ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভালোবাসার গল্প || মনি হায়দার

মনি হায়দার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভালোবাসার গল্প || মনি হায়দার

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

আঙুল চুইয়ে পড়ছে রক্ত

রেজোয়ানের মুখ উদ্ভ্রান্ত, চোখে বিভ্রান্তি। মানসিকভাবে বিপর্যস্তও। ওর একটা গোপন ঘরের খুব দরকার। সেই ঘরে জানালা দরজা কপাট না থাকুক, তাতেও চলবে। মাথার উপরে একটা সিলিং ফ্যান নাই বা থাকল, দখিনের বারান্দা আর জানালার শখ রেজোয়ানের, সেই দখিনের দরজা জানালারও দরকার নেই। বরং দরজা জানালা বন্ধ রাখাই ভালো। গোপনীয়তা  বজায় থাকবে।
মগ্ন হয়ে ছবি আঁকার সময় রেজোয়ানের চায়ের তেষ্টা পায়। কিন্তু কে দেবে চা? গভীর রাতে নিজেই চা বানাতে যায়। কিন্তু নিজের তৈরি চা নিজেরই ভালো লাগে না। চা ফেলে দিয়ে স্টুডিওতে ঢোকে। তাকায় ক্যানভাসের বিস্তৃত রঙের দিকে। মনটা পুড়ে যাচ্ছে, একটা সিগারেট হলে ভালো হতো। টেবিলের ড্রয়ার খোলে; সিগারেটের একটা প্যাকেট আছে। মনটা  নাচে, কিন্তু প্যাকেটটা খুলে দেখে, একটাও সিগারেট নেই। বিষণ্ণতায় মনটা দুপুর রাতে উদাস হয়ে যায়।  দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়, মাথা নাড়ে। মনে হয় দরজার ওপাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। চঞ্চল রেজোয়ান এগিয়ে যায়, দরজা খোলে। এক পলকা বাতাস উড়ে যায়। না, সুজানা আসেনি। অথচ রেজোয়ানের নাক সুজানার শরীরের গোপন গভীর গন্ধ পেয়েছে। তাকায় ঘড়ির দিকে। রাত দেড়টা, সুজানার আসার সম্ভাবনা নেই। ও এখন নিজের বাসায়, নিজের রুমে পরম আরামে ঘুমুচ্ছে।

রেজোয়ান বিবাহিত কিন্তু রোজীকে তার মনে হয় অনেক দূরের যাত্রী। রোজী  সংসারের একজন মাত্র, শরীর বা মনের কেউ নয়। অন্যদিকে রেজোয়ানের শিল্পের তৃষ্ণার সঙ্গে যোগ হয় শরীরের তৃষ্ণা। অথচ রোজী নির্বিকার। রোজীর শরীরে কী বাণ ডাকে না? নারী এতো শীতল হয়?  রেজোয়ান শিল্পী। রঙে ক্যানভাসে নারীর নানা মাত্রিক ছবি আঁকতে আঁকতে ক্যানভাসের ছবি জীবন্ত হয়ে ওঠে। ওর সঙ্গে ছবির জীবন্ত চরিত্র কথা বলে। আদর করে, হাসে, নাচে কত্থক, মনিপুরী, ভারতনাট্যম- তা থা তা থা থৈ থৈ...। দুহাতে জড়িয়ে ধরে, আকড়ে ধরে রেজোয়ান। কিন্তু সব শূন্য। প্রবল তৃষ্ণায় রাতে রোজীকে আকড়ে ধরলে শুনতে পায় কর্কশ কণ্ঠ, কী জ্বালা! শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারবো না? যাও তো এখান থেকে।
রোজীর চোখে মুখে তীব্র অবহেলা। শিল্পী রেজোয়ানের তৃষ্ণা বুকের অচলায়তন ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে আকাশে, বাতাসে, নদীর তরঙ্গে, ঘোড় দৌড়ের বাজারে। রোজীর নির্মম কুঠারের আঘাতে নিজেকে একটা কুকুর মনে হয় রেজোয়ানের। মনে হয় হিজ মার্স্টাস ভয়েজের সেই  নিঃশব্দ নিপাট কুকুরটা নিজেই নিজের বিছনায় বসে বসে লেহন করছে পরাজয়।   

