ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শক্তিহীন পা, মনের জোরে চলছেন ইউনুছ 

মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১১ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৭:০৭, ১১ অক্টোবর ২০২১

ইউনুছ আলী। দিনাজপুরের হিলির সরঞ্জাগাড়ী গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ছেলে। জন্মগতভাবে তিনি প্রতিবন্ধী। দুই হাতের উপর ভর করে পথ চলেন। পায়ে জোর না থাকলেও হাতের জোরে সব কাজ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনুছ আলী এলাকার ছোট-বড় ও সমবয়সীদের সঙ্গে মাঠে ফুটবল খেলছেন। সুস্থ-সবলদের সঙ্গে নিজেও শক্তিশালী খেলোয়াড়ের মতো খেলছেন। আবার ক্রিকেট খেলাতেও তার জুড়ি নেই। ব্যাটিংসহ বল করছেন ইউনুছ আলী। নদীতে নেমে সাঁতার কাটতেও তাকে দেখা যায়। আবার হাতের শক্তি দিয়ে উঠছেন বিভিন্ন গাছে। ইউনুছ আলীর চলাচলের জন্য রয়েছে একটি চার্জার বাইসাইকেল। এই সাইকেলে চেপে কলেজসহ চোষে বেড়ায় এলাকায়।

১০ বছর আগে বাবা আর ৪ বছর আগে মাকে হারান ইউনুছ আলী। বাবা-মা হারিয়ে অনেকটাই নিঃস্ব তিনি। তারা ৬ ভাই ও ৬ বোন, ইউনুছ সবার ছোট। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই আক্তারুজ্জামান তাকে দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন। দুই বছর আগে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডও পেয়েছেন তিনি। ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেন। তার ইচ্ছা একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে সরকারি কর্মকর্তা হওয়া। গ্রামবাসীসহ তার সহপাঠীরা তাকে খুব ভালোবাসেন। তার আচার-ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ। প্রতিবন্ধী হলেও কেউ তাকে অবহেলা করেন না। ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় ইউনুছকে নেন তারা। সবাই যেন আত্মার আত্মীয়। 

ইউনুছ আলীর সহপাঠী তৈবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ইউনুছ আমার বাল্যবন্ধু, ছোট থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছি, একসঙ্গে লেখাপড়া করছি। যে কোনো জায়গায় গেলে তাকে সঙ্গে নেই, কখনো অবহেলা করি না। ও আমাদের ভালো বন্ধু।’ 

প্রতিবেশী রাকিব হাসান বলেন, ‘ইউনুছ আলী আমাদের ছোট ভাই। তাকে নিয়ে বাজার-ঘাট সব জায়গায় যাই, কখনো প্রতিবন্ধী বা ছোট করে দেখি না। তার যে কোনো প্রয়োজনে আমরা পাশে থাকি।’

রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনুছ আলী আমাদের বড় ভাই। তিনি খুব ভালো মানুষ। আমরা তাকে অনেক সম্মান করি এবং ইউনুছ ভাইও আমাদের স্নেহ-ভালোবাসা দেন।’

ইউনুছ আলী বলেন, ‘আমি লেখাপড়া করি, এইচএসসি পাস করেছি। নিজেকে কখনো প্রতিবন্ধী মনে করি না। আমার নিজ শক্তিতে পথ চলছি। আমি সমাজের কোনো বোঝা নই এবং বোঝা হয়ে থাকতেও চাই না। নিজে পথ চলি, খেলাধুলাসহ সব কাজে নিজেকে লাগানোর চেষ্টা করি। আমার অনেক বড় হওয়ার ইচ্ছা। লেখাপড়া শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’

ইউনুছ আলীর বড়ভাই আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আট বছর আগে বাবা-মা মারা যান। আমরা ১২ জন ভাই-বোন।  ইউনুছ সবার ছোট, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে ওর সব দায়িত্ব আমি নিয়েছি। ইউনুছের মধ্যে অনেক প্রতিভা। সে এই প্রতিভাগুলো কাজে লাগাতে চায়। পড়াশুনা করে সে বড় হবে, এটাই আমার কামনা।  সরকারি সহযোগিতা পেলে ইউনুছ উপকৃত হবে, স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহজ হবে।’

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়