ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মেয়ের শখ পূরণে আড়াই লাখ টাকায় জিপ বানালেন বাবা 

এইচ মাহমুদ, নরসিংদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ১৭ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৪:১৮, ১৯ এপ্রিল ২০২২

কাউসার আহমেদ। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর সভার বাঙ্গালপাড়া এলাকার বাসিন্দা। কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর প্রশিক্ষণ ছাড়াই টয়োটা সাজ মডেলের আদলে একটি জিপ গাড়ি তৈরি করে স্থানীয়ভাবে আলোচনায় এসেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন শখের জিপ। গাড়িটি তৈরি করতে তার সময় লেগেছে একমাস এবং ব্যয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। 

কাউসারের জন্ম কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার দশপাখি গ্রামে। গত পাঁচ বছর যাবত তিনি পরিবার নিয়ে বাঙ্গালপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন। ১৯৮৮ সালে জন্ম নেওয়া কাউসার তার পিতা সাদেকুল ইসলামের সাত সন্তানের মধ্যে বড়। ২০০৩ সালে কিশোরগঞ্জের স্থানীয় একটি মাদ্র্রাসা থেকে তিনি দাখিল পাস করেন। পরে আর পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল স্বাবলম্বী হওয়া।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে ২০০৪ সালে পাড়ি জমান সৌদি আরব। প্রায় একযুগ প্রবাস জীবন কাটিয়ে ৬ বছর আগে দেশে ফেরেন কাউসার। পরে পলাশের ঘোড়াশালে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। চাকরিতে থাকা অবস্থায় মাস দুয়েক আগে তার মেয়ে রাদিয়া ইসলাম ইউটিউবে বাচ্চাদের খেলনা একটি জিপ দেখে আবদার করে বসেন তারও এমন জিপ চাই, যেটাতে সে চড়তে পারবে। বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারীর হওয়ায় ওইরকম গাড়ি মার্কেট থেকে কেনার সামর্থ্য তার নেই। তাই চিন্তা করেন মেয়ের জন্য এক সিটের ব্যাটারিচালিত গাড়ি বানাবেন। সেই থেকে পরিকল্পনা শুরু তার। 

পরিকল্পনা থেমে যায় তখন, যখন বুঝতে পারেন এক সিটের ছোট গাড়ি তৈরিতেই খরচ হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এবার পরিকল্পনা করে সাহসী উদ্যোগ নেন। এক সিট নয়, সামনে পেছনে মিলিয়ে মোট পাঁচ সিটের গাড়ি বানাবেন তিনি। খরচ পড়বে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। যেই ভাবা সেই কাজ। ইউটিউবে গাড়ি তৈরির বিভিন্ন ভিডিও দেখে কাউছার অটোরিকশা কিনে সেটির বডি বিক্রি করে দেন। পরে অটোর মেশিন, চারটি চাকা, ব্যাটারি, প্রাইভেট কারের স্টিয়ারিংসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে মডিফাই করে স্থানীয় এক অটো গ্যারেজের মিস্ত্রিকে সাথে নিয়ে নিজস্ব নকশা ও পরিকল্পনায় প্রায় একমাস লাগিয়ে তৈরি করেন পাঁচ সিটের একটি শখের জিপ। এতে যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট খরচ পড়ে আড়াই লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মেয়ে রাদিয়া ইসলামকে পাশে বসিয়েই চালকের আসনে বাবা কাউসার আহমেদ ড্রাইভ করে উদ্বোধন করেন।

কাউসার আহমেদ বলেন, আমার মেয়েকে ইউটিউবে দেখা জাপানি ছোট জিপ কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার ছিল না। তাই মেয়ের শখ পূরণ করতে এক মাসের পরিশ্রমে আমি এই গাড়ি তৈরি করেছি। মনে মনে সব সময়ই উদ্যোক্তা মনোভাব এবং সৃজনশীলতা কাজ করতো। ফলে, গাড়ি তৈরি শুরু করার সময় বেসরকারি কোম্পানির ওই চাকরিটি ছেড়ে দেই। মনেপ্রাণে এক মাস কাজ করে সফলতা পেয়েছি। 

২০ মণ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই গাড়িটি বর্তমানে ৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। ৪০ টাকা বিদ্যুৎ খরচে এটি যায় ১৩০ কিলোমিটার। আমি এটা নিয়ে আরও কাজ করতে চাই। বাণিজ্যিকভাবে কাজ করা গেলে আড়াই লাখ টাকার এই গাড়ি আমি ২ লাখ টাকায় বানিয়ে দিতে পারবো। কাজের সুযোগ চাই, বলেন তিনি। 

কাউছার আরও বলেন, দেশের জন্য কিছু করতে চাই। কিন্তু টাকা-পয়সা না থাকায় পারি না। সরকারের অনুমতি ও সহযোগিতা পেলে আমার শখের জিপ গাড়িটি আমি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করতে চাই। এতে মধ্যম আয়ের মানুষ অল্প টাকায় গাড়িটি কিনতে পারবেন। পাশাপাশি বেকার যুবকরা তাদের বেকারত্ব দূর করতে পারবে।

কাউসার আহমেদের মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া রাদিয়া ইসলাম বলেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাবাকে আমি ছোট জিপ গাড়ির কথা বলি। তারপর বাবা এই গাড়ি বানায়। এখন বাবা আমাকে গাড়িতে চড়িয়ে ঘুরতে নিয়ে যান। আমার অনেক ভালো লাগে।

স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল্লাহ বলেন, কাউছার অত্যন্ত মেধাবী। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় ও মেধা দিয়ে একটি অত্যাধুনিক জিপ গাড়ি তৈরি করে স্থানীয়দের নজর কেড়েছে। গাড়িটি দেখতেও চমৎকার। প্রতিদিন লোকজন এটা দেখতে আসেন।

ঘোড়াশাল পৌর মেয়র আল মুজাহিদ তুষার বলেন, কাউসারের সৃজনশীলতাকে আমি সম্মান জানাই। আমি নিজেও গাড়িটিতে চড়েছি। সে যদি বাণিজ্যিক আকারে কাজ করতে চায়, তাকে আমরা পৌরসভা থেকে যথাযথ সহযোগিতা করবো। বিভিন্ন গাড়ি তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো আমি।

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়