ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: মানতে হবে সরকারের নির্দেশনা

প্রকাশিত: ১২:২৮, ৭ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১২:৩২, ৭ এপ্রিল ২০২১
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: মানতে হবে সরকারের নির্দেশনা

আজ ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্বব্যাপী দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘Building a fairer, Healthier world’ অর্থাৎ একটি সুন্দর এবং সুস্থ বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

আমরা জানি, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য খাত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আমাদের সারা বছর কিছু অসংক্রামক ব্যাধি থাকে, সঙ্গে নানান ধরনের সংক্রামক ব্যাধিও। এগুলো বাংলাদেশসহ বিশ্বকে হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে। যেমন কোভিড-১৯সহ কয়েক বছর আগে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ইবোলা। একদিকে ধনী-গরিবের বৈষম্য, অন্যদিকে দারিদ্র্যগোষ্ঠী এই করোনাকালে আরো বেশি কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে। গ্রামের অনেকেই আছেন যারা সঠিক পরিমাণে পুষ্টি পাচ্ছেন না এবং তাদের যে মৌলিক চাহিদা, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা- এগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে মহামারিকালে তাদের কষ্টের সীমা আরো বেড়ে গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস এমন সময় এসেছে যা বাংলাদেশে লকডাউনের মধ্যে আমরা পালন করতে যাচ্ছি। সুতরাং আমাদের এই দিবসের যে প্রতিপাদ্য বিষয় তা হলো- দেশের মানুষকে সচেতন করা, বিশ্ববাসীকে সচেতন করা। আমরা দেখছি, অনেকেই আছেন সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। আমরা এই অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জগুলো থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি সেই বিষয়গুলো এই দিনে নতুন করে ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবারও বলছি, মহামারিকালে অনেকেই আছেন, তারা হয়তো উন্নত জীবনযাপন করছেন, যারা স্বাস্থ্য খাতের সমস্ত সু্যোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। কিন্তু দেশের একটি বড় অংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছেন। এ অবস্থা শুধু বাংলাদেশেই নয়, এটি একটি গ্লোবাল সমস্যা।

আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষকে কোভিড-১৯ টিকাদানের আওতায় আনতে পারিনি। খুব অল্পসংখ্যক লোককেই টিকাদানের আওতায় আনতে পেরেছি, যদিও আগামী ৮ এপ্রিল থেকে কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা জানি ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয় এবং ১১ মার্চ ২০২০ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা দেয়। ১৮ মার্চ ২০২০ প্রথম একজন বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আজ ২০২১, ৭ এপ্রিল করোনা শনাক্তের ৩৯৬তম দিনে এসে পৌঁছেছি। আমরা জানি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাত উন্নতির জন্য নানাভাবে সংগ্রাম করছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য খাতের সকল সু্যোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই বৈষম্য আমাদের দূর করা দরকার। আমাদের স্বাস্থ্যের যেমন উন্নতি দরকার, শিক্ষারও তেমন উন্নতি দরকার। কারণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধার উন্নতি প্রয়োজন। নারী-পুরুষের বৈষম্যও দূর করা দরকার। যদিও এর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এরপরও বলবো এখনো আমরা পুরোপুরি উন্নতি করতে পারিনি। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে।

সরকার বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দিয়েছেন কিন্তু সেভাবে মানা হয়নি। প্রথম দিকে যে আতঙ্ক ছিল, উদ্বেগ ছিল সেটি থেকে মানুষ যখন বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে ঠিক তখনই করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে আবারে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ফেলে দিচ্ছে। আর ঠিক এমন একটা সময়ে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করতে যাচ্ছি।

আমরা যদি এই দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে চাই তাহলে এ বছরের যে প্রতিপাদ্য বিষয়- সুন্দর ও সুষ্ঠু পৃথিবী গড়তে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকারের সঙ্গে জনগণের একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসার যে মৌলিক চাহিদা তা সরকারকে পূরণ করতে হবে।

মা ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং সংক্রামক ও অসংক্রামক যে ব্যাধি সে বিষয়ে আরও ভাবতে হবে বলে আমি মনে করি। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যের যে অবকাঠামো সেটা ভালো রয়েছে, আমাদের দেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি সেটি বিশ্বের রোল মডেল। আমাদের শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি তার যথেষ্ট উন্নতি সাধন হয়েছে, এমনকি আমাদের দেশে যখন রোহিঙ্গা শরণার্থী আসে তাদের শিশুদের সব ধরনের টিকা দেয়া ছিল না বরং আমাদের দেশে আসার পর আমরা রোহিঙ্গা শিশুদের আমাদের দেশের শিশুদের ন্যায় টিকা প্রদান করেছি। এতে করে বাংলাদেশ টিকাদানে একটি রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের অন্যান্য যে চিকিৎসা সুবিধা যেমন হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা হয়তো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে পারিনি তবুও আমরা চেষ্টা করছি। এটি স্বাস্থ্য খাতের একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা জানি যে, স্বাস্থ্য রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর অনেক লোক হৃদরোগের কারণে মারা যাচ্ছে। যেহেতু আমাদের দেশে এখনো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, শ্বাসকষ্ট, কিডনী রোগ ও লিভারের রোগ এরকম আরো বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু কোনো হেলথ ইন্স্যুরেন্স নেই তাই অনেকেই নিজের টাকায় আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না। পাশাপাশি আমাদের দেশের ওষুধের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হলেও দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ গ্রহণ করতে অনেকেই নিজের টাকায় সক্ষম হচ্ছে না। এসব বিষয়গুলো নিয়ে সরকারকে আরো ভাবতে হবে।

২০২০ সালে করোনা আমাদের জীবনযাপন বদলে ফেলেছিল। এমনও হয়েছে যে, আপনজনকেও শেষ বিদায়টুকু জানাতে পারিনি। এটি আমাদের জন্য খুবই কষ্টের বিষয়। যাদের আপনজন না ফেরার দেশে চলে গেছেন তাদের সহানুভূতি দেয়ার মতো ভাষা আমাদের নেই। এখনো যদি আমরা এ বিষয়ে সতর্ক না হই তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। তাই আমাদের মৌলিক কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার মানতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং বর্তমান সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা ও লকডাউন মেনে চলতে হবে এবং সরকারকেও আরো বেশি সংখ্যক লোককে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, হল প্রভোস্ট, কার্ডিওলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়