ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জন্মদাগ কী কেন হয়?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৪:৫৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
জন্মদাগ কী কেন হয়?

জন্মদাগ হলো জন্ম বা জীবনের প্রথম কয়েক সপ্তাহ থেকে ত্বকে দৃশ্যমান এক ধরনের বিবর্ণতা। মুখমণ্ডল বা শরীরের যেকোনো স্থানে জন্মদাগ থাকতে পারে। রঙ, আকার-আকৃতি ও উপস্থিতিতে জন্মদাগের বৈচিত্র্য রয়েছে। 

কিছু জন্মদাগ স্থায়ী এবং সময় পরিক্রমায় বড় হতে থাকে। অন্যান্য জন্মদাগ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে মিলিয়ে যায়। অধিকাংশ জন্মদাগই নিরীহ প্রকৃতির, তবে কোনো কোনো জন্মদাগ রোগ নির্দেশক হতে পারে। শারীরিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে কিছু জন্মদাগ অপসারণ করা যেতে পারে।

কেন জন্মদাগ হয়? এ প্রসঙ্গে একটি মিথ বা ভুল ধারণা হলো- গর্ভবতী নারী যথেষ্ট পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার না খেলে গর্ভস্থ শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থায় কি করেন অথবা করেন না, সে অনুযায়ী শিশুর জন্মদাগ সৃষ্টি হয় না। প্রকৃতপক্ষে, জন্মদাগের আবির্ভাবের রহস্য এখনো অজানা।

জন্মদাগ কি বংশগত? কিছু জন্মদাগের ক্ষেত্রে এ প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশই বংশগত নয়। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে- শুধু সেই দাগই জন্মদাগ হিসেবে বিবেচিত হবে যা জন্ম থেকেই বিদ্যমান অথবা জন্মগ্রহণের কিছু পরেই বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে একজন মানুষের শরীরে তিলের মতো দাগের উদয় হতে পারে, কিন্তু তখন আর একে জন্মদাগ বলা যাবে না। 

জন্মদাগের ধরন

অধিকাংশ জন্মদাগ দুটি ক্যাটাগরির একটিতে পড়ে। উভয় ক্যাটাগরির পৃথক কারণ রয়েছে। এই দুটি ক্যাটাগরি হলো: ভাস্কুলার জন্মদাগ এবং পিগমেন্টেড জন্মদাগ। ত্বকের কোনো স্থানের রক্তনালী যেভাবে গঠিত হওয়া উচিত সেভাবে না হলে ভাস্কুলার জন্মদাগ হয়। অন্যদিকে শরীরের একটি স্থানে প্রচুর পিগমেন্ট সেল বা রঞ্জক কোষ থাকলে পিগমেন্টেড জন্মদাগ হয়। পিগমেন্ট সেল বা রঞ্জক কোষই ত্বককে প্রাকৃতিক/স্বাভাবিক রঙ দেয়। কিন্তু খুব বেশি হয়ে গেলে স্বাভাবিকতা আর বজায় থাকে না।

পিগমেন্টেড জন্মদাগের ধরন

ত্বকের একটি অংশে অন্যান্য অংশের তুলনায় রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতি বেশি হলে পিগমেন্টেড জন্মদাগ হয়। এর দুই রকম ধরন রয়েছে। মোলস (কনজেনিটাল নেভি) এবং ক্যাফে অউ লেইত স্পটস ও মনগোলিয়ান ব্লু স্পটস। কনজেনিটাল নেভি বা জন্মগত তিলের রঙ পিংক, হালকা বাদামী অথবা কালো হতে পারে। এগুলো বিভিন্ন আকৃতি এবং সমতল বা উঁচু প্রকৃতির হতে পারে। সাধারণত জন্মগত তিল গোলাকার হয় এবং সময়ের আবর্তনে দূর হয়ে যায়। কিন্তু অন্যগুলো আজীবন থেকে যায়। 

ক্যাফে অউ লেইত স্পটস হলো ফ্রেঞ্চ ভাষা। বাংলা অর্থ- দুধের সঙ্গে কফি। এই জন্মদাগ কিছুটা ডিম্বাকৃতির হয়। জন্ম থেকে প্রাথমিক শৈশবের যেকোনো সময় এই জন্মদাগ আবির্ভূত হতে পারে। এগুলো বড় আকারের হলেও প্রায়ক্ষেত্রে একসময় মিলিয়ে যায়। 

মনগোলিয়ান ব্লু স্পট হলো সমতলাকৃতির নীলাভ ধূসর জন্মদাগ। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডার্ক স্কিন বা কালো ত্বকের বাচ্চাদের শরীরে দেখা যায়। এগুলো মারাত্মক কিছু নয়। এই দাগকে কালশিটে মনে করে ভুল হতে পারে। সাধারণত নিচের পিঠ ও নিতম্বে মনগোলিয়ান ব্লু স্পটের আবির্ভাব ঘটে। শিশুর বয়স চার বছরের মধ্যে দাগটি সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়।

ভাস্কুলার জন্মদাগের ধরন

অনেক সময় কিছু অতিরিক্ত রক্তনালী একসঙ্গে দলা পাকিয়ে যায়, যা ত্বকে দৃশ্যমান হতে পারে। একে ভাস্কুলার জন্মদাগ বলা হয়। প্রায় ৪০ শতাংশ নবজাতকের শরীরে জন্মদাগটি থাকে। ভাস্কুলার জন্মদাগের ধরন হলো: স্যালমন প্যাচেস, হেমানগিওমাস ও পোর্ট-ওয়াইন স্টেইন (নিভাস ফ্লামিয়াস)।

স্যালমন প্যাচেস নামক লাল বা পিংক রঙের জন্মদাগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই চোখের মধ্যবর্তী স্থানে, চোখের পাতা ও ঘাড়ে লক্ষ্য করা যায়। হেমানগিওমাস নামক