ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঈদে বাড়ি ফেরা: জনগণের প্রত্যাশা আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে 

এন আই আহমেদ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ১২ জুলাই ২০২১  
ঈদে বাড়ি ফেরা: জনগণের প্রত্যাশা আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে 

করোনাসৃষ্ট মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব। বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে নতুন নতুন তথ্য, ভাঙছে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর রেকর্ড। পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ছে মানুষ। এক কথায় বৈশ্বিক সংকটকাল অতিক্রম করছি আমরা।

করোনা পরিস্থিতি আমাদের জীবনযাত্রার গতিপথ থমকে দিয়েছে। মৃত্যুর মিছিলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতি, সব মিলিয়ে শাঁখের করাত। শব্দের গাঁথুনিতে পরিস্থিতি প্রকাশ করা কঠিন। তবুও বাস্তবতা মেনে আমাদের পাড়ি দিতে হচ্ছে দুর্যোগকাল।

বিশ্বের অনেক দেশে শুরু হয়ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সরকার সর্বাত্মক লকডাউনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। একইসঙ্গে আমাদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসনের সচেতনামূলক কার্যক্রম এবং সরকারের অসহায় পরিবারের জন্য ত্রাণ তৎপরতা প্রশংসার দাবি রাখে।

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা সচল রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসা কুড়িয়েছে। চলমান সংকটে বিশ্ব অর্থনীতি যেখানে আত্মসমর্পণ করেছে ঠিক তার বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে। রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হয়েছে। এ কৃতিত্বের দাবিদার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বের দৃঢ়তা, দুরদর্শিতা এবং সময়োপযোগী  সিদ্ধান্তের ফলে সংকটকালেও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

করোনা সংক্রমণ কিন্তু বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্প্রতি লকডাউন দ্বিতীয় মেয়াদে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটি নিশ্চয় উদ্বেগের, যদিও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এর চেয়ে ভালো বিকল্পও আপাতত নেই। তবে তার চেয়ে বেশি উদ্বেগের জনসাধারণের অসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতা। আমাদের সংকটকালে নাগরিক সচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। জনগণের উদাসীনতা আমাদের সংকটকাল দীর্ঘায়িত করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছি।

এরই মধ্যে আসছে কোরবানি ঈদ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সরকারকে রাজধানী থেকে নাড়ির টানে নীড়ে ফেরার জনস্রোত মোকাবিলা করতে হবে। একইসঙ্গে জনসমাগম রুখতে নজরদারি প্রয়োজন রয়েছে। তবে গত ঈদে  ঘরমুখী জনস্রোত ঠেকাতে সরকারের সিদ্ধান্ত  হিতে বিপরীত হয়েছে। মানুষ তার ধর্মীয় অনুভূতি এবং শেকড়ের টানে যে কোনো উপায় অবলম্বন করে ঘরে ফিরেছে। সরকারের লকডাউন সিদ্ধান্ত সে সকল সাধারণ মানুষের বরং বাড়ি ফেরার ভোগান্তি বাড়িয়েছে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করেছে। একইসাথে মাইক্রো বাস বা জিপে গাদাগাদি করে চড়তে হয়েছে। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লঞ্চ বা ফেরি পারাপারের যে দৃশ্য চোখে পড়েছে তাতে ঘরমুখী জনস্রোত আমাদের শঙ্কিত করেছে।

পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে সাধারণ জনতার নাড়ির টানে ঘরে ফেরার প্রত্যয় রুখে দেওয়া কঠিন হবে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, এটি কোনো বিধি নিষেধের বেড়াজালে আটকে না দিয়ে বরং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে ফেরার বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা যেতে পারে।

গণপরিবহন  বন্ধ রেখে ব্যক্তিগত গাড়ি ও বিমান চলাচল চালু রাখলে করোনা প্রতিহত করার বিষয়টি যদি সরকারের নীতি নির্ধারকদের ভাবনায় থাকে তাহলে এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দ্বিমুখী আচরণ। বরং আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে দেশের আপামর জনতাকে গুরুত্ব দিয়ে। তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

শুধু খেটে খাওয়া মানুষগুলো সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানা সত্ত্বেও রাস্তায় বের হলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে এমন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এছাড়া আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা থাকে কোরবানির ঈদে মাংস প্রাপ্তি। ঈদে লকডাউনের কঠোরতা থাকলে কোরবানির হার যেমন কমবে, তেমনি  দরিদ্র জনগোষ্ঠী কোরবানির মাংস পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে সরকারের এ সকল বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ জনগণের প্রত্যাশাকে আমলে নিয়ে পরিস্থিতির আলোকে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। 

পরিশেষে বলতে চাই, সামাজে শ্রেণি বৈষম্য সৃষ্টি নয়, বরং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হোক সকল মানুষের জন্য। সাধারণ জনগণের কল্যাণে বাস্তবায়ন হোক সে সিদ্ধান্ত। আসন্ন ঈদে ঘরমুখী মানুষের বাড়িফেরা নিশ্চিতে ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ভাববে বলে বিশ্বাস করি। গণপরিবহন চালু করে সরকার স্বাথ্যবিধি নিশ্চিতে কঠোর ভূমিকা পালন করলে সাধারণ জনগণ স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরে ফিরে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস করি।

মুসলিম প্রধান দেশে সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে সংক্রমণ ঠেকাতে ভিন্ন করে ভাবতে হবে নীতি নির্ধারকদের। আমি বিশ্বাস করি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি পদক্ষেপ জনগণের জীবন-মানকে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম। ফলে জনগণের প্রাণের দাবিগুলো তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি নিশ্চয় এ বিষয়ে নতুন করে ভাববেন।

গণমানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় অনুভূতির সমন্বয়ের মাধ্যমে নতুন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ। আশাকরি, সাধারণ জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণ করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক: উপ-তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়