রেজোয়ান সিদ্দিকীর বিকল্প তৃষ্ণায় রয়েছে এক নরম কোমল নারীর মখমলে দুর্বা শরীর। তার  কাছে নারীর শরীর অফুরন্ত এক রহস্যময় জগৎ মনে হয়। ছবিতে রঙে নারীকে আবিষ্কার করে সে নিত্য নতুন অবয়বে, সহস্র আখ্যানে। রেজোয়ান জানে,  জগতে সকল শিল্প সাধনার মূলে নারী। সুজানাকে দেখার পর ওর অতৃপ্ত তৃষ্ণায় যোগ হয়েছে নতুন চঞ্চলতা। কেবল ওকে ভাবনায় এনে ভাবতে ভীষণ ভালো লাগে। মনে মনে বাসনায় ছিঁড়েও খায় সুজানাকে। সুজানা এক বাটি জল, চুমুকে চুমুকে পান করে ও। এলোমেলো হাঁটে রেজোয়ান। আশেপাশের সব জিনিসের দিকে তাকাতে তাকাতে হাঁটে। হাঁটার সময় দেখে বাড়ির জানালায় নানা রঙের বাহারী পর্দা ঝোলে। লাল, নীল, গোলাপি, সবুজ, আকাশি নীল রঙের পর্দা। এতোসব রঙিন পর্দার আড়ালে কারা বাস করে? এইসব ঘর বা বাড়ির কারও পেয়িং গেস্ট বা একটা রুমের ভাড়া দেয়ার দরকার হয় না?

হাঁটতে হাঁটতে রেজোয়ান ভাবে, সরকার এই সব অসহায় প্রেমিক প্রেমিকদের একটা করে ঘর করে দিতে পারে। সরকারী সুন্দর ব্যবস্থা থাকলে রাস্তাঘাটে ছেলেমেয়েদের এতো বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না। প্রেম সংক্রামক হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পরতে পারতো না।
প্রেম সংক্রামক? অবশ্যই। কিন্তু ওর জন্য প্রেম সংক্রামক নয়, বড় প্রয়োজন।  রেজোয়ানের মতো একজন  ক্রিয়েটিভ মানুষের নারীসঙ্গ না হলে চলে না। জীবন থেমে যায়। রং তুলিতে রঙের ঝড় ওঠে না। কল্পনার সঙ্গে রং সন্ধি না করলে তুলি থেমে যায়। নারীর শরীর বিধাতার তৈরি আশ্চর্য বাগান। যে বাগানের ফুলের সৌরভ কখনো ফুরায় না। কিন্তু রেজোয়ান কোথায় পাবে একজন নিঃস্বার্থ প্রেমিকা? যে তাকে কোনো কিছুর আশা না করেই কেবল শিল্পবোধে আকড়ে ধরবে? কে আছে এমন? প্রেম ভালোবাসা কোথায় পাবে? কার কাছে যাবে?
একজন পুরুষের তো চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর পরও নারীর প্রয়োজন হতে পারে। কিংবা কেউ বিপত্নীক হলে? যদি বউয়ের সাথে ডিভোর্স হয়ে যায়? এমন মানুষ বাঁচে কী করে? এই যে এখন রেজোয়ান, ওর স্ত্রী আছে।  রোজী দেখতেও খারাপ না। চেষ্টা করলে নায়িকা হতে পারতো। ও জানে না, ওর চোখ দুটো কতো গভীর সুন্দর! কিন্তু রোজীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক এখন বছরেও একবার হয় না। রোজী একেবারে নিস্পৃহ। পাথরে তৈরি এক অবাক নারী। নারীর ভেতরের কামনা কুসুম মাত্র ত্রিশ পয়ত্রিশ বছরে মরে যায়, রেজোয়ান বিশ্বাস করতে  পারতো না, যদি নিজের স্ত্রীকে না দেখতো!

