ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সীমান্ত সড়ক: বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের দৃশ্যপট

বিজয় ধর, রাঙামাটি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৫:১৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সীমান্ত সড়ক: বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের দৃশ্যপট

দুর্গমতার কারণে পার্বত্য  চট্টগ্রামকে এক সময় পিছিয়ে পড়া অঞ্চল বলা হলেও বর্তমান সরকারের আমলে এই অঞ্চলের নবযুগের সূচনা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সড়ক যোগাযোগে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দৃশ্যপট বদলে দিতে বর্তমান সরকার ২০১৯ সাল থেকে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের সূচনা করে। 

সীমান্ত সড়ককে ঘিরে মানুষ এখন নতুন  ভাবে স্বপ্ন বুনছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, তথ্য প্রযুক্তির, পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তনে  সীমান্ত সড়ক গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা রাখবে বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কারণে পাহাড়ি জনপদগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। সড়ক নির্মাণের কারণে ভারত- বাংলাদেশের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যর প্রসার ঘটবে তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলটি সমৃদ্ধশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স  এর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার  কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৬, ২০ এবং এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে। সীমান্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১০৩৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে একনেকে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রকল্পটির  প্রথম পর্যায়ের কাজের মধ্যে ৯৫কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন। এবং এ বছরে প্রকল্পটির আরও ১৩২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। যা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শেষ হবে। অবশিষ্ট ৯০ কিলোমিটার কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে সম্পন্ন করা হবে বলেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার মিতিঙ্গাছড়ি এলাকার বাসিন্দা সুমন চাকমা  বলেন, ‘সীমান্ত সড়ক হওয়ার আগে কেউ অসুস্থ হলে রোগীকে এখান থেকে হাসপাতালে নিতে খুবই কষ্ট করতে হতো। বর্তমানে আমরা দুই ঘণ্টার মধ্যে রাজস্থলী সদর হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যেতে পারি। 

একই উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার জয়নুল তালুকদার বলেন, রাজস্থলী উপজেলার মধ্যে সীমান্ত সড়ক হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি। এক সময় রাজস্থলী উপজেলা তেমন পরিচিত লাভ করেনি। এখন সীমান্ত সড়কের ফলে রাজস্থলী প্রত্যেকটা মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।

ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার অজয় ত্রিপুরা বলেন, আমরা মিতিঙ্গাছড়ি থেকে রাজস্থলী সদরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। সীমান্ত সড়ক হওয়ার ফলে সেই দূরত্বে আমাদের অনেকাংশে কমে গেছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা রাজস্থলী সদর থেকে শুরু করে চন্দ্রঘোনা লিচু বাগান ও চট্টগ্রাম পৌঁছে যেতে পারি।   

রাজস্থলীর ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা বলেন, সীমান্ত সড়ক হওায়ার কারণে দুর্গম এলাকার জনগণ বর্তমানে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে  বিভিন্ন জিনিষপত্র রাজস্থলী সদরে এনে বিক্রি করতে পারছে। শুধু রাজস্থলী উপজেলা নয় জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি উপজেলার মানুষও এ সড়কের ফলে উপকৃত হবে। ভবিষ্যতে এই সড়ক পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয়রা যেমন আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন তেমনি বর্তমান সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন তারা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী এ সীমান্ত সড়ক তৈরির উদ্যেগ নিয়েছেন। বর্তমানে সীমান্ত সড়ক নির্মাণে সেনাবাহিনী  নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে কাজ করছে।

২৬ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম মুহায়মিন বিল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রদান করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলস প্রচেষ্টায় সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি গুনগত মান নিশ্চিত করে সম্পন্ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের মাঝামাঝি প্রকল্পটি শেষ করা হবে। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং এ প্রকল্পে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের মনোবল উন্নত করার জন্য  সেনাবাহিনী প্রধান প্রায়ই পরিদর্শনে আসেন।  

তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্প চলাকালীন আমরা অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। প্রথমত, প্রকল্পটি অনেক দুর্গম এলাকাতে হওয়ায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়াতে সেনাদের কাজ করতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখে হতে হয়। এছাড়াও এখানে নির্মাণ সামগ্রী এবং শ্রমিকেরও সঙ্কট রয়েছে। এরপরও এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে প্রকল্প সম্পন্ন করবে। সীমান্ত সড়কের পুরো কাজ বাস্তবায়ন হয়ে গেলে পার্বত্যাঞ্চল আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশের অর্থনীতিতে পার্বত্যাঞ্চল নতুন মাত্রা যোগ করবে। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়