ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

২০২১ সালে উন্নত দেশের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে

হাকিম মাহি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:৩৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১
২০২১ সালে উন্নত দেশের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে

একটি অর্ধ শতকের বাংলাদেশ। এই সেদিনও তিনবেলা আহারও জুটতো না সবার। অর্থনীতির চাকা বন্দি ছিল পাকিস্তানিদের হাতে। বাঙালির ত্রাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠের নির্দেশে পাকিস্তানিদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়। স্বাধীন দেশ পায় বাঙালি। তারপর শুরু হয় দেশ গঠনের পালা। অর্ধ শতাব্দি না পেরোতেই দেশ উন্নত দেশের অবকাঠামোতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। করোনায়ও রেমিটেন্স, মাথাপিছু আয়, রিজার্ভ হু হু করে বেড়েছে। চোখ যেদিক যায়, উন্নয়নের যেন জোয়ার বইছে সারাদেশে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম পদ্মা সেতু। রাজধানী যেন ফ্লাইওভারের শহর। কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, রাস্তাঘাট, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দেশ এখন এশিয়ার মডেল। 

সবচেয়ে আশার সংবাদ হচ্ছে করোনাকালেও অসংখ্য বেকার তরুণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হয়েছেন। তরুণদের স্লোগান হচ্ছে ‌‘চাকরি করবো না, চাকরি দেবো’ যেটি উন্নত দেশের সবচেয়ে বড় মাপকাঠি। গত ২০২১ সাল বাংলাদেশের জন্য ছিল ঘুরে দাঁড়ানো ও শক্তি প্রমাণের বছর।        

পদ্মা সেতুর টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস

একটি সেতু। সূর্যালোকে দেখা একটি বিশালাকার স্বপ্ন। পুরো দেশকে জাগিয়ে তোলার একটি প্রয়াস। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলা এবং বেনাপোল স্থলবন্দর এই অঞ্চলে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় কয়েক কোটি মানুষের বাস। ভেবেছেন কি কখনো বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কেন এখনো কোনো ভারি শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি? দেশের সবচেয়ে বড় নদী পদ্মা। আর এই পদ্মাই দক্ষিণকে রেখেছিল আলাদা করে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করাই এ সেতু তৈরির উদ্দেশ্য। এ জন্য একুশ শতকের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হাতে নেয় বাংলাদেশ।

উত্তাল ওই পদ্মা পেরিয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা মানেই এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যদিনের দুর্দশার চিত্র। কিন্তু ভাঙ্গন কবলিত এ সর্বনাশা সর্বগ্রাসী পদ্মার বুকে বিস্ময়কর এই সেতু নির্মাণ উন্নয়নশীল বাংলাদেশের পক্ষে কতটা সহজ? কতটা চ্যালেঞ্জ?

কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেল: স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা 

আর দেড় বছর বাকি। এই সময়ের মধ্যেই চীনের সাংহাই সিটির মতো বন্দর নগরী চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেই চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশাপাশি নদীর অপর তীরে আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকায় গড়ে উঠবে আরও একটি নতুন শহর। 

নতুন এই শহরের অবকাঠামো একের পর এক নির্মিত হচ্ছে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া দেশের আলোচিত এই মেগা প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে ৭৭ শতাংশ হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ হয়ে নদীর ওপারে আনোয়ারা পর্যন্ত একটি টিউব পরিপূর্ণভাবে স্থাপন হয়েছে। দ্বিতীয় টিউব স্থাপনের কাজও প্রায় শেষের পথে। অপর দিকে স্থাপিত টিউবের ভেতর দিয়ে এখন চলছে পিচঢালা সড়ক নির্মাণের কাজ। এই টানেলের দুটি টিউবে নির্মিত হবে চার লেনের সড়ক।

উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জ মানে মিঠামইন হাওরের মাঝে চোখ জুড়ানো সড়ক। প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট আর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। আবার দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে রাষ্ট্রপতিদের শহর। যে অঞ্চলে আজ থেকে দেড় যুগ আগেও বলার মতো তেমন উন্নয়ন ছিল না, কিন্তু গত একযুগে সেই দৃশ্য পুরোটাই পাল্টে গেছে উন্নয়নের ছোঁয়ায়। এখন জেলার পথে-প্রান্তরে, হাওরে-বিলে উন্নয়নের হাতছানি।     

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র অনুযায়ী, একযুগে কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে অন্য উপজেলা ও জেলার ব্যাপক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ, ভৈরব এবং হোসেনপুর উপজেলার রাস্তা প্রশস্ত ও উন্নত করা হয়েছে। এছাড়াও কিশোরগঞ্জ থেকে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক প্রশস্ত ও নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে আগামী ৫ বছরের একটি মাস্টারপ্ল্যানও করেছে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। 

