ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

নিজের টাকায় পথে পথে গাছ লাগান আনোয়ার

বাদশাহ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ৫ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:২৭, ৫ নভেম্বর ২০২১
নিজের টাকায় পথে পথে গাছ লাগান আনোয়ার

প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে ৭ বছরে ৩ হাজার গাছ লাগিয়েছেন কুড়িগ্রামের আনোয়ার হোসেন। তবে নিজের বসতভিটা বা নিজের বাগানে নয়, এসব গাছ লাগিয়েছেন শহর থেকে গ্রামের রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়।

শুধু তাই নয়, নিজের অর্থ ব্যয় করে নিজেই পরিচর্যা করে লাগানো গাছ সযত্নে বড় করে তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়কের ডিভাইডারের মাঝে পড়ে থাকা জায়গায় বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগিয়ে করেছেন শোভাবর্ধন।

এই বৃক্ষ প্রেমিক আনোয়ার হোসেনের বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের টাপুরচর গ্রামে। তিনি টাপুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরি পদে চাকরি করেন। ছুটির দিনে তিনি গাছের চারা নিয়ে ছুটে যান শহর অথবা গ্রামের কোনো সড়কে। গাছের চারা লাগানোর পর তা ছাগল-গরুর হাত থেকে রক্ষা করতে নিজ খরচে বেড়া দেন। আর নতুন লাগানো গাছে প্রতিদিন স্কুল ছটির পর বিকেলে গাছের গোড়ায় পানি দেন। তার কাজে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে গড়ে তুলেছেন ওরাকল লাইব্রেরি। এ কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে বাড়িতে গড়ে তুলেছেন নার্সারি।

গাছ প্রেমিক আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমি গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ হই। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম জেলায় গরমের সময় তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে এবং শীতে তাপমাত্রা অনেক কম। এই প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে ৭ বছর আগে গাছ লাগানো শুরু করি। প্রথমে নিজের এলাকায় শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি সড়কে ও শহরের বিভিন্ন অফিস আদালতের সামনে গাছ লাগিয়েছি।

এখনো পর্যন্ত শহর, গ্রামের সড়ক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে ৩ হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছি। পৌরসভা এবং সড়ক বিভাগের অনুমতি নিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গার শোভাবর্ধনে রোড ডিভাইডারে ফুলের বাগান করেছি। আশা করি এ কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন আম, জাম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের গাছের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া, বকুল, বট, সোনালুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করেন। গত দুই/তিন বছর ধরে তার লাগানো অনেক গাছে ফল আসতে শুরু করেছে।

স্থানীয় যুবক মাসুদুর রহমান জানান, গ্রামের যেসব সড়কে কোনো গাছ ছিল না, সেসব সড়কের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে ফলমূলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তার গ্রামের সড়কে দু’ধারে গাছ লাগিয়েছেন। ফল এসেছে। এসব গাছ গ্রামের লোকেরাও দেখাশোনা করছেন।

কুড়িগ্রাম শহরের সমাজকর্মী শ্যামল ভৌমিক বলেন, আনোয়ার হোসেন অবসর সময়ে বা ছুটির দিনে অন্য কাজ করেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নিজ খরচে রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনার সামনে গাছ লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি শহরের যে জায়গাগুলোতে ময়লার ভাগাড় পড়ে থাকতো, সেগুলোতে ফুলের বাগান করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন। সত্যিই তিনি মহৎ কাজ করছেন।

কুড়িগ্রাম সরকারি মহাবিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও উপাধ্যক্ষ মীর্জা নাসির উদ্দিন বলেন, কুড়িগ্রামের সন্তান আনোয়ার হোসেন আমাদের সবার কাছে একটি প্রেরণার উৎস। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রধান প্রধান সড়কে এমনকি গ্রামাঞ্চলের সড়কেও বিভিন্ন ধরনের ফলজ, ঔষুধি এবং সৌন্দর্য বর্ধনকারী বৃক্ষ লাগিয়েছেন। ফলে কুড়িগ্রাম শহরের একদিকে যেমন শোভাবর্ধন হচ্ছে, অন্যদিকে এই শহরের পরিবেশ আরও উন্নত হচ্ছে। আমরা আশা করি আরও অনেক তরুণ প্রজন্ম আনোয়ার হোসেনকে অনুসরণ করে আমাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসবেন।

স্থানীয়রা মনে করেন, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছোট পদে চাকরি করা এই যুবকের প্রকৃতির প্রতি অসীম ভালোবাসা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। পাশাপাশি তাকে দেখে নতুন প্রজন্ম বৃক্ষরোপণে উজ্জীবিত হলে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা পাবে।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়