ঢাকা     রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২১ ১৪৩১

শেখ হাসিনার স্বদেশযাত্রা: কী ট্র্যাজিক কী মহাকাব্যিক

মিনার মনসুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ৩১ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৪:৪৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
শেখ হাসিনার স্বদেশযাত্রা: কী ট্র্যাজিক কী মহাকাব্যিক

পেছনে রক্তসমুদ্রের তুমুল গর্জন, মাথার ওপরে ঈগলের মতো ওত পেতে আছে কৃষ্ণগহ্বর। তদুপরি, তুমি জানো চিতার চোখের মতো একটি বুলেট তোমাকে অনুসরণ করছে সর্বত্র, সর্বক্ষণ। তার পরও দৃপ্ত পায়ে তুমি হেঁটে যাচ্ছো- এ কথা কে বিশ্বাস করবে আজ!১

আমি যত বার বেহুলার অবয়ব কল্পনা করার চেষ্টা করি, তত বারই ব্যতিক্রমহীনভাবে যে-অবয়বটি আমার মানসপটে ভেসে ওঠে সেটি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে এবং অনত মস্তক চাঁদ বণিকের চির ভক্ত ও অনুরাগী হিসেবে আমি যত্নের সঙ্গে দুটি ছবিকে মেলাতে চেষ্টা করি। অভাবনীয় বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করি যে কিংবদন্তীর বেহুলাকেও অবলীলায় ছাপিয়ে উঠছেন আমাদের কালের রক্তমাংসের এ-মানুষটি; যিনি ইতোমধ্যে জাতির ভরসার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছেন। প্রথম প্রথম আমি কিছুটা সংশয়ে পড়ে যেতাম। ভাবতাম, এটি হয়ত ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে তাঁর দীর্ঘ ও প্রখর উপস্থিতির পাশাপাশি সমকালের সুতীব্র আবেগ এবং আমাদের মজ্জাগত ভক্তিরসের প্ররোচনাজাত। এ কথা সত্য যে যদি নিবিষ্ট গবেষকের চোখে শতভাগ নির্মোহভাবেও আমরা শেখ হাসিনার জীবনটাকে দেখি, জাতির পিতার সর্বংসহা এ-কন্যাটিকে ঘিরে আমাদের অপ্রতিরোধ্য আবেগ এবং ভক্তির দুকূলপ্লাবী উচ্ছ্বাস থাকাটা কিছুমাত্র অস্বাভাবিক নয়।

কী ট্র্যাজিক কী মহাকাব্যিক তাঁর জীবন! অথচ জাতির পিতার আদুরে জ্যেষ্ঠকন্যা হিসেবে কতই না বর্ণাঢ্য, কতই না উপভোগ্য হতে পারতো তা। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তো কেবল প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতিই ছিলেন না, সব পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি ছিলেন বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এক নেতা। জাতির অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা। তা সত্ত্বেও সমগ্র জীবনব্যাপে যে-গুরুভার তাঁকে বইতে হয়েছে, যে রক্তসমুদ্র তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে- তার সঙ্গে তুলনা করলে মৃত লখিন্দরকে নিয়ে বেহুলার অনিশ্চিত যাত্রাকেও ম্রিয়মাণ মনে হয়।

আরো পড়ুন:


বিদগ্ধ পাঠক, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণকারী এ কালের বাস্তব বেহুলাকে লক্ষ্য করুন- যখন তিনি বেড়ে উঠেছেন তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে যাপন করছেন দুঃসহ ও অনিশ্চিত এক বন্দিজীবন। তদুপরি, সেই মানুষটির মাথার ওপরে সর্বক্ষণ ঝুলে আছে দৃশ্য-অদৃশ্য মৃত্যু পরোয়ানা। ঈদের ঝলমলে উপহার নয়, কারাফটকে সপরিবারে বাবাকে দেখতে যাওয়াই ছিল তাঁর জীবনে ঈদের সত্যিকারের আনন্দ। 

আর যখন সংসার পেতেছেন- ফুটফুটে দুই সন্তান জয় আর ‘পুতলি’র মা হিসেবে স্বপ্ন দেখছেন আনন্দময় এক জীবনের- ঠিক তখনই নেমে আসে পাকিস্তানি হানাদারদের সৃষ্ট মহাদুর্যোগ। বাবা বন্দি। কোথায় আছেন কেমন আছেন কেউ জানে না। চারদিকে গণহত্যার তাণ্ডব। পথে পথে রক্তস্রোত। নদীতে ভাসমান লাশ। দুইভাই- কামাল ও জামাল যোগ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। হাতের তালুতে জলবিন্দুর মতো কম্পমান জীবন। এবার তিনিও পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে বন্দি হলেন দুই শিশুসন্তানসহ। তার মর্মস্পর্শী বিবরণ তুলে ধরেছেন তিনি নিজেই:

গত কয়েক দিন থেকে সীমাহীন দুর্দশায় কাটছে আমাদের। মৃত্যুর মুখোমুখি যেন। যখন-তখন মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ওরা (পাকিস্তানি হানাদাররা) হাজির হতে পারে। সারাদিন, সারারাত এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্য দিয়ে কাটাতে হচ্ছে। আব্বা কি বেঁচে আছেন? কোথায় কি অবস্থায় আছেন কিছুই জানি না। কামাল, জামাল, নাসের কাকা, মনি ভাইসহ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের সবাই তো মুক্তিযুদ্ধে। কে আছে, কে নেই, কোনো খবর জানা নেই।... 

...আমরা যে বাড়িটাতে (ধানমন্ডি ১৮ নম্বর রোডের বাড়ি) বন্দি ছিলাম তার ছাদের উপর দুদিকে দুটো বাঙ্কার করে মেশিনগান বসান হয়েছে। এছাড়া আর একটা বাঙ্কার গ্যারেজের ছাদে করা হয়েছে। বাগানের মাটি কেটে ট্রেঞ্চ খোদা হয়েছে। দিনরাত গুলির আওয়াজ। যখন বিমান আক্রমণ হয় তখন সব সৈন্য ট্রেঞ্চে ঢুকে যায় এবং বাঙ্কারে গিয়ে দাঁড়ায়। কেবল আমরা যারা বন্দি আমাদের মৃত্যু প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে হয়। চার মাসের জয়কে নিয়ে হয়েছে অসুবিধা। বিছানায় শোয়ানো যায় না, গুলির আওয়াজে কেঁপে ওঠে।

দেশ স্বাধীন হলো। তিনি মুক্তি পেলেন। বিশ্ব জনমতের চাপে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রাণাধিক প্রিয় ‘আব্বা’ ফিরে এলেন তাঁরই স্বপ্নের বাংলাদেশে। হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সত্যিকারের স্বাধীনতা পেল বাংলাদেশ। মন আনন্দে নেচে উঠল। এবার বোধ হয় অবসান হবে ২৪ বছরের অনিশ্চিত দীর্ঘ দৌড়ের! অবসান হবে নিদ্রাহীন অজস্র্র অমারাত্রির! অবকাশ মিলবে বাবা-মা, ভাই-ভাবী ও ছোট দুই ভাইবোন রেহানা ও রাসেলকে নিয়ে দুদণ্ড আনন্দ যাপনের। নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে বুকে আগলে রাখা যাবে প্রাণের অধিক প্রিয় দুই সন্তানকে! 
কিন্তু ‘সকলই গরল ভেল’!


আবার ঝড় এলো। মহা ঝড়। এবার সমস্ত আকাশই যেন ভেঙে পড়ল তাঁর মাথার ওপরে। আচম্বিতে ‘রোজকিয়ামত’ নেমে এল কোমলহৃদয় পরিবার অন্তঃপ্রাণ এই সাদামাটা মানুষটির জীবনে। অথচ ব্যবধান মাত্র সাড়ে তিন বছরের। দেশ স্বাধীন হলো। বাবা প্রধানমন্ত্রী হলেন। রাষ্ট্রপতি হলেন। জগৎজোড়া তাঁর নাম। সর্বোপরি, বাংলাদেশ নামক দেশটির তিনিই জন্মদাতা। তিনিই স্থপতি। তাঁর নামেই হাসিমুখে প্রাণ দিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। বাঙালির হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে খোদিত তাঁর নাম।  

এমন মানুষের কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনার তো মহানন্দে থাকার কথা। হাত বাড়ালে ধরাতলে নেমে আসার কথা আকাশের চাঁদও! কিন্তু তাঁর চাওয়া তো খুবই সামান্য। এত কষ্ট এত ত্যাগ স্বীকারের পর এবার অন্তত দুদণ্ড শান্তি তো চাইতেই পারেন। সারাজীবনের আকণ্ঠ তৃষ্ণার পর পান করার কথা ভাবতে পারেন পিতৃস্নেহ ও সান্নিধ্যের অমিয় সুধা। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বাবা অধরা। দম ফেলবারও ফুরসত নেই তাঁর। থাকবেই-বা কীভাবে?  

