ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গ্রামে ফিরে গিয়ে মাল্টা চাষে সফল সালাউদ্দিন

রাজিব হোসেন রাজন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১  
গ্রামে ফিরে গিয়ে মাল্টা চাষে সফল সালাউদ্দিন

রাজধানীর রঙিন জীবন নয়, এমনকি লাভজনক মিষ্টির ব্যবসাতেও ঢাকায় তার মন টেকেনি। একদিন টেলিভিশনে মাল্টা চাষের প্রতিবেদন দেখে সালাউদ্দিন মোল্লা সিদ্ধান্ত নিলেন- সব ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাবেন। সিদ্ধান্ত শুনে বন্ধুরা হেসেই খুন, স্বজনেরা বললো ‘পাগলামী’, পরিবার প্রমাদ গুনলো। কিন্তু সালাউদ্দিন পেছনে ফিরে তাকালেন না। সেদিনের সেই সিদ্ধান্ত আজ তাকে সফল চাষীতে পরিণত করেছে। মাল্টা চাষে সালাউদ্দিন এখন অন্যের অনুপ্রেরণা।

রাজধানীর ফকিরাপুলে মিষ্টির ব্যবসা রেখে ২০১৩ সালে সালাউদ্দিন গ্রামে ফিরে যান। এরপর শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরে অন্যের জমিতে মাল্টা এবং লেবু চাষ শুরু করেন। জায়গাটি দুর্গম চরাঞ্চল। তবে সেখানেই যেন সোনা ফলাচ্ছেন তিনি। তার জমির মাল্টা এবং লেবু বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারসহ পাশের জেলা চাঁদপুরেও। তার এই সাফল্য স্থানীয় বেকার যুবকদেরও মাল্টা ও লেবু চাষে আগ্রহী করে তুলেছে।

সালাউদ্দিন মোল্লা (৪৫) শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরের মো. কাশেম মোল্লার ছেলে। তিনি এলাকায় ফিরেই ৫০ শতক জমিতে ৩০০টি লেবু গাছের চাড়া রোপণ করেন। ২০১৮ সালে দুই একর ৪০ শতাংশ জমিতে ৩০০ গাছ দিয়ে করেন মাল্টা বাগান। বর্তমানে বছরে তার বাগান থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাল্টা ও লেবু বিক্রি হয়। বাগান থেকে হওয়া লেবু ও মাল্টার চারা বিক্রি করে আয় হয় আরও চার লাখ টাকা। বাগানের মাতৃগাছ থেকে ‘গ্রাফটিং’ করে তিনি চারা উৎপাদন করেন।

সালাউদ্দিন মোল্লা জানান, টিভিতে টাঙ্গাইল জেলায় লেবু ও মাল্টা চাষের একটি প্রতিবেদন দেখে তিনি এই ফল চাষে আগ্রহী হন। তার বাগানের নাম ‘মোল্লা লেবু ও মাল্টা বাগান’। তিনি সাত একর ৯০ শতক জমিতে লেবু এবং দুই একর ৪০ শতক জমিতে মাল্টার বাগান করেছেন। বাগানে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ লেবু এবং এক হাজার ৮০০ মাল্টাগাছ আছে।

বাগানে চায়না থ্রি, সিলকেট লেবু এবং পাকিস্তানি বেড়িকাটা মাল্টা ও ভারতীয় প্রলিত মাল্টা গাছ আছে। বর্তমানে বাগান পরিচর্যার জন্য ১২জন কাজ করেন। তবে সবচেয়ে আশার কথা, সালাউদ্দিন মোল্লা বাগানে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। নিজেই তরল জৈব সার তৈরি করে বাগানে দেন। কথাপ্রসঙ্গে জানালেন জৈব সার তৈরির প্রক্রিয়া। ‘একশ লিটার পানির মধ্যে ১০ কেজি গোবর, এক কেজি বেসন, এক কেজি চিটা গুড় ও এক মুষ্টি মাটি মিশিয়ে একটি পাত্রে তিনদিন রেখে দিলেই জৈব সার হয়ে যায়।’ বলেন তিনি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা ইসলাম বলেন, সালাউদ্দিন মোল্লার বাগান এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বড়। মাল্টা চাষ এভাবে বাড়তে থাকলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। দেশে বারি মাল্টা-১ এর চাহিদা বাড়ছে। এই জাতের মাল্টা খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু।
 

শরিয়তপুর/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়