সুজানাকে যেদিন দেখেছে সেদিনই  প্রেমে পড়েছে রেজোয়ান। ওর ব্যক্তিত্বের আলাদা গড়ন আছে। চট করে তার ভালো লাগা বা প্রেমের কথা বলা যায় না। আর যে পুরুষ বিবাহিত, কোন বিবেচনায় সেই পুরুষ নিজের ভালোলাগা বলবে সুজানাকে? রেজোয়ান সিদ্ধান্ত নেয়, সুজানার সঙ্গে প্রথম টেলিফোনে যোগাযোগ করবে। শুরুতে হয়তো ও পাত্তা দেবে না, তবু ফোনে যোগাযোগ করে রেজোয়ান। সুজনাকে যতটা কঠিন ভেবেছিল ততটা কঠিন নয়। প্রথম দিনেই ওর সঙ্গে  আন্তরিকভাবে এবং আবেগ দিয়েই কথা বলে সুজানা।
সুজানাও নিজেকে একটু একটু  করে মেলে ধরে। কথা না হয়ে উপায় থাকে না।  কাজের জন্যই প্রচুর মানুষের সঙ্গে  কথা বলতে হয় সুজানার। সে গুলশান এভিনিউতে একটা দোকান চালায়। ছবি বেচা কেনার দোকান- দ্য কার্নিভাল।  দেশ বিদেশের ছবির চমৎকার কালেকশন আছে সুজানার। ওর দোকানের ক্রেতা বিদেশীরা- দূতাবাসের লোজকন। দ্য কার্নিভালে বসবার বা আড্ডা দেয়ার সুন্দর স্পেস আছে। কতো লোক আসে, কতো লোক যায়- এসবের বাইরে তাকে নিয়ে ভাবে এরকম লোকের সংখ্যা কম। রেজোয়ান ফোন করলে সুজানা প্রাণখুলে কথা বলে। আর রেজোয়ান প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ফোন করেই। টুকটাক কথা বলতে বলতে এক সময়ে সুজানা দেখছে, সে  অপেক্ষা করে রেজোয়ানের ফোনের। ওর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে। আর সারা দিন দুনিয়ার খবর রাখে মানুষটা।  ফোনে কথার নেশায় পেয়ে বসে সুজানাকে। রেজোয়ানের ফোন করতে দেরি হলে সে নিজেই ফোন করে ল্যান্ডফোনে। রাজ্যের কথা বলে দুজনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফোনে কথা বলতে বলতে রেজোয়ান খুব কাছাকাছি পৌঁছে যায় সুজানার। এখন কেবল কথা নয়, দুজনে শরীরে শরীর রাখতে চায়। কিন্তু কোথায় কেমন করে মিলবে তারা? চাই একটা নিরাপদ ঘর। অনেক চেষ্টার পর রেজোয়ান একটা ঘর খুঁজে পায়। এক আর্টিস্ট বন্ধুর বাড়ি।

সুজানাকে দেখা করার আমন্ত্রণ জানায় রেজোয়ান। সুজানা আসে। ঘরে ঢুকে অবাক হয় সে, কোনটা শোবার ঘর আর কোনটা থাকার ঘর বোঝা মুশকিল। ড্রয়িংরুমটা যা গোছালো বেডরুম ততোধিকই অগোছালো। সুজানাকে সেই অগোছালো ঘরের মধ্যে জড়িয়ে ধরে রোজোয়ান। তার শরীরের বুনো গন্ধ এসে লাগে সুজানার নাকে। রেজোয়ানের স্পর্শ থেকে সরে আসে সে।
নানা কথায় ভুলিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা জানায় রেজোয়ানকে, আমার প্রিয় ফুল দোলনচাঁপা। ফ্লাওয়ারভাসে সাজালে ঘর সুগন্ধিতে ভরে যায়। বর্ষায় আমি রজনীগন্ধার স্টিক সাজাতে পছন্দ করি। খোপায় লাল আর সাদা গোলাপ লাগাতে আমার খুবই ভালো লাগে। ডিওডরেন্ট স্প্রে করা ছাড়া আমি ঘরের বাইরে বের হই না। আর অবশ্যই ব্রান্ডের পারফিউম চাই আমি। কিন্তু রেজোয়ানের মাথায় এসব কিছু ঢোকে না। সে বিবাহিত পুরুষ । নারীর শরীরই এখন যার একমাত্র আরাদ্ধ। নারী তার চাই। চল্লিশ বছরের টকটকে যৌবন খুব কষ্ট দিচ্ছে তাকে। বিয়ের প্রথম বছর বউ তার চাহিদা পূরণ করেছিল। কিন্তু একটা বাচ্চা হওয়ার পরই রোজীর শরীর মিইয়ে আসে। দুটো বাচ্চা হওয়ার পর রোজী একেবারে সাদা পাতকা তুলে ধরে, আমি আর পারবো না।  
কেনো?
সকালে আমাকে ঘুম থেকে উঠতে হয়। তুমি থাকো বারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে। আমাকে উঠে বাচ্চাদের নাস্তা গোছাতে হয়। স্কুলে পাঠাতে হয়।
অভাবের চাকাটাও জেঁকে বসেছে। বাচ্চা দুটোর স্কুলের খরচ, বাচ্চাদের টিফিনের পয়সা, বাড়িভাড়া, যাতায়াত খরচ সব মিলিয়ে ত্রাহি অবস্থা। বাড়তি হচ্ছে রোজীর খিটিমিটি। সেই খিটিমিটি বাড়ছেই। রোজী ভাবছে, তাকে বিরাট একটা ফাঁকি দিয়েছে রেজোয়ান। বিয়ের প্রথম দিকে স্বামীকে ঘিরে যে স্বপ্ন দেখেছিল,  সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। নইলে ইনকাম ট্যাক্সের চাকরি করে সংসার ও স্বাভাবিক চলার মতো ইনকাম করতে পারে না কেনো? রোজীর ফোঁস ফোঁস শব্দ পাড়াপড়শি শুধু নয়, রেজোয়ানের বন্ধুরাও এখন জেনে গেছে।