দক্ষিণের উন্নয়নের সোপান পায়রা সেতু

বদলে যেতে শুরু করেছে দেশের দক্ষিণের জনপদ। নান্দনিক পায়রা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই বরিশাল থেকে ফেরিবিহীন ১১০ কিলোমিটার সড়কে যাতায়াত করেছে যানবাহন। তাই অচিরেই এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ দেশের অর্থনীতিতে পায়রা সেতুটি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন দক্ষিণাঞ্চলবাসী।

তাদের মতে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরিতে বাধা ছিল পদ্মা, পায়রা আর কচা নদীর ওপর বেকুটিয়া পয়েন্টে অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। পায়রায় এখন যান চলাচল করছে, পদ্মা ব্রিজের কাজও দ্রুত গতিতে শেষ হচ্ছে আর কচা নদীর ওপর বেকুটিয়া পয়েন্টে অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ। আগামী বছরের জুন-জুলাইতে এই সেতুটি দিয়ে যান চলাচল সম্ভব বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

পাঁচবার ফলন হওয়া ধানের ইতিকথা

একটি ধানগাছ বছরে পর্যায়ক্রমে পাঁচবার ফলন দেবে। শুনলে অবিশ্বাস্য হলেও নতুন এই ধানের জাত আবিষ্কার করেছেন মৌলভীবাজারের জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। আবিষ্কারের পর থেকেই সাড়া পড়েছে দেশজুড়ে। 

গবেষক ড. আবেদ চৌধুরীর বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধান বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

প্রবাসে থাকলেও দেশের ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছেন তিনি। নিজের উদ্ভাবিত জাতের ধান উৎপাদনে জন্মস্থান কানিহাটি গ্রামের পারিবারিক জমিতে গড়ে তুলেছেন খামার। এই খামারেই নতুন উদ্ভাবিত ধান চাষ করা হয়। প্রথমবারের মতো একই গাছে এক বছরে পাঁচবার ফলন এসেছে।

লেডি বাইকার নাদিয়ার স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

নাদিয়া রহমান স্মরণ। পড়ছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বশে শেখেন বাইক চালানো। পরিচিতি পান লেডি বাইকার হিসেবে, অল্প সময়ে হয়ে উঠেন স্বাবলম্বী। শুধু বাইক চালানোতেই থেমে থাকেননি তিনি। নিজের জ্ঞানকে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ট্রেনিং সেন্টারে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ, এতে নিজের খরচসহ পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন।

২০১৭ সালে লেডি বাইকার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন নাদিয়া রহমান। ছোটবেলায় সাইকেল চালানো শিখেছেন, ফলে অল্প সময়ে আয়ত্ত করে ফেলেন বাইক চালানো। করোনা মহামারিতে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরে যান নিজ জেলা কুমিল্লায়। পরবর্তী সময়ে তিনি আড়াই মাস পর জুন মাসের ১ তারিখ ট্রেইনার হিসেবে ‘উইংস অব ড্রিম’ নামক কুমিল্লা লেডি বাইকার গ্রুপে যুক্ত হন। গ্রুপটি তার বান্ধবী আফরোজ সামিহার। বন্ধে বাসায় বসে না থেকে দুই বান্ধবী একসঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন।

চাকরি ছেড়ে মুক্তা উৎপাদনে ভাগ্য বদল  

নাজিম উদ্দিন। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় ছিলেন একজন এনজিও কর্মী। এনজিওতে কাজ করার সময় পরিচয় হয় ময়মনসিংহের কয়েকজন ঝিনুক চাষির সঙ্গে। তাদের চাষ দেখে আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় নিজের ৪০ শতাংশ জায়গার পুকুরে ৫০০ ঝিনুক দিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করেন। 

নাজিম বছর শেষে দেখেন অধিকাংশ ঝিনুক মারা গেছে। হতাশ না হয়ে মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার শুরু করলে সফল হন। আয় হয় ৭০ হাজার টাকা। এরপর থেকে তার আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তিনি এখন সফল ঝিনুক চাষি। সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি ভারতেও বিক্রি করছেন তার উৎপাদিত মুক্তা। খামারে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলছেন তিনি।

১০ কোটি টাকা মাল্টা বিক্রির আশা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এবছর সবুজ মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিদের মুখেও তৃপ্তির হাসি। চলতি বছর বিজয়নগরে ১০ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। অনুকূল আবহাওয়া ও উপযোগী পরিবেশ থাকায় প্রতি বছরই বাড়ছে মাল্টার চাষ। সঙ্গে বাড়ছে নতুন নতুন বাগানও।

