ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যষ্টিমধু কেন খাবেন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১১, ১৭ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যষ্টিমধু কেন খাবেন?

যষ্টিমধুর নাম শুনেই অনেকের কাছে এটিকে চিরচেনা মধুর মতো মনে হতে পারে, আসলে কিন্তু তা নয়। যষ্টিমধু হচ্ছে গাছের মূল বা শিকড়, কিন্তু মধু না হলেও এ শিকড়টি মধুর মতো স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকার করে।

শতশত বছর ধরে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার ঘরোয়া সমাধান হিসেবে যষ্টিমধু ব্যবহার করা হচ্ছে। এ শিকড়ে অনেক বায়োঅ্যাক্টিভ কম্পাউন্ড রয়েছে, কিন্তু এটি যে উপাদানটির জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত তা হচ্ছে গ্লাইসিরাইজিক অ্যাসিড। বিভিন্ন ফর্মে যষ্টিমধু পাওয়া যায়, যেমন- নির্যাস, পাউডার ও চা। এ প্রতিবেদনে যষ্টিমধুর কিছু বিস্ময়কর উপকারিতা দেয়া হলো।

* পেটের সমস্যায় আরাম দেয়
বুকজ্বালা, পাকস্থলির আলসার, কোলাইটিস, গ্যাস্ট্রাইটিস, পাকস্থলির ভেতরের স্তরের প্রদাহ ও পরিপাকতন্ত্রের ওপরের স্তরে প্রদাহজনিত অসুস্থতায় যষ্টিমধু ব্যবহার করা হয়, বলেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ডায়েটিশিয়ান জুলি আপটন। যষ্টিমধু হচ্ছে প্রশান্তিদায়ক প্রদাহরোধী, তাই এটি আলসারেটিভ কোলাইটিস বা আন্ত্রিক প্রদাহ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। এভিডেন্স-বেসড কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড আলসারেটিভ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, ডিগ্লাইসিরাইজিনেটেড যষ্টিমধু পাকস্থলির আলসার নিরাময়ে কার্যকর।

* স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে
আপনি প্রায়সময় স্ট্রেস বা মানসিক চাপে আচ্ছন্ন হলে যষ্টিমধু সাহায্য করতে পারে। মলিকিউলার অ্যান্ড সেলুলার এন্ডোক্রিনোলজি নামক মেডিক্যাল জার্নালের প্রতিবেদনে আছে, এটি শরীরকে অধিক কার্যকরভাবে স্ট্রেস হরমোন করটিসল নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

* শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে
তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার (যেমন- কাশি বা কফ, গলা ব্যথা, হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিস) চিকিৎসা হিসেবে যষ্টিমধু ব্যবহার করা যেতে পারে, বলেন রিমেডিস ফর মি ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা রেবেকা পার্ক। ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট উপরিস্থ শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন প্রশমিত করতে পারে ষষ্ঠিমুধ। এটি ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা দূর করতে পারে এবং ব্রঙ্কিয়াল স্প্যাজম বা ব্রঙ্কিয়াল টিউবের মাংসপেশির সংকোচনকে শিথিল করতে পারে।

* রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
যষ্টিমধুতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে এবং এটি ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ তন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। ফুড কেমিস্ট্রি নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যষ্টিমধু শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেল দূর করে ও শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করে।

* ত্বককে প্রাণবন্ত করে
আপনি যষ্টিমধুকে অভ্যন্তরীণ অথবা বাহ্যিক যেভাবেই ব্যবহার করেন না কেন, এতে ত্বকের উপকার হয়, বলেন ডা. পার্ক। তিনি যোগ করেন, ‘ষষ্ঠিমধু ত্বকের একজিমা, সোরিয়াসিস, প্রদাহ, সানবার্ন, লালতা ও পায়ের ছত্রাক জনিত অ্যাথলেট’স ফুট নিরাময়ে অবদান রাখে।’ ত্বকের ফোলা ও চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে যষ্টিমধুর নির্যাস থেকে প্রস্তুতকৃত টপিক্যাল সল্যুশন ব্যবহার করতে পারেন।

* দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে
যষ্টিমধু হচ্ছে একটি মাল্টিপারপোজ হার্ব, যা আপনার দাঁত ও মাড়িকেও সুস্থ রাখতে পারে। জার্নাল অব ন্যাচারাল প্রোডাক্টসে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, যষ্টিমধুতে দুটি কার্যকরী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ ঠেকাতে পারে।

অতিরিক্ত যষ্টিমধু সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যষ্টিমধু আপনার ডায়েটে স্বাস্থ্যকর সংযোজন হলেও এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো ভালোকিছুও সীমাতিরিক্ত খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ডা. আপটন বলেন, ‘অত্যধিক যষ্টিমধু খেলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা হ্রাস পেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে, যা হার্টের সমস্যা ও পেশি দুর্বলতার কারণ হতে পারে।’ কিছু শারীরিক সমস্যা (যেমন- কিডনির রোগ, হার্টের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপ) অথবা কিছু ওষুধ (যেমন- হার্টের সমস্যায় ব্যবহৃত ওষুধ) সেবনকালে যষ্টিমধু খাওয়া উচিত নয়, কারণ এ হার্বটি এসব স্বাস্থ্য সমস্যাকে আরো খারাপ করতে পারে অথবা ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে, প্রতিদিন দুই আউন্স করে টানা দুই সপ্তাহ কালো যষ্টিমধু খেলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে, তাই এ হার্বটি একটানা ব্যবহার করবেন না এবং একবারে দুই আউন্সের বেশি সেবন করবেন না।

 

ঢাকা/ফিরোজ
 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়