জোর করে রোজীর সান্নিধ্যে এলে রেজোয়ান নপুংসক হয়ে যায়। আশ্চর্য! সারারাত এক দানবীয় যন্ত্রণায় তখন সে বিছানায় ছটফট করতে থাকে। নির্ঘুম রাতে বাথরুমে যায় ঘন ঘন।  বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশ দেখে। তারা গোনে। কখনও মাঝ রাতে, কখনও সারারাত। রেজোয়ান নিজের জীবনের বিপর্যয় নিয়ে ভাবে। কেনো এমন কষ্টকর জীবন কাটাচ্ছে- এই প্রশ্ন বারবার বিদ্ধ করে। যখন সে ক্যানভাসে ছবি আঁকে সেই মুহূর্তগুলোই মধুর লাগে। মনে হয় ছবি, ক্যানভাস, তুলি আর বিচিত্র রং ওর কথা বুঝতে পারে। অফিস কলিগেরাও বুঝতে পারে না। ইনকাম ট্যাক্স অফিসে প্রচুর উপরি আছে কিন্তু কোনোভাবেই রেজোয়ান ওই পথে যেতে পারে না। প্রতি মুহূর্তে ওর শিল্পীসত্ত্বা নাড়া দেয়, ছিঃ, রেজোয়ান তুমি না শিল্পী! তুমি অন্যের মতো অতো সাধারণ হতে পারো না। তুমি অসাধারণ। তোমার আঁকা ছবি ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে। তোমাকে মানুষ মান্য করে...।

অনেক রাতে রেজোয়ান কম্পিউটারে ব্লু ফিল্ম দেখে, সবাই ঘুমিয়ে গেলে। লো ভলিউমে এসব ছবি দেখে পুলকিত হয়। শরীরের স্খলন এমনি এমনিই হয়ে গেলে যাতনা কমে এলেও মনের ভেতর প্রশ্ন জাগে- কেনো আমি মরি জল পিপাসায় হাতের কাছে থাকতে নদী মেঘনা...। রেজোয়ান কামনার অসুখ নিয়ে কোথায় যাবে? মনে হয় কোনো দুর্বল পুরুষ হলেই ভালো হতো। শরীরের এই দানবীয় ক্ষুধা মেটানোর দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যেতো। জীবনে তীব্র খরা শুরু হয়। খরার দহনে ছটফট করে।
সুজানা নীরবে রেজোয়ানের সুখ ও সর্বনাশের বচন শোনে কিন্তু কোনো মন্তব্য করে না। চাকরিটা রেজোয়ানের জীবিকা। ছবি আঁকাটা জীবনে বেঁচে থাকার অবলম্বন। ওর ফ্যামিলিতে সবাই ছবি এঁকেই নাম করেছে। চাকরিটা করতে হয় বলে করা। নইলে জীবনটা স্থবির হয়ে পড়তো। হোটেলে বা মেসে কাটাতে হতো। রোজীর সাথে সম্পর্ক তো স্থির নয়। ভালোবেসেই বিয়ে হয়েছিল, কত কথা, কত ভাবের আবেদন নিবেদন। শরীর বিনিময়। তখন রোজীকে যথেষ্টই আবেদনময়ী মনে হতো। প্রেম তখন ছিলো, শরীরের টানও তীব্র। দুই টানে সম্পর্কটা বিয়ের পিঁড়িতে গড়িয়ে যায়। এখন এক বিছানায় থেকেও কেউ কাউকে চেনে না। হা জীবন। হা যৌবন। হে নিবিড় অন্ধকার, হে...। গাঢ় হয়ে আসে দুপুরের মেঘ। কালচে হয়ে আসে রাতের  আকাশ।

