ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জমি বিক্রির টাকায় ১৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যের সড়ক 

ফরাজী মো. ইমরান, পটুয়াখালী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  
জমি বিক্রির টাকায় ১৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যের সড়ক 

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় জমি বিক্রির টাকায় ১৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি মাটির সড়ক নির্মাণ করেছেন কামাল হোসেন নামের এক কৃষক। উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামে প্রায় ১৫ দিন ধরে স্কেভেটর ও শ্রকিক দ্বারা তিনি সড়কটি নির্মাণ করেন। এতে ভোগান্তি লাঘব হয়েছে ওই এলাকার প্রায় ২৫০ পরিবারের। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বেশির মানুষ কৃষক। ওই ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামে সড়ক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হতো কৃষকসহ সাধারণ মানুষদের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে আন্ধারমানিক নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যেতো এলাকাটি। এতে অনাবাদি থাকতো কৃষকের জমি। এছাড়া স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ গর্ভবতী মায়েদের যাতায়াতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হতো। এসব মানুষের দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে সকড়টি নির্মাণের উদ্যোগ নেন কৃষক কামাল হোসেন। 

কৃষক কামাল হোসেন নিজের ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করে সড়কটি নির্মাণ করেন। ১৪ ফুট প্রস্থ ও ১৪ ফুট উঁচু এ সড়কটি নির্মাণে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। তার এ কাজে স্থানীয়রাও শ্রমিক হিসেবে সহযোগিতা করেছেন। 

কুমিরমারা গ্রামের বাসিন্দা সাইয়েদ মিয়া বলেন, ‘আগে এখানে একটি ভেড়ির মতো (ছোট সড়ক) ছিলো। এখান থেকে একজন মানুষ হাটাচলা করতে খুবই কষ্ট হতো। এছাড়া জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সবই তলিয়ে থাকতো। আমরা বারবার মেম্বর চেয়ারম্যানের কাছে গেছি, এমনকি মানববন্ধন করেও রাস্তাটি নির্মাণ করাতে পারিনি। পরে কৃষক কামাল হোসেন এই রাস্তাটি নির্মাণ করেছেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি।’ 

একই এলাকার অপর বাসিন্দা সুলতান মিয়া বলেন, ‘আমদের কুমিরমারা গ্রামে সবচেয়ে চেয়ে সবজি চাষ হয়। এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক না থাকার কারণে আমাদের সবজি বাজারে পৌঁছাতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন এই সড়কটি নির্মাণের ফলে আর সমস্যা হবে না। কামাল হোসেনের এই মহতী কাজের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই।‘ 

কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে আমি এই ভেড়ি (ছোট সড়ক) দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন এক গর্ভবতী মাকে একটি ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। ভেড়ির অবস্থা এতটা খারাপ ছিলো যে, ভ্যানটি হঠাৎ বিলের মধ্যে পড়ে যায় এবং ওই গর্ভবতী মা ওখানে বসেই সন্তান প্রসব করেন। যেটা দেখে আমার খুবই খারাপ লেগেছে। তখনই আমি নিজ থেকেই পন করি ওই সড়কটি নির্মাণ করে দেবো। পরে আমার নিজের ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ করেছি।’  

নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন, ‘কৃষক কামাল হোসেন সড়ক নির্মাণে যে মহতী কাজ করেছেন তাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে ধন্যবাদ জানাই। তার মতো সমাজের যারা বিত্তবান আছে তাদের সবাইকে এসব সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়