ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে ৭৮ হাজার মে.টন সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভবনা

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৬:৩৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
লক্ষ্মীপুরে ৭৮ হাজার মে.টন সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভবনা

সয়াবিন গাছ

সয়াবিন উৎপাদনের জন্য লক্ষ্মীপুর জেলা সবার কাছে সয়াল্যান্ড হিসেবে পরিচিত। দেশে মোট উৎপাদিত সয়াবিনের ৮০ শতাংশ চাষাবাদ হয় এ জেলাতে। বিশেষ করে জেলার কমলনগর এবং রামগতি উপজেলাতে সবচেয়ে বেশি সয়াবিনের আবাদ হয়।

চলতি মৌসুমেও লক্ষ্মীপুরে শুরু হয়েছে সয়াবিনের আবাদ। জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই কৃষকরা তাদের জমিতে সয়াবিনের বীজ রোপণ করতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে অনেক এলাকার জমিতে দেখা মিলতে শুরু করেছে সয়াবিনের কচি গাছ। কৃষকরা সেগুলো পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বর্তমানে। 

এদিকে সয়াবিন চাষিদের যে কোনো প্রয়োজনে সহযোগীতা করে যাচ্ছে জেলা কৃষি বিভাগ। প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। সারিবদ্ধভাবে বীজ রোপণ এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের সয়াবিন চাষাবাদে উৎসাহ দিচ্ছে তারা। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ১.৯ মেট্রিক টন থেকে ২ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে এ অঞ্চলে এবার প্রায় ৭৮ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত মৌসুমে সয়াবিন আবাদ হয়েছিল ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে।

এদিকে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হবে বলে জানায় কৃষক এবং কৃষি বিভাগ। চাষকৃত সয়াবিনের জমি উর্রব থাকায় ওই জমিতে পরবর্তীতে ধানের ফলনও ভালো হবে। তবে, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে গত কয়েক বছর থেকে সায়বিন চাষাবাদে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। ফলে সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে সয়াবিনের বীজ রোপণ এবং স্বল্প মেয়াদী সয়াবিনের চাষাবাদে উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

সদর উপজেলার চররমনী মোহনের চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক কবির বলেন, ‘সয়াবিন চাষাবাদে অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম হয়। আমরা রবি মৌসুমে সয়াবিন চাষাবাদে বেশি ঝুঁকছি। আমন ধান কাটার পরপরই জমি চাষ দিয়ে সয়াবিনের বীজ রোপণ করা হয়। এই ফসল চাষাবাদে সার এবং ওষুধ খরচ খুব কম লাগে।’ 

একই এলাকার কৃষক সফিক উল্যা বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আমি ১০ একর জমিতে দেশি জাতের সয়াবিনের বীজ রোপণ করেছি। ক্ষেতে চারা গজিয়েছে। ক্ষেত থেকে আমন ধান কাটার পর জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে দুই চাষ দেওয়ার পর জমি শুকিয়ে বীজ ছিটিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর পুনরায় ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিয়েছি। আগাছা নির্মূল, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করেছি। গাছ বড় হলে একবার নিড়ানি দেবো।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সারিবদ্ধভাবে সয়াবিন চাষ করতে খরচ এবং সময় বেশি লাগে। তাই ছিটিয়ে সয়াবিনের বীজ রোপণ করেছি। আর এ এলাকার জমিগুলো মেঘনা নদীর খুব কাছাকাছি হওয়ায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে হাইব্রিড জাতীয় সয়াবিন গাছ টিকতে পারবে না। তাই দেশি জাতের সয়াবিনের আবাদ করেছি।’ 

সয়াবিন লাভজনক ফসল। খরচও কম হয়। আর কয়েক বছর থেকে সয়াবিনের ভালো দামও পাচ্ছি। তাই চরের জমিতে অন্যান্য ফসল চাষ না করে সয়াবিনের চাষ করি বলেও জানান ওই কৃষক। 

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ থেকে এ জেলার ৬ হাজার ৭০০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে বীজ এবং সার দেওয়া হয়েছে। সয়াবিনের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি। কৃষকরা যাতে সারিবদ্ধভাবে এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ রোপণ সেই লক্ষ্যে হাইব্রিডের মধ্যে বিইউ-১, বিইউ-২, বারি-৬, বীনা-৫ ও বীনা-৬ জাতের সয়াবিন রয়েছে। এগুলোতে ফলন ভালো হয়। কোনো কোনো জাতের সয়াবিন হেক্টরে সাড়ে ৩ থেকে ৪ টন ফলন পাওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিইউ-১ জাতের সয়াবিন রোপণের পর ফলন আসতে ৮০ দিন সময় লাগে। যেখানে দেশি জাতের সয়াবিনের ফলন উঠতে সময় লাগে ১০০ দিনের মতো। যেসব সয়াবিনে সময়কাল কম লাগে, সেগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে না। তাই সঠিক সময়ে পাকা সয়াবিন ঘরে তোলা সম্ভব।’ 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়