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগরে ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে উপজেলায় মাল্টার আবাদ শুরু হয়। ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে চাষ। এই এলাকায় বারি মাল্টা-১ জাতের চাষই বেশি হয়।

শূন্য থেকে ৭ মাসে লাখপতি মৌ 

সা‌দিয়া ইসলাম মৌ। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক দ্বিতীয় ব‌র্ষের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছেন ব্যবসা। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। প্রথমে নিজের হাত খরচের টাকা নিজেই আয় করেন, মাঝে মাঝে পরিবারকেও সহযোগিতা করেন। সাত মাসেই হন মিলিয়নিয়ার।

ব্যবসায়ী হ‌ওয়ার কোনো প‌রিকল্পনা না থাক‌লেও ক‌রোনাকালীন দীর্ঘ সময় যখন শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠান বন্ধ‌ ছিল, সেই সময়টা‌কে কা‌জে লা‌গি‌য়ে‌ছেন বিশ্ব‌বিদ্যালয় পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী। যখন শিক্ষা প্র‌তিষ্ঠা‌নের বন্ধ দফায় দফায় বাড়‌ছি‌ল, ঠিক তখ‌ন দেখ‌লেন ক্যাম্পাসের বড় ভাই, বোন, বন্ধু-বান্ধবী যে যার মতো সময়কে কা‌জে লা‌গা‌চ্ছেন। কেউ কেউ পোশাক, ড্রাই ফুডস, হ্যান্ড পেইন্টেড ড্রেস, কসমেটিকস আইটেম ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়ে কাজ করছেন। তখন শুরু হ‌লো শূন্য থে‌কে শুরুর গল্প। 

ধু ধু চরে সমৃদ্ধির হাতছানি

এপার-ওপার ভাগ করেছে যমুনা নদী। একপাড়ে নগরবাড়ি নৌবন্দরের মতো সমৃদ্ধ জনপদ, অপর পাড়ে শুধুই ধু ধু চর।উন্নয়ন হাতছানি দিয়ে ডাকলেও নেই সমৃদ্ধির ছিটেফোঁটা-ছোঁয়া। বরাবরই উন্নয়ন বঞ্চিত চরের এসব মানুষের যমুনার ভাঙাগড়ার সঙ্গে খেলা হয়। তাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তালিকা থেকে বের হতে পারে না ওখানকার বসতীরা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারগুলো এখনো তাদের কাছে পানসে।

তবে সেই চরে এবার অন্ধকার ঘুচে ফুটবে আলো। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে চরের জীবন। বাড়বে ফসল উৎপাদন আর শিক্ষার হার। সেইসঙ্গে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

৩ প্রতিষ্ঠানের মালিক কলেজছাত্র হাফিজ

আব্দুল্লাহ আল হাফিজ। ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি সরকারি কলেজের ছাত্র। বাবা এস এম সোলায়মান ও মা রেহেনা পারভীনের একমাত্র ছেলে তিনি। ঢাকায় থাকছেন পরিবারের সঙ্গে। ছোটবেলার স্বপ্ন বড় হয়ে একজন ব্যবসায়ী হবেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই হাফিজ পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসায় মনোনিবেশ করছেন।

হাফিজ বলেন, ‘মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষেই আমি নিজ উদ্যোগে টুকটাক আউটসোর্সিং শুরু করি এবং কয়েক মাসের মধ্যেই মোটামুটি ভালোই দক্ষতা অর্জন করি। আউটসোর্সিং অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত হতে আমার বেশি সময় লাগেনি। এর পাশাপাশি ঢাকায় আমি নিজের আয়ের টাকা ও বাবার সহযোগিতায় দুটি লাইফ স্টাইল ব্র্যান্ড চালু করেছি। একটি জেন্টস ‘মিয়া লাইফ স্টাইল’ (MIYAA Lifestyle) এবং অন্যটি লেডিস ‘তাহিরা ইম্পোরিয়াম’ (Tahiraa Emporium)। আমি এই দুটো থেকে অল্প সময়ের মধ্যে খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখন আমি এই দিকেই বেশি সময় দিচ্ছি।’

সুরাইয়ার ‘সুকন্যা’য় ৩০ নারীর কর্মসংস্থান  

তরুণরা দেশের সম্পদ। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করা অধিকাংশ শিক্ষার্থী জীবনের একটা সময়ে গিয়ে হতাশায় ডুবে যান। মূলত চাকরি-বাকরি নিয়ে এ হতাশার শুরু হয়। তবে বর্তমানে এ চিত্র খানিকটা হলেও পাল্টিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনেক সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী হয়ে উঠছেন। নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন অনেকের। ঠিক তেমনই একজন পরিশ্রমীর গল্প শোনাবো। 

