ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ব্যথা সম্পর্কে যা জানা জরুরি

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২২ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১০:০০, ২২ জানুয়ারি ২০২১
ব্যথা সম্পর্কে যা জানা জরুরি

যেকোনো বয়সে একজন মানুষের ব্যথার অভিজ্ঞতা হতে পারে। ব্যথা অনুভব করলে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই পেইনকিলার সেবন করেন। কিন্তু এটা স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ব্যথা এত বেশি প্রচলিত সমস্যা যে এটা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানার আগ্রহ রয়েছে। এখানে ব্যথা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া হলো।

* অ্যাকিউট ইনজুরি, অর্থাৎ কোথাও আঘাত পেয়ে ব্যথা অনুভব করলে ঠান্ডা সেঁক দিন। এতে রক্তপ্রবাহ, ফোলা ও ব্যথা কমবে। মাংসপেশি ও জয়েন্টকে শিথিল করতে অথবা অনমনীয়তা কমাতে গরম সেঁক দিন। গরম সেঁক দিলে নড়াচড়া করা সহজ হয়।

* গবেষণা বলছে, যেকোনো ১০০ জন লোকের এমআরআই করা হলে তাদের ৯০ শতাংশের মধ্যে অস্বাভাবিকতা ধরা পড়বে। এমনকি তারা ব্যথা অনুভব না করলেও। তাই পিঠে, ঘাড়ে, কাঁধে অথবা অন্য কোথাও ব্যথা অনুভব করলে পরীক্ষা না করেই এটাকে মারাত্মক কিছু ভেবে ভেঙে পড়বেন না।

* সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় সেবনকৃত ওপিওইড পেইনকিলার মস্তিষ্কে পরিবর্তন ঘটিয়ে আনন্দানুভবের ক্ষমতাকে ধ্বংস করতে পারে এবং আরো বেশি ওষুধ ব্যবহারে উদ্দীপ্ত করতে পারে। কিছু গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে, এসব ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে ব্যথা আরো বেড়ে যেতে পারে।

* মৃদু ব্যথা অনুভব করলে ওয়ার্ড গেমস অথবা অন্যান্য পাজল খেলতে পারেন। এতে ব্যথা থেকে মন সরে যাবে। যখন মস্তিষ্ককে কাজে ব্যস্ত রাখবেন, ব্যথা হচ্ছে কি হচ্ছে না খেয়ালে থাকে না। ব্যথা থেকে মন সরানোর আরেকটি উপায় হলো, স্মার্টফোনে বা টেলিভিশনে হাস্যরসাত্মক অনুষ্ঠান দেখা।

* পিঠে ব্যথা অনুভব করলেই তড়িঘড়ি করে পেইনকিলারের ব্যবহার শুরু করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এটা নিজে নিজে চলে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিচের পিঠের প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যথা মেডিক্যাল ইন্টারভেনশন ছাড়াই ১২ সপ্তাহের মধ্যে দূর হয়ে যায়।

* দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভুগলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার কথা ভাবতে পারেন। কিছুদিনের জন্য দুধ জাতীয় খাবার বাদ দিন। ব্যথা কমেছে? এবার আবার দুধ জাতীয় খাবার খাওয়া শুরু করুন। ব্যথা কি বাড়ছে? উত্তর হ্যাঁ হলে এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন। গম, লাল মাংস, খোলসে আবৃত মাছ, সাইট্রাস ফল, চিনাবাদাম, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

* ব্যথা কমাতে ওষুধই খেতে হবে এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। ওষুধের বিকল্পও চেষ্টা করে দেখতে পারেন, যেমন- ম্যাসাজ, ফিজিক্যাল থেরাপি, কায়রোপ্র্যাক্টিস, আকুপাঙ্কচার, স্পাইনাল কর্ড স্টিমিউলেটর ও বিহেভিয়ারাল থেরাপি। এছাড়া পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ, যথেষ্ট ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চা ও মানসিক চাপ কমানোর কথাও ভুলবেন না।

* ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ব্যাক সার্জারি করবেন কিনা আবার ভেবে দেখুন। একজন চিকিৎসক বলেন, আমাদের কাছে ১,০০০ জনেরও বেশি রোগী জানান যে ব্যাক সার্জারিটা না করলেই মনে হয় ভালো হতো। কনজ্যুমার রিপোর্টসের জরিপে মাত্র ৬০ শতাংশ রোগী ব্যাক সার্জারি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, অন্যরা অসুবিধার কথা জানিয়েছেন।

* ব্যথা কেবল শারীরিক নয়, মানসিক বিষয়ও। আপনার মন ব্যথাতে পড়ে থাকলে ব্যথা কমবে তো না, উল্টো বেড়ে যাবে। তাই মনকে যথাসম্ভব ব্যথা থেকে বিচ্যুত করতে হবে। ব্যথার কথা ভুলে থাকতে সাইকোথেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, মেডিটেশন অথবা এমনকি সেলফ-হিপনোসিস করতে পারেন।

* সঠিক শরীরচর্চাতে ব্যথা কমে যেতে পারে, বিশেষ করে প্রতিসপ্তাহে পাঁচবার অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করলে। সেইসঙ্গে নিয়মিত ইয়োগা করলে আরো উপকার পেতে পারেন। কেবল শরীরচর্চা করলেই হবে না, ঘুমের মানোন্নয়নও করতে হবে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে, অন্যথায় ব্যথা বেড়ে যাবে।

* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই পেইনকিলার খেলে তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারেন। তাই ব্যথায় ভুগলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভালো। তিনি প্রয়োজনে স্টুল সফেনার (মল নরমকারী ওষুধ) প্রেসক্রাইব করবেন। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে পেইনকিলার ব্যবহারে কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাই নিজেই ব্যথার চিকিৎসক হতে যাবেন না।

* স্পাইনাল স্টেনোসিস শনাক্ত হলে, অর্থাৎ মেরুদণ্ডের নালী সরু হয়ে গেলে আপনার চিকিৎসক জানাতে পারেন যে, সার্জারি না করলে প্যারালাইজড হয়ে যাবেন। কিন্তু গবেষণা মতে এটা সত্য নয়। সমস্যাটি সমাধানের আরো উপায় রয়েছে। সেসবে কাজ না হলে তখন শেষ উপায় হিসেবে সার্জারি করতে পারেন।

* দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগে ভুগলে চিকিৎসাতে ১০০ শতাংশ ব্যথামুক্ত হয়ে যাবেন এমন গ্যারান্টি কোনো চিকিৎসক দিতে পারবে না, বিশেষ করে পিঠ ও হাঁটুতে ব্যথার ক্ষেত্রে। অনেকক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ব্যথা কমলেই সেটাকে চিকিৎসকেরা চিকিৎসা সফল হয়েছে বলে ধরে নেন।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়