ঈদুল আজহায় ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কোরবানি দেন। আমাদের আশপাশে অনেক সামর্থ্যবান আছেন যারা করোনার অজুহাতে কোরবানির বিধানকে শিথিল করে দেখছেন কিংবা ভাবছেন। তাদের অবশ্যই জানা উচিত- কোনো অবস্থাতেই কোরবানির বিধান শিথিল হতে পারে না। কেননা কেবল গোশত খাওয়াই কোরবানির উদ্দেশ্য নয়, বরং কোরবানির পশুর মতো মনের পশুত্বকে বলি দেওয়ার শিক্ষাও আমরা এখান থেকে নিতে পারি। 

আবার যারা কোরবানি করবেন, তাদের উদ্দেশ্যে কথা হলো, কোরবানির পশুর মাংসের একটি অংশ সমাজে যারা প্রাপ্য তাদের বুঝিয়ে দেবেন। করোনা পরিস্থিতিতে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ- অনেকেই আগে হয়তো সামর্থ্যবান ছিলেন কিন্তু করোনার কারণে আগের পরিস্থিতিতে নেই, তাদের কথাও চিন্তা করা দরকার। আপনার প্রতিবেশী কেমন আছেন? খোঁজ নিন।

পশু জবাইয়ের পর সেই বর্জ্য পরিষ্কার করাও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে পরিষ্কার তো দূরের কথা বরং যত্রতত্র পশু কোরবানি করেন। জবাইয়ের পর বর্জ্য খোলা জায়গায় ফেলে রাখেন। এটি মানবদেহ এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, আমরা এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। এ সময় স্বাস্থ্যগত বিষয়ে কোনো অবহেলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এখন প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। করোনার কারণে সামর্থ্যবানের কোরবানি না-দেওয়া যেমন অজুহাত হতে পারে না, তেমনি কোরবানির বর্জ্য যেন আমাদের নতুন করে স্বাস্থ্য সমস্যায় না ফেলে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। একইসঙ্গে ভাবতে হবে, দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষের কথা। মনে রাখতে হবে, এবার আমরা দুর্যোগময় একটি সময়ে ঈদুল আজহা পালন করছি। সর্বোচ্চ ত্যাগের এখনই সময়। আল্লাহ আমাদের সবার কোরবানি কবুল করুন।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়