সুরাইয়া ইয়াসমিন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিভাগের শিক্ষার্থী। স্বপ্ন দেখেছেন  উদ্যোক্তা হবেন। স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই। গতানুগতিক চিন্তা ধারার বাইরে গিয়ে তিনি ভালোবাসেন ক্রিয়েটিভ কোনো কিছু করার। সে চিন্তা থেকে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন।  মূলত ২০১৮ সালে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনাকালীন সময়ে এই চিন্তা আরও প্রবল হয়। শুরু করলেন ‘সুকন্যা’ নামে নিজের উদ্যোগ। 

ছোট্ট মাঠে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ জয়

স্কুল শেষে বিদ্যালয়ের এই ছোট্ট মাঠে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ জয় করেছেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নারী ফুটবলাররা।অবাক করা বিষয় হলো, এ বছর জাপান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে (মহিলা) মাগুরা জেলা টিমের যে ১২ জন মেয়ে অংশগ্রহণ করে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, তাদের ১০ জন একই স্কুলের ছাত্রী। তাদের সবার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার একেবারে শেষ সীমান্তে গোয়ালদা ও তার আশেপাশের গ্রামে।

মাত্র সাড়ে ১২ হাজার বর্গফুটের (২৯ শতক) একটি খেলার মাঠ। সেখানেই চলে অনুশীলন। এই ছোট্ট মাঠেই প্রশিক্ষণ নেন একেবারেই অজপাড়াগাঁয়ের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েরা। তাদের কারো বাবা ভ্যান চালক, কারো বাবা ভূমিহীন কৃষক আবার কারো বাবা দিনমজুর। বিস্ময়ের বিষয় হলো এসব মেয়েই এখন দেশের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়। 

মাঠে কৃষকের মাথায় বাতাস দেবে রাজুর সোলার ফ্যান

জামালপুরের ইলেক্ট্রিশিয়ান রাজু আহাম্মেদ রোদের তাপ থেকে কৃষকদের বাঁচাতে ও আরামদায়ক বাতাস দিতে তৈরি করেছেন সোলার ফ্যান। এ ফ্যান রোদের মধ্যে মাঠে কাজ করা কৃষকদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। 

ইলেক্ট্রিশিয়ান রাজু আহাম্মেদ বলেন, একদিন দোকানের কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। পরে নদীর পাড়ে বাতাস খেতে যাই, হঠাৎ করে দেখি মাঠে কাজ করতে গিয়ে একজন কৃষক মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পরে দৌড়ে গিয়ে তাকে মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করি। সুস্থ হওয়ার পর তিনি বলেন, অতিরিক্ত রোদে আর গরমে মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলাম। তখন থেকে কৃষকদের জন্য কিছু করার আগ্রহ থেকে দীর্ঘ নয় মাসের চেষ্টায় সোলার ফ্যানটি তৈরি করি।

প্রতিদিন ৩০০ ক্ষুধার্ত খাচ্ছেন মেহমানখানায়

নরসিংদীতে প্রতিদিন ৩০০-এর বেশি অসহায় ক্ষুধার্ত খাচ্ছেন মেহমানখানায়। আর এ ক্ষুধার্ত মানুষকে একবেলা খাবার তুলে দিচ্ছে ‌‌‘আমরা কজন’ নামে একটি সেবামূলক সংগঠন।

গত ৩ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলছে বিনামূল্যে একবেলা খাবার প্রদানের কার্যক্রম। দিন যতই যাচ্ছে মেহমানখানায় প্রতিদিন বাড়ছে হতদরিদ্র ক্ষুধার্তের সংখ্যাও। 

২০ হাজার টাকা বিনিয়োগে কোটিপতি রাসেল

মো. রাসেল। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান। একটি ছাগলে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করে তিনি এখন একজন সফল ব্যবসায়ী। বর্তমানে তার খামারে ৫০টি ছাগল ও ২৭টি গরু রয়েছে। এতে মূলধন দাঁড়িয়েছে ১ কোটি টাকার ওপর।  

গরু পালন, দুধ বিক্রি, গোবর, বায়োগ্যাস প্লান্ট, কেঁচো দিয়ে জৈবসার প্রস্তুত করে ১২ বছরে কোটিপতি বনে যান সফল এ উদ্যোক্তা। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘রাসেল ডেইরি ফার্ম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বাবা আবদুল হালিম, মা, ভাই ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দেখভাল করেন এ খামার।

সারাদেশে ৫জি নেটওয়ার্ক চালু, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি সরবরাহ, সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়াও, অসংখ্য উন্নয়ন রয়েছে দেশের পথে-প্রান্তরে। সময় বলছে শিগগিরই শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়