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে কোটি কোটি মানুষ। একদিকে স্বজনহারানো মানুষের কান্নায় ভারী হয়ে বাতাস, অন্যদিকে পেটে ভাত নেই বেশিরভাগ মানুষের। রাষ্ট্রীয় কোষাগারও শূন্য। শূন্য ফসলের মাঠ। নয়মাসের যুদ্ধে বিরাণ হয়ে গেছে সব। সড়ক অবকাঠামো বিধ্বস্ত। দেশের দুটি সমুদ্র বন্দরই ব্যবহারের অনুপযোগী। প্রশাসন বলতে কিছু নেই। নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মতো দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল। অস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা কিসিমের মতলববাজ কিছু মানুষ। দেশের ভেতরে-বাইরে চলছে স্বাধীনতাবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র। 

বলতে গেলে একেবারে শূন্য হাতেই উজান ঠেলে বঙ্গবন্ধুকে শুরু করতে হলো দেশ গড়ার কাজ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে তিনি দুটি খুবই মূল্যবান কথা বলেছিলেন। প্রথমটি হলো ‘স্বাধীনতা’। দ্বিতীয়টি হলো ‘মুক্তি’।  স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এবার তাঁর বহু আরাধ্য মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছেন। ডাক দিয়েছেন দ্বিতীয় বিপ্লবের। সে লক্ষ্যে শুরু হয়ে গেছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। 

এদিকে পুরো পরিবার অপেক্ষায় থাকেন কখন তিনি ঘরে ফিরবেন। কখন দুদণ্ড কাছে পাওয়া যাবে তাঁকে। ঘরে তিনি ঠিকই ফিরতেন। কিন্তু আব্বাকে কাছে পাওয়ার ভাগ্য সন্তানদের খুব কমই হতো। কারণ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটিকে ঘিরে জনতার উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকতো সর্বক্ষণ। ভেতরে-বাইরে কেবল মানুষ আর মানুষ। এই তো, এভাবেই কেটে গেছে সাড়ে তিনটি বছর!

আব্বাকে তো আমরা পেতামই না। ...তিনি এত ব্যস্ত থাকতেন যে গভীর রাতে ফিরতেন। আমরা তখন ঘুমিয়ে পড়তাম। সকালে ওঠে আমি আর কামাল স্কুলে চলে যেতাম। মাঝে মধ্যে যখন দুপুরে খেতে আসতেন, তখন আব্বার দেখা পেতাম। ঐ সময়টুকুই আমাদের কাছে ভীষণ মূল্যবান ছিল। ...(কারাগারের) বাইরে থাকলে মানুষের ভিড়ে আমরা খুব কমই আব্বাকে কাছে পেতাম। আর কারাগারে যখন বন্দি থাকতেন তখন ১৫ দিনে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য দেখা পেতাম। এইতো ছিল আমাদের জীবন। 

তারপর এল বাঙালির ইতিহাসের অভিশপ্ত সেই দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেদিন এ বাংলার মাটিতে যা ঘটলো তা শেখ হাসিনা কেন, এ বাংলায় কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। পাকিস্তানি হানাদারদের যে দুঃসাহস হয়নি, এ-বঙ্গে জন্মগ্রহণকারী কিছু কুলাঙ্গার তা-ই করে ফেললো চরম কাপুরুষোচিত পন্থায়! রাতের অন্ধকারে সামরিক উর্দি পরিহিত সশস্ত্র ঘাতকরা সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সপরিবারে হত্যা করলো বিশিষ্ট দুই রাজনীতিক বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনিকে।

বর্বরতা থেকে রক্ষা পায়নি ১০ বছরের শিশু রাসেলও। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন দুই বোন- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া তখন জার্মানিতে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণারত ছিলেন। পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী দুই শিশুপুত্র ও ছোটবোন রেহানাকে নিয়ে শেখ হাসিনা জার্মানির উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন মাত্র ১৫ দিন আগে। 

৩০ জুলাই আমি ঢাকা ছাড়লাম, আর ৩১ জুলাই আমি জার্মানি পৌঁছুলাম। ...এর মাত্র পনেরোটা দিনের মধ্যে যে নারকীয় ঘটনা ঘটে গেল, আমি তার জন্য কখনোই প্রস্তুত ছিলাম না। এত বড় রোজকিয়ামত আমি কোনো দুঃস্বপ্নেও দেখিনি। এ আমি ভাবিনি।