বন্ধু আবেদিন মজার মানুষ। রেজোয়ানের প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। এই শহরে কে কার জন্য এতোটুকু করে? রেজোয়ান কাজের ছেলেকে পাঁচশ টাকা দিয়েছে রুমটা বসবার উপযোগী করার জন্য। আবেদিন নিয়েছে এক বোতল মদ। কাজের ছেলেটা মোটামুটি রুমটা পরিষ্কার করে রেখেছে। রেজোয়ান চেয়েছিল সুজানাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমুবে। শরীরের উষ্ণতা নেবে। নারী শরীরের উষ্ণতার ভেতর নিজেকে জ্বালিয়ে নেবে। কিন্তু সুজানা কৌশলে নিস্পৃহ থেকে এড়িয়ে যায়। হতাশ রেজোয়ান সিদ্দিকী ফ্রুটিকার বোতল খোলে। এক গ্লাস নিজের জন্য আর এক গ্লাস সুজানার জন্য।
না, আমি খাবো না।
চুমুক দিতে দিতে প্রশ্ন করে রেজোয়ান, কেনো খাবে না?
মনে মনে হাসে সুজানা- সস্তা ড্রিংস এনেছে রেজোয়ান। রেজোয়ানকে এসব বলা যায় না। টেলিফোনে যত স্মার্ট মনে হয় বাস্তব আচরণে চালচলনে তত স্মার্ট নয়। একজন নারীর প্রথম সান্নিধ্যে কাটার জন্য যে পরিবেশ দরকার তার টেন পারসেন্টও যোগাড় করতে পারেনি রেজোয়ান। এমন একজন লোকের সঙ্গে শরীরের লেনদেন করা সুজানার পক্ষে সম্ভব নয়। রেজোয়ান সিদ্দিকী এক রাশ হতাশা নিয়ে ঘরে ফেরে। আবার সেই ঘর। সেই পাথরের বিছনা।  বুকের গভীর বোধন থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়, অনেক সাধনায় তৈরি আজকের দিনটা কেনো ব্যর্থ হলো বুঝতে পারে না। মাখার ভেতরের করোটি কাজ করে না। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয় না রেজোয়ান। আবার সুজানাক পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠে।

সুজানা বাসায় ফিরে মমতা অনুভব করে রেজোয়ানের জন্য। মানুষটার মধ্যে বুনো একটা শক্তি আছে। পুরুষের এই বুনো স্বভাব পছন্দ করে সে। আর আছে রং নিয়ে খেলার অদ্ভুত ক্ষমতা। সঙ্গে আছে গলার টোন। টোনটা যেমন সুরেলা তেমন স্ট্রং। এ সব কারণে রেজোয়ানকে অস্বীকার করতে পারে না সুজানা। ক্লাসিক পর্যায়ে আনতে চায়  রেজোয়ানকে। বডি স্প্রে, ডিউডরেন্ট, আফটার শেভ ক্রিম কেনে। বোঝাতে হবে, তার সাথে দেখা করার দিন বাসে যেন না আসে।
সুজানা ডিউডরেন্ট, আফটার শেভ লোশন গিফট করলে রেজোয়ান সিদ্দিকী ছুঁড়ে ফেলে। যাবার আগে বলে যায়, পার্থিব জিনিসের মূল্য আমার কাছে নেই। আমি চাই অপার্থিব কিছু...। হাসে সুজানা, সত্যি চমৎকার এক বুনো মহিষ। অপার্থিব কিছু মানে, ভালোবাসা। ভালোবাসার মর্ম সুজানা জানে, কিন্তু রেজোয়ান যাকে অপর্থিব ভাবে, তার মধ্যেই জাদুর ঝাঁপি খোলার মই হঠাৎ দেহ চলে আসে। দেহ দেখানোর জন্য নয় ভালোবাসার জন্য নয়, রীতিমত ভোগের জন্য।
ছবি কেনা বেচা করতে করতে সুজানাও ছবির আবেগ, বিন্যাস, সুখ ও সর্বনাশ বেশ ভালো বোঝে। নারীর বহুমাত্রিক ছবি আঁকতে আঁকতে পুরুষ চিরকালই ভালোবাসার নামে নারী ভোগ করে এসেছে। নারী কখনও সক্রিয় কখনও নিষ্ক্রিয়। স্রোতের মতো চলে এই ভোগের খেলা। যে নারী দেহ ভোগে সায় দিয়ে মূল্য আদায় করে,  সে পতিতা হলেও ফাঁকিতে পড়ে না। আর যে নারী দেহ দেয় বন্ধুত্বের নামে সে পড়ে চরম ফাঁকিতে। ভালোবাসার নামে নারীকে এতো অপমান সইতে হয়, কহতব্য নয়। পুরুষ চাইলেই যে নারীর সাড়া  দেয়, একশো ভাগ সত্য নয়। নারীরও স্বার্থক মন আছে।

রেজোয়ান বলে, তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না সুজানা। কী করলে তুমি বিশ্বাস করবে যে আমি তোমায় ভালোবাসি? কী রকম পরীক্ষা দিলে আমি পাশ করতে পারবো? রেজোয়ানের আর্দ্র উচ্চারণে মন গলে সুজানার। মেলে দেয় সে নিজেকে। শরীরে রাখে না কোনো গোপন সুতো। অনেক দিনের ক্ষুধার্থ শিল্পী নিরাভরণ সুজানাকে পেয়ে তাথিয়া তাথিয়া হেম রস পান করে। আর করেও অনেকক্ষণ। পরম তৃপ্তিতে। গভীর গৌরবে। তৃপ্ত সুজানাও। কিন্তু পরবর্তীতে অপরাধবোধে ভোগে। শরীর জেগে উঠলে কোনো কিছুই মনে থাকে না। শরীরের মন্থনগ্রন্থি  থেমে গেলে, তৃপ্তির অবসাদে শরীর ডুব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্তপ্রবাহের অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পায় না সুজানা। আক্রান্ত হয় মানসিক যন্ত্রণায়। ভাবে, কেনো আমি এটা করতে গেলাম?
আর নয় রেজোয়ান, তোমার ইচ্ছা পূরণ করে দিয়েছি আমি। একবার নয়, অনেকবার। তাও আবার আমারই বাসায়।
আমি কৃতজ্ঞ তোমার কাছে।
এবার আমায় মুক্তি দাও।
মুক্তি? রেজোয়ান তুড়ি মেরে কথাটা উড়িয়ে দিতে চায়, আধুনিক মানুষ হয়ে তুমি এসব কথা ভাব এবং বলো কেনো?
তুমি আমি যা করছি তা মোটেই শোভন নয়।
সুজানার বিছানায় শুয়ে হাসে পরিতৃপ্ত রেজোয়ান। সুজানা, জীবন শোভন অশোভনের বৃক্ষ নয়। তোমাকে ভালোবাসি এটাই বড় সত্যি। যেহেতু তুমি আমি কাছাকাছি থাকি অল্প সময়ের জন্য। তাই ভালোবাসাটা অতিক্রম করে শরীর বড় হয়ে দেখা যায়।
তবুও, আমি চাই তোমার আমার একটা স্বাভাবিক বন্ধুত্ব। অন্য কিছু নয়।
শোন আমার রাধা, আমার সুনয়না আমার বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকু কেড়ে নিও না। এই বিশাল পৃথিবীতে তোমাকে আমি অনেক কষ্টে খুঁজে পেয়েছি।
আমি তোমার কিছুই কেড়ে নেইনি বরং দিয়েছি। এসব অন্তত আমাকে বলো না রেজোয়ান।
নিশ্চয়ই দিয়েছো। সেজন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। হাজারবার কৃতজ্ঞ।
কৃতজ্ঞতা অকৃতজ্ঞতার ব্যাপার নয়। ব্যাপারটা নৈতিকতার আর আমার বিবেকের।
দু’জন মানুষ দু’জনকে ভালোবাসবে, এর মধ্যে নৈতিকতা আর বিবেক আনছো কেনো? সুজানার চুলে আদর করতে করতে জবাব দেয় রেজোয়ান।

আমি আর তুমি সমাজের বাইরে কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করছি? আমার সঙ্গে তুমি গোপনে মিলিত হতে চাও কেনো? তুমি সহজেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারবে, আর আমি? পাল্টা প্রশ্ন করে সুজানা।
তোমাকে যেতে দিচ্ছে কে?
শরীরী বাঁধন দিয়ে কাউকে ধরে রাখা যায়?
শরীরের জন্যই বিয়ে, বন্ধন। সেই শরীর ছাড়া বিয়ে টেকে?
রেজোয়ানের কথাটা আত্মস্থ করতে সুজানার সময় লাগে। এ কেমন পুরুষ? ভালোবাসার নামে শরীর ছাড়া আর কিছু বোঝে না। একজন ভালো বন্ধু চায় সুজানা, জহিরের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবার পর দুজনে আলাদা থাকছে। শরীর যে তাকে ডাকে না তেমন নয়। মাঝে মাঝে হাঙরের মতো রক্ত পান করার জন্য কামুক হয়ে ওঠে। নিজেই দেহের কোষে কোষে সাগরের গর্জন শুনতে পায় সুজানা। তখন পাগল হয়ে যায়। কামনার প্রবল ঢেউ বালিয়ারিতে আছড়ে পড়তে চায়।
আমি তোমায় ভালোবাসি সুজানা। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না, সুজানার নগ্ন বুকে মাথা রাখে রেজোয়ান। কণ্ঠ কাঁপে আবেগে।
সুজানা মনে মনে হাসে, যাদুকর তুমি আমাকে নয়, চাও আমার সুন্দর শরীর।

ডেটিং চলতে থাকে। কিন্তু শরীরের সংরাগ হওয়ার পর সুজানার ভেতর প্রতিবারের মতো গ্লানির জন্ম হয়। মনে হয়, লোকটা বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে আমার উপর এক ধরনের অধিকার করে আছে। কিছুতেই রেজোয়ানের শিকল ভেঙে বের হতে পারছে না। রেজোয়ান অভুক্ত নেকড়ে। বহুদিন পর রক্তমাংসের স্বাদ পেয়েছে। এখন বার বার রক্ত পান করতে চায়। নাইলে মন প্রাণ ও শিল্পের তরঙ্গ ভালো থাকে না। সুজানাকে রোজ পেতে চায় কাছে ও। কিন্তু সময় পরিস্থিতি মিলিয়ে মাসে দু-একবার মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টার  জন্য কাছে আসতে পারে। এই বিন্দু সময় রেজোয়ানকে মোটেই তৃপ্তি দেয় না। অন্যদিকে রোজীকেও ছাড়তে পারে না। রোজী তার সন্তানদের মা। বাচ্চাগুলোর মুখ তাকে স্থবির করে দেয়। না পারে এগুতে না পারে পেছাতে। মনে হয় পায়ে চাকা বেঁধে দেয়া হয়েছে। বড় অসহায়। একজন পুরুষ মানুষ নিজের স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতিত, কারো কাছে বলা যায়?

প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর দ্বিতীয় বার সংসার করার সাহস বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই। কিন্তু তার শরীর সকালে, বিকালে, রাতে কামনার রক্তে ভাসে। নিজের এই কামনা কাতর শরীরকে নিয়ে কী করবে  রেজোয়ান? বিষাদগ্রস্ত সে। স্টুডিওতে ছবির সামনে ধ্যানে বসে। রঙের স্রোতে ভেসে যেতে চায়। নারী শরীরের প্রচুর ছবি আঁকে। বিচিত্র ভঙ্গির নারীর সুশোভন ছবি আঁকে নিজের হাতে অথচ হাজার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নারীর শরীর স্পর্শ করতে পারে না। কী বিচিত্র বিপরীত নাটক! ইদানিং একটা ছবি প্রদশর্নীর প্রস্তাব পেয়েছে দেশের খ্যাতিমান শিল্প প্রমোশন প্রতিষ্ঠান ‘রঙমহল’ থেকে। বেশ টাকাও দেবে ওরা। রেজোয়ান নিজেকে উজার করে দেয় ছবি আঁকার পেছনে। সুজানার সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকমত রাখতে পারে না। এই কাজ নেয়ার আগে সুজানা অন্তরঙ্গ এক মুহূর্তে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে রেজোয়ানকে। বলেছে, আমরা আমাদের সম্পর্কটাকে একটা পরিণতি দিই। আমার কোনো খরচ তোমাকে বহন করতে হবে না রেজোয়ান। আমি আর এই সম্পর্ক বহন করতে পারছি না।
এইতো বেশ আছি ডার্লিং। বন্ধন আমার ভালোলাগে না। রেজোয়ান বলেছে।
মানে! রেজোয়ান শুধু লিভ টুগেদার করতে চায়? সুজানাকে সারা সকাল সারা দিন সারা রাত কাছে পাওয়ার জন্য বাসায় যেতে চায়। কিন্তু সুজানা কেনো ওকে ফ্ল্যাটে নিয়ে ঝামেলা বাড়াবে? ফ্ল্যাটের লোকজনের কথা শুনবে? রেজোয়ান সিদ্দিকী কি ওর খালি বাসায় নিয়ে যাবে সুজানাকে? ওঠাবে নিজের বিছনায়? জহিরের সঙ্গে শীঘ্রই ডিভোর্স হয়ে যাবে। সুজানা একজন জহিরের কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে আর একজন জহিরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় না। কিন্তু এই বয়সে ও একজন নির্ভরশীল পুরুষের সান্নিধ্যে থাকতে চায়। এ রকম আত্মকেন্দ্রীক ও ছন্নছাড়া পুরুষের নয়।

সুজানা জানে যৌবনের চাহিদা এক সময়ে কমে যাবে। তখন থাকার জন্য আশ্রয় এবং মোটা অংকের টাকার দরকার হবে। তখন এইসব কাঠ্ঠোকরা, টিয়া, তোতাদের দেখা পাওয়া যাবে না। পেতেও চায় না। একটা সম্মানজনক জীবনের স্বপ্ন ওর।
রেজোয়ান স্টুডিওতে ছবি আঁকতে আঁকতে ফোন করে, ডার্লিং চমৎকার একটা ছবি আঁকছি।
গুড।
আঁকতে আঁকতে ক্লান্ত আমি।
তো?
তোমার কাছে একটু আসতে চাই।
কেনো?
তোমার শরীর ও মন থেকে প্রেরণা নিতে।
হাসে সুজানা, রেজোয়ান সিদ্দিকী সাত আট দিন আসতে না পেরে পাগল হয়ে গেছে। বার বার সুজানার কাছে মিনতি করে তার কাছে আসবার জন্য। সুজানা জানায়, সম্ভব নয়। কারণ বাড়ি থেকে বাসায় মা এসেছেন।
আঁতকে ওঠে রেজোয়ান, তাহলে? আমি তো মরে যাবো।
এই আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো। আমার মা অসুস্থ। ডাক্তার দেখাতে এসেছেন।  চিকিৎসা হয়ে গেলেই তোমাকে আসতে বলবো। রেজোয়ানের হাহাকার বাড়তে থাকে। প্রায়ই ঘর ছেড়ে বাইরে বন্ধু-বান্ধবের ঘরে কাটায়।
মাস খানেকের মধ্যে রেজোয়ান সিদ্দিকী ছবি আঁকা শেষ করে ফেলে। ‘রঙমহল’ কর্তৃপক্ষ পেমেন্ট দিয়ে গেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ।

পোস্টার ডিজাইন, অতিথির আয়োজন, কাকে প্রধান অতিথি করবে ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে রেজোয়ান একটা ক্যাব নেয়। ছোটে গুলশানে সুজানার দ্য কার্নিভালে। সুজানার জন্য কেনে এক জোড়া দুল,  হাতের বালা আর চেন। উপহার পেলে খুব খুশি হয় সুজানা। চোখ বুঝে দেখে, এসব পেলে ও কেমন করে হাসবে?
ক্যাব থামলে দ্রুত নামে গাড়ি থেকে রেজোয়ান। ভাড়া মিটিয়ে সামনে তাকায়। সুজানার দোকান বন্ধ। পাশের পান সিগারেটের দোকানদার ইচা মিয়ার কাছে জিজ্ঞেস করে, ম্যাডাম কোথায়?
আপনে জানেন না? ইচা মিয়ার কণ্ঠে অবিশ্বাস।
কী?
ম্যাডাম তো দোকান বেইচা দিচে।
বিক্রি করে দিয়েছে?
হ। আর চইলা গেছে লনডন।
লন্ডন চলে গেছে?
হ, যাবার সমায়ে আমারে কইয়া গেছে।
ডান হাতের সিগারেট পুড়তে থাকে আর বাম হাতে অলংকারের প্যাকেট নিয়ে দুপুরের খরখরে আকাশের দিকে তাকায় রেজোয়ান সিদ্দিকী। অনেক দূরের আকাশে একটা বিমান উড়ে যায়। মাথাটা ঝিম ঝিম করে। মনে হচ্ছে, শরীরের সব কামনা রক্ত হয়ে ফোটায় ফোটায় হাতের আঙুল বেয়ে নিচে  নামছে। সব সবুজ ঘাস রক্তের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। মাঝখানে রেজোয়ান সিদ্দিকী বসে বসে রং তুলি দিয়ে ক্যানভাসের গায়ে নিজেকে ফালা ফালা করে কাঁটছে আর কাঁটছে আর কাঁটছে...।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়