ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আলুর চিপসে স্বাবলম্বী কয়েক শ পরিবার

মো. শামীম কাদির, জয়পুরহাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৪, ৮ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১৮:০২, ৮ এপ্রিল ২০২৩
আলুর চিপসে স্বাবলম্বী কয়েক শ পরিবার

আলুর চিপস খেতে কে না ভালোবাসেন। মুচমুচে আলুর চিপস পছন্দ ছোট থেকে বড় সবার। এই একটা খাবার যে কোনো সময় মানুষ খেতে পছন্দ করেন। আর এই খাবারটি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েক  শ পরিবার। 

প্রায় ২৫ বছর ধরে এই গ্রামগুলোর বাসিন্দারা আলু দিয়ে চিপস তৈরি করে আসছেন। কাজের ফাঁকে আলুর চিপস তৈরি করে পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে ভূমিকা রাখছেন দরিদ্র নারী-পুরুষরা। 

আরো পড়ুন:

আলু মৌসুমের তিন মাস কঠোর পরিশ্রমে তৈরি করা এসব চিপস বিক্রি হয় ঢাকাসহ সারা দেশে। শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামবাসী প্রথমে এ ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে চিপস তৈরির প্রসার ঘটেছে আশপাশের কয়েক গ্রামে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলুর উৎপাদন মৌসুম শুরুর পর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাস কঠোর পরিশ্রম করে করে শত শত টন আলুর চিপস তৈরি করেন গ্রামবাসী। নারীরা সংসারের সব কাজের ফাঁকে এই ব্যবসা করে সংসারের অভাব দূর করছেন।

সরেজমিনে জেলার আক্কেলপুর উপজেলার শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামসহ পাশের সাতটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ নারী-পুরুষর মিলে চিপস তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কেউ আলু সিদ্ধ করছেন,কেউ আলু কাটছেন, আবার কেউ কাটা আলুর চিপসগুলো রোদে শুকানোর জন্য খোলা আকাশের নিচে বস্তার ওপর বিছিয়ে রাখছেন। চিপস শুকানোর জন্য গ্রামবাসীরা ব্যবহার করেন নদীর পাড় ও মাঠের পরিত্যক্ত জমি। রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় আলুর চিপস। যা তেলে ভেজে মুখরোচক খাবার হিসেবে বিক্রি হয়। কঠোর পরিশ্রম হলেও চাহিদা বেশি হওয়ায় গ্রামে দিন দিন এই চিপস তৈরির প্রসার ঘটছে। 

কথা বলে জানা যায়, এক মণ চিপস তৈরি করতে পাঁচ মণ আলুর প্রয়োজন হয়। আলুর দাম ও আনুসাঙ্গিক খরচসহ এক মণ চিপস বানাতে প্রায় ২৫০০  টাকা খরচ হয়। যা বিক্রি হয় ৪ হাজার টাকা দরে। আর এজন্য সময় লাগে দুই দিনের মতো।

চিপস তৈরির কারিগররা জানান, আলুর চিপসের অনেক জনপ্রিয়তা আছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারা বছর ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এই চিপস সরবরাহ করা হয়। চিপস তৈরিতে পরিশ্রম হলেও বাজার ভালো থাকায় লোকসানের মুখ দেখতে হয়নি কাউকে । অন্যদিকে যাদের পুঁজি বেশি তারা বেশি করে আলু কিনে চিপস সংরক্ষণ করেন।

শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের আলুর চিপস ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেখে চিপস তৈরির প্রসার ঘটেছে আশপাশের কয়েক গ্রামে। দিন-রাত তিন মাসের পরিশ্রমে তৈরি করা চিপস বিক্রি করে সংসার চলে সারা বছর। এক মণ চিপস বিক্রি করে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মতো লাভ হয়।’ 

কেশবপুর গ্রামের জাবেদা বেগম বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। বেশি ট্যাকা না থাকায় হামরা বেশি করি আলু কিনতে পারি না।বেসরকারি সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চলছে এ ব্যবসা। সরকার যদি কিস্তিতে ঋণ দেয় তাহলে ভালোই হতো।’
 
চকবিজলি গ্রামের হাফিজার রহমান বলেন, ‘বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে এ পেশায় এখন খুব একটা লাভ হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সহযোগীতা পেলে চিপস তৈরির প্রসারতা বেড়ে যাবে।’ 

জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিসের সভাপতি আহসান কবীর এপ্লব বলেন, ‘আক্কেলপুর উপজেলার সাতটি গ্রামে অধিকাংশ নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে আলুর চিপস তৈরি করেন। পুরুষরাও তাদরে সহযোগিতা করেন। এই চিপস তৈরি করে সাবলম্বী হচ্ছেন দরিদ্র পরিবারের মানুষরা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা চিপস তৈরির জন্য কৃষকের কাছ থেকে বড় বড় আলু বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে কিনে থাকেন। এতে কৃষকেরাও আলুর ন্যায্যামূল্য পাচ্ছেন। যদি কেউ আলুর চিপস তৈরির ব্যবসার জন্য ঋণ নিতে চান তাহলে তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়