ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে শসায় ৩ গুণ লাভ চাষিদের 

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ৪ অক্টোবর ২০২১  
লক্ষ্মীপুরে শসায় ৩ গুণ লাভ চাষিদের 

হোসেন আহম্মদ। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মিয়ার বেড়ির এলাকার কৃষক। তিনি শসা চাষ করে আড়াই গুণ লাভ পেয়েছেন। পরিকল্পিতভাবে চাষ ও খেতের পরিচর্যা করলে ধানের চেয়ে শসার বেশি ফলন পাওয়া যায়। শুধু হোসেন আহম্মদ নন, শসা চাষ করে লাভবান হয়েছেন সহস্রাধিক কৃষক। অল্প খরচে বেশি মুনাফা হওয়ায় শসা চাষের দিকে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা।

লক্ষ্মীপুরের শসার গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। শসা চাষ করে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন এখানকার কৃষকরা। এখানে মোট উৎপাদিত শসার সিংহভাগ সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকাতে উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া এই উপজেলার লাহারকান্দি, উত্তরজয়পুর, শাকচর, টুমচর, চররমি মোহন, চরআলী হাসান, কালিরচর, তেয়ারী গঞ্জের বিশাল এলাকায় শসার আবাদ করছে কৃষকরা। জেলার কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরেঞ্চ, মধ্য মার্টিন, উত্তরমার্টিন, চর কালকিনি, চর ফলকন, চর কাদিরা, চর লরেঞ্চ এলাকাতেও শসার উৎপাদন হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শসা ক্ষেতে এখন সবুজের সমারোহ। শসার নান্দনিক শোভায় মুগ্ধ শুধু কৃষকই নন এলাকাবাসীও। সবুজ গাছের সবুজ লতাপাতা দিয়ে যেন সাজানো এসব ইউনিয়নের গ্রামগুলো। প্রতিটি এলাকায় যেন কৃষক-কৃষানি শসা নিয়ে উৎসবে মেতেছেন। সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকার মিয়ার বেড়ি, ছটকির সাঁকো, চর ভূতা, পিয়ারাপুর, চর মনসা এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শসা ক্ষেতে ছেয়ে আছে। ক্ষেত পরিচর্যা, শসা তোলা ও বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার চাষিরা। 

জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতি হেক্টরে ১৫০ থেকে ১৬০ মণ শসা উৎপাদন হয়। এতে এই মৌসুমে শুধু ভবানীগঞ্জ এলাকাতে শসার মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২শ মেট্রিক টনেরও বেশি। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে লক্ষ্মীপুর কৃষি বিভাগ। 

কৃষকরা জানান, উন্নত জাতের শসার বীজ বপনের পর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফলন পেতে শুরু করে। এ জাতের শসা গাছ থেকে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। দেশি জাতের গাছে ফলন অপেক্ষাকৃত কম পাওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে ফলন তোলা যায়। অপর দিকে হাইব্রিড জাতের শসা গাছে ফলন বেশি কিন্তু মাত্র ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত ফলন তোলা যায়। সপ্তাহে দুইদিন ক্ষেত থেকে শসা তুলতে হয়।

তারা আরও জানান, এ সময়টাতে ক্ষেতে পানি থাকে। তাই উঁচু করে সারিবদ্ধভাবে বাঁধ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জমি তৈরি করে নিতে হয়। গাছের গোড়ায় পানি থাকলে গাছ মারা যাবে। তাই অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য সেচের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আবার খরায় পানির প্রয়োজন হলে পার্শ্ববর্তী খাল থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। অল্প সময়ে ফলন বেশি হওয়ায় এসব এলাকায় হাইব্রিড জাতের শসার বেশি চাষ হয়ে থাকে বলে জানান কৃষকরা।

কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, এক একর জমিতে শসার চাষ করেছি। গত দশ দিন থেকে বিক্রি শুরু করেছি। প্রতিদিন ৫ থেকে ৮ মণ পর্যন্ত শসা বিক্রি করি। এবার ফলনও যেমন বেশি হয়েছে। দামও মোটামুটি ভালো পাচ্ছি। ব্যবসায়ীদের কাছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি অথবা ৪‘শ থেকে ৬‘শ টাকা মণ বিক্রি করছি।

আরেক কৃষক বলেন, খুচরা বাজারে এখন শসার দাম বেশি। প্রতি কেজি শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তাই আমরা চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছি। প্রতি মণ শসা পাইকারি ১৫’শ থেকে ১৭’শ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে ক্ষেত থেকে শসা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এসব কৃষকরা জানান, বিগত সময়ে শসার এত ভালো দাম ছিল না। ফলে গত মৌসুমে লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে এবার খরচ উঠিয়ে অধিক লাভ করতে পারবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, জেলায় সবজি আবাদের উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে। সরকার সময়মতো বীজ, সার ও ঋণ প্রবাহ সচল রেখেছেন। ফলে এ বছর বিভিন্ন সবজি বিশেষ করে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও চাষিদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

/মাহি/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়