ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

জাপা গৃহপালিত রাজনৈতিক দল, স্বীকার করলেন কাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৯:৫৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
জাপা গৃহপালিত রাজনৈতিক দল, স্বীকার করলেন কাদের

বনানীতে নিজ কার্যালয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি (জাপা) এখন গৃহপালিত রাজনৈতিক দল, অনেক দিন পর তা স্বীকার করেছেন দলটির চেয়ারম‌্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে আমরা বার্গেইনিং করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমাদের বলা হয়, গৃহপালিত রাজনৈতিক দল। এটাই বাস্তবতা। 

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, দেশ ও জাতির কাছে গৃহপালিত রাজনৈতিক দল কিংবা গৃহপালিত বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা নেই। আমরা একটি দলের কাছে বন্দি হয়ে গেলে জনগণের কাছে আমাদের প্রয়োজন থাকবে না। আর জনগণ কেন এমন দলকে ভোট দেবে? দলকে বাঁচাতে হলে গৃহপালিত অপবাদ থেকে বের হতে হবে। যারা গৃহপালিত হবার জন্য দায়ী, তাদের বর্জন করতে হবে।

জনগণের রাজনীতি করতে গেলে, সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই সরকার জাতীয় পার্টি ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা করে, এ অভিযোগ করে বিরোধী দলের নেতা বলেন, আমাদের দলের মধ্যে সরকারি দলের এজেন্ট ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের দল করে, কিন্তু রাজনীতি করে অন্য দলের। আমাদের দল করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেয়, কিন্তু রাজনীতি করার সময় তারা সরকারী দলের রাজনীতি করে। যখনই আমরা সঠিক রাজনীতি করতে চাই, তখনই আমাদের দলকে ভেঙে আরেকটি দল সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এটা সরকারই করে, যাতে আমরা স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে না পারি। আগে আমরা পরজীবী হলেও আমাদের একটা পছন্দ ছিল, আমরা যেকোনো পক্ষে যেতে পারি, আমাদের বার্গেইনিং পয়েন্ট ছিল। এখন আমরা বন্দি হয়ে গেছি, একজনের কাছেই যেতে হবে। আমরা সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই.... একজন একটা ডাক দেবেন, সরকার মদদ দেবে, মিডিয়া কাভারেজ দেবে আর আমাদের দল ভেঙে এবং আইনের মাধ্যমে আমাদের লাঙ্গল নিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

‘দল বাঁচাই না, রাজনীতি বাঁচাই—এ সমস্যায় জাতীয় পার্টি ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। কারণ, আমরা লোভ-লালসা থেকে দূরে থাকতে পারি না। আমাদের দলে থেকে যারা অন্য দলের রাজনীতি করে, তাদের আমরা দল থেকে বের করে দিতে পারি না। রাজনীতি বাঁচাতে আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে,’ যোগ করেন তিনি। 

সরকারের সমালোচনা করে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সরকার আমাদের দুর্বল করতে আমাদের মাঝেই একটি জোট বানিয়ে রাখছে। আমরা সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই সরকার আমাদের দল ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা করে। যারা জাতীয় পার্টি ব্যবহার করে অন্য দলের রাজনীতি করতে চায়, তাদের দল থেকে বের করে দিতে হবে। এটা করতে পারলেই জাতীয় পার্টি টিকবে।’

‘সরকারকে অনুরোধ করব, দেশের রাজনীতি শেষ করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দেন। সবাইকে ধংস করে সরকার একক রাজনীতি করলে তা দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে না’, বলেও মন্তব‌্য করেন জাপার চেয়ারম‌্যান।

১৯৯০ সালের পর জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে, স্বীকার করে জিএম কাদের বলেন, ক্ষমতার বাইরে থাকলে আমাদের দেশের দলগুলো টিকতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা জুলুম-নির্যাতন করে আমাদের রাজনীতি করতে দেয়নি। যারা ক্ষমতাসীন দল করতে এসেছিল, তারা নব্বই সালের পর দল ছেড়ে চলে গেছে। তারা দল বা দেশের স্বার্থ দেখেনি। ২০০৮ সালে যখন আমরা মহাজোট করেছি, তখন অনেকেই বলেছে, আমরা পরজীবী হয়ে গেছি। তারা বলেছেন, আমরা নাকি অন্যের সহায়তা ছাড়া নির্বাজনে জয়ী হতে পারি না। দেশের বড় দুটি দলের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়। সেই অল্প ভোট তো আমরা দিতে পারতাম। আমরা যদি পরজীবী হই, তারপরও আমাদের কাছে টানতে প্রতিযোগিতা ছিল। সেখানে আমাদের একটি বার্গেইনিং পয়েন্ট ছিল, আমরা বার্গেইনিং করে অনেক কিছু আদায় করতে পারতাম। কিন্তু, ২০১৪ সালের পর থেকে আমাদের সেই অবস্থাও নেই।’

গত নির্বাচনে অনেক কিছু দেখেছি-শিখেছি, উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, দেখেছি, রাজনীতি কত বেশি নোংরা হতে পারে, আবার কত বেশি মহৎ হতে পারে। দেখেছি, ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য মানুষ কত বেশি নিচে নেমে যেতে পারে। দেখেছি, দেশ ও জাতির জন্য মানুষ কত বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। এগুলো আমার চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে। মহান আল্লাহ যেন এই শিক্ষাগুলো দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজে লাগাতে দেন। 

‘আরো কিছুদিন পরে আমার সঠিক মূল্যায়ন হবে। এখন যারা আমাকে মূল্যায়ন করছেন, সেটা হয়ত সঠিক হচ্ছে না। সময়ের ব্যবধানে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে’।

জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন—জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার, মোস্তফা আল মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরীফা কাদের, যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন প্রমুখ।

নঈমুদ্দীন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়