ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ব্রাজিলে সহিংসতা: অন্যদের জন্য সতর্ক সংকেত

অলোক আচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৯, ১২ জানুয়ারি ২০২৩  
ব্রাজিলে সহিংসতা: অন্যদের জন্য সতর্ক সংকেত

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল। তবে বিশ্বে ব্রাজিলের পরিচিতি মূলত দুই কারণে। প্রথমত ফুটবল এবং দ্বিতীয়ত পৃথিবীর বৃহত্তর সুবিশাল রহস্যঘেরা আমাজান বন। এর পাশাপাশি বিশ্বে ব্রাজিলের একটি আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক উভয়ই এর কারণ।

দেশটি গুরুত্বপূর্ণ জোট ব্রিকস-এর সদস্য। সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা ব্রাজিল এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশ্বে আলোচনার বিষয়। দেশটিতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। ক্যাপিটাল হিল থেকে ব্রাজিল। নির্বাচনের পর কট্টর সমর্থকদের সহিংসতায় ব্রাজিল নিজেও অবাক কম হয়নি।

গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী, ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভবন, কংগ্রেস ও সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালিয়েছে সদ্য সাবেক হওয়া ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর সমর্থকরা। যদিও তিনি এ দাঙ্গার সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এটা ঘটেছে এবং আঙুল উঠেছে তার সমর্থকদের দিকেই। এ সময় অনেকের পরনে ছিল ব্রাজিলের হলুদ গেঞ্জি। প্রায় দেড় হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে। নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দেশটির ফেডারেল বাহিনীকে রাজধানীর নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছেন। 

নির্বাচন পরবর্তী এ ধরনের সহিংসতা, হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গত অক্টোবরে নির্বাচনে বামপন্থি নেতা লুলা দ্যা সিলভার কাছে হেরে যান বলসোনারো। গত সপ্তাহে লুলা দ্যা সিলভা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বামপন্থী এ রাজনীতিক এর আগেও ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালীন ঘুষ নেবার অভিযোগে জেল যেতে হয়েছিল তাকে। সবচেয়ে বড় কথা একসময় তার নির্বাচন করাও নিষিদ্ধ ছিল। তারপর মামলা আদালতে খারিজ হয়ে যায়। সেই লুলা দ্যা সিলভা এখন ক্ষমতায়। সেদিক থেকে এটা কিছুটা নাটকীয় বলা যায়। 

তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে আসলে কিছু নেই। লুলা দ্যা সিলভা খুব অল্প ব্যবধানে বলসোনারোকে পরাজিত করেন। মাত্র দুই শতাংশেরও কম ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। দুই প্রার্থীর ভেতর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। যদিও নির্বাচনের আগে তিনি ইভিএম ভোটিং পদ্ধতি জালিয়াতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিযোগ তোলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার অভিযোগ প্রত্যাখান করে। এখন জেতার পর এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যাওয়ার কথাও হয়তো নয়। কিন্তু তার এই জয় মেনে নিতে পারেনি বলসোনোরোর সমর্থকরা। 

নির্বাচনে বামপন্থী বনাম ডানপন্থীর লড়াই হয়েছে। যেখানে ডানপন্থীকে হারিয়ে বামপন্থী লুলা বিজয়ী হয়েছেন। এই হামলাকে তিনি ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন- গোরা ফ্যাসিবাদীরা এই হামলা চালিয়েছে। অভিযোগ তুলেছেন বলসোনারোর বিরুদ্ধে। এই হামলা যেন ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বচানে ক্যাপিটাল হিলের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর আলোচনায় উঠে আসে ক্যাপিট্যাল হিল। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটাল হিলে এভাবেই তাণ্ডব চালানো হয়। এক বছর পর ব্রাজিলে এই ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি হলো। ক্যাপিটাল হিলের সহিংসতা এবং ব্রাজিলের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার কারণও এক। অর্থাৎ নির্বাচনী ফল মেনে না নেওয়া।

গণতন্ত্রের গতিশীলতায় নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। সেখানে পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তা না করে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। এটি স্পষ্টত গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এই ঘটনার সাথে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ভবনে সাধারণ নাগরিকদের উল্লাসের চিত্রের মিল না থাকলেও ছবিটা একই। কিন্তু প্রশ্ন হলো- বারবার কেন নাগরিকরা নিরপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে, যেখানে সাধারণ নাগরিকদের প্রবেশ করাটাই প্রায় দুঃসাধ্য, সেখানে এমন হামলা চালাচ্ছে? তারা কেন আইন দ্রুত সময়ের মধ্যে হাতে তুলে নিচ্ছে। 

গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে  নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর সাধারণ ঘটনা এবং গণতান্ত্রিক ধারা বিকাশের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। কিন্তু ক্যাপিটাল হিল বা ব্রাজিলে যা ঘটেছে তা অনেক দেশের জন্যই দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট  
 

 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়