ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সুরাইয়ার ‘সুকন্যা’য় ৩০ নারীর কর্মসংস্থান  

রুদ্র ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৫:৩৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
সুরাইয়ার ‘সুকন্যা’য় ৩০ নারীর কর্মসংস্থান   

তরুণরা দেশের সম্পদ। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করা অধিকাংশ শিক্ষার্থী জীবনের একটা সময়ে গিয়ে হতাশায় ডুবে যান। মূলত চাকরি-বাকরি নিয়ে এ হতাশার শুরু হয়। তবে বর্তমানে এ চিত্র খানিকটা হলেও পাল্টিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনেক সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী হয়ে উঠছেন। নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন অনেকের। ঠিক তেমনই একজন পরিশ্রমীর গল্প শোনাবো। 

সুরাইয়া ইয়াসমিন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিভাগের শিক্ষার্থী। স্বপ্ন দেখেছেন  উদ্যোক্তা হবেন। স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই। গতানুগতিক চিন্তা ধারার বাইরে গিয়ে তিনি ভালোবাসেন ক্রিয়েটিভ কোনো কিছু করার। সে চিন্তা থেকে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন।  মূলত ২০১৮ সালে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনাকালীন সময়ে এই চিন্তা আরও প্রবল হয়। শুরু করলেন ‘সুকন্যা’ নামে নিজের উদ্যোগ। 

তিনি বলেন, আর্ট এবং ক্রাফটের প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল সবসময়ই। সেই ভালোবাসার হাত ধরে জন্ম হলো আমার প্রতিষ্ঠান ‘সুকন্যা’র। ভাবলাম, অনলাইনের সহজলভ্যতা এবং সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগানোর এখনই সময়। এ ভেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘সুকন্যা’ নামে একটি পেজ খুলি। শুরুটা হয়েছিল হাতে আঁকা টিপ দিয়ে। তারপর একটু ভিন্নতা আনলাম। নতুন কিছু আনার চেষ্টা করলাম। 

হাতে তৈরি শৌখিন গয়না, হাতে আঁকা পোশাক। তখন এত বেশি অর্ডার পেতাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমে সমস্যা হতো। তখন ঠিক করলাম অনার্স কমপ্লিট হলে তারপর কাজ শুরু করবো। তাই সুকন্যার পথচলার প্রায় আটমাস পরে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয় সব কার্যক্রম। এখানে আমার ভালো লাগার কারণ ছিল। অচেনা কিছু মানুষ আমার কাজ দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন, ভালোবাসছেন, ভরসা করে পেমেন্ট করছেন।

দ্বিতীয় ধাপে কাজ শুরু করলাম ২০২০ এর মার্চ মাসে। সেসময় মহামারি। পুরো বিশ্ব স্তব্ধ। লকডাউনে পুরো দেশ অচল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। মাঝখানে প্রায় ১ বছর বন্ধ থাকার পর আবার শুরু করলাম সুকন্যার কার্যক্রম। তবে এবার ভাবলাম কাজে ভিন্নতা আনা যায় কিনা। আমাদের যশোরের আদি শিল্প হচ্ছে- ‘সূচিশিল্প’। শৈশব থেকে দেখছি কিভাবে একেকটা নকশীকাঁথা তৈরি হয়। ছোট থেকে দেখার কারণে আমি নিজেই সব সেলাই পারি। প্রথমে নিজেই ডিজাইন করে ফেসবুকে পোস্ট করতাম। অর্ডার হলে অ্যাডভান্স পেমেন্টের টাকা দিয়ে আবার কাপড় কিনে কাজ করে ডেলিভারি দিতাম। এভাবে ধীরে ধীরে পথচলা শুরু। করোনার দীর্ঘ ছুটিতে অবসর পেয়ে পুরো দমে চলছে সুকন্যার কাজ। গ্রাহকসংখ্যা ছড়িয়েছে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়। বেড়েছে গ্রাহকদের আস্থাও। 

এই পথে সবসময় দু’জন আমার পাশে ছায়ার মতো ছিলেন, অনুপ্রেরণা, ভালোবাসা এবং বিভিন্ন সময় ভরসা দিচ্ছেন, তারা হলেন আমার মা ও ছোট বোন। 

সুরাইয়া আরও বলেন, মাত্র ২৬০ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করে এখন প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার পণ্য উৎপাদন করছি। ‘বর্তমানে আমরা হস্তশিল্পের পোশাক, যেমন- শাড়ি, থ্রিপিস, রেডি কুর্তি পাঞ্জাবি এগুলো নিয়ে কাজ করছি। এর সাথে হোম ডেকর আইটেম নকশীকাঁথা, কুশন এগুলোও উৎপাদন করছি। যশোর অঞ্চলের আসল নকশীকাঁথা, যেগুলো ২০-৩০ বছর আগে উৎপাদন হতো, সেগুলো আবার উৎপাদন শুরু করছি। 

বর্তমানে সুরাইয়ার উদ্যোগের সাথে কাজ করছেন ৩০ জনের বেশি কর্মী। এরা সবাই গ্রামের মহিলা কিংবা স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী। অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবারের। তাদের সংসার চলে সেলাইয়ের টাকা দিয়ে। অনেকেই পড়াশোনা করছেন সেলাইয়ের টাকা দিয়ে। মহামারির কারণে পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় বন্ধ থাকার কারণে সেলাইয়ের উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন তারা। সুকন্যার লক্ষ্য, এসব প্রান্তিক নারীদের অবস্থার উন্নয়ন করা, তাদের প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করা। 

নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সুরাইয়া বলেন, আমি যেহেতু অণুজীব বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, তাই আমার পড়াশোনাকে কিভাবে আমার উদ্যোগে কাজে লাগানো যায়, সেটা নিয়ে আরও পড়াশোনা করছি।একটা সময় নারীরা শুধু ঘরের কাজের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিলেন। বর্তমানে নারীর ক্ষমতায়নের ফলে ঘরের গণ্ডি পেরিয়ে দৃষ্টি রাখছেন তারা বহু দূরে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

শরীফ/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়