মৃত স্বামী লখিন্দরকে নিয়ে বেহুলার দুর্গম যাত্রার কাহিনি আমরা সবাই জানি। কীভাবে কলার ভেলায় চেপে একাকী তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন বহু শ্বাপদসংকুল নদ-নদী-জনপদ, কীভাবে স্বর্গের দেবতাদের মন জয় করে পুনরায় জীবন দান করেছিলেন স্বামী লখিন্দরকে এবং বিজয়ীর বেশে ফিরে এসেছিলেন নিজ গৃহে-  তাও এ বঙ্গদেশে কারো অজানা নয়। কিন্তু ‘নিঃস্ব-রিক্ত’ শেখ হাসিনার নিঃসঙ্গ স্বদেশযাত্রার খবর ক’জন জানেন? ক’জন খোঁজ রাখেন তাঁর হৃদয়ের গভীর নিভৃতে নিয়ত গর্জমান পৃথিবীর বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি ট্যামু ম্যাসিফের খবর? পিতৃ-পরিজন হারা এই নারীকে যে দুটি শিশুসন্তান আর একমাত্র জীবিত ছোটবোনটিকে নিয়ে বেহুলার চেয়েও শতগুণ কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে নিজ দেশে ফিরতে হয়েছে এবং এখনো পাড়ি দিতে হচ্ছে ঝঞ্ঝাতাড়িত দৃশ্য-অদৃশ্য অসংখ্য মহাসমুদ্র তা কি যথার্থই আমরা জানি? 

এ তো নিছক তাঁর একার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মাত্র নয়- পঁচাত্তরের রক্তবন্যায় তলিয়ে যাওয়া হারানো স্বদেশকেও পুনরুদ্ধার করতে হয়েছে তাঁর; স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে নির্মমভাবে নিহত নির্বাসিত জাতির পিতাকে এবং সর্বোপরি জাতির পিতার যে সোনার বাংলার স্বপ্নকে অবজ্ঞাভরে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল সুপরিকল্পিতভাবে- সেই স্বপ্নকে পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি বাস্তব রূপও দিতে হয়েছে (এবং হচ্ছে) পরিপূর্ণ প্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে। 

জাতিকে মুক্ত করতে হয়েছে পিতৃহত্যার কলঙ্ক থেকে। জাতির আভূমি নতজানু ধূলিলুণ্ঠিত মস্তক আবার উঁচু করে ধরতে হয়েছে বিশ্বসভায়। বেহুলাকে কি বইতে হয়েছিল এত এত গুরুভার? বরং একথা তো অনস্বীকার্য যে তিনি তাঁর দ্রোহী শ্বশুর চাঁদ বণিককে দেবী মনসার কাছে নতজানু হতে রাজি করানোর অপমানজনক শর্তেই নবজীবন দিতে সক্ষম হয়েছিলেন স্বামী লখিন্দরকে। পাশাপাশি এও লক্ষণীয় যে বেহুলা কলার ভেলা ভাসিয়েছিলেন ক্ষীণতনু গাঙুরের জলে, আর শেখ হাসিনাকে পাড়ি দিতে হয়েছিল বঙ্গোপসাগরের চেয়ে বড় এক রক্তসমুদ্র। তাঁর সেই স্বদেশযাত্রা এখনো থামেনি। থামেনি রক্তসমুদ্রের গর্জন। সহৃদয় পাঠক কি শুনতে পাচ্ছেন সেই গর্জন? (চলবে)

 

তথ্যনির্দেশ:
১. মিনার মনসুর, “এ কথা কে বিশ্বাস করবে আজ”, ‘নির্বাচিত কবিতা’ (পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি, ২০২১), পৃষ্ঠা-১৫৩
২. শেখ হাসিনা, “স্মৃতির দখিন দুয়ার”, ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ (আগামী প্রকাশনী, ২০২০), পৃষ্ঠা ৪৮-৪৯)
৩. পঁচাত্তরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা শব্দটি ব্যবহার করেছেন। (দ্রষ্টব্য: শেখ হাসিনা, “ড. আবদুল মতিন চৌধুরী: আমার স্মৃতিতে ভাস্বর যে নাম”, ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৮১)
৪.  ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, (দ্রষ্টব্য: ?????)
৫. শেখ হাসিনা, “পত্রিকা পড়ার গল্প”, ‘মুজিব বাংলার বাংলা মুজিবের’ (জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, ২০২১), পৃষ্ঠা ৫৩-৫৪।
৬. শেখ হাসিনা, “ড. আবদুল মতিন চৌধুরী: আমার স্মৃতিতে ভাস্বর যে নাম”, ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৮১।

 

ঢাকা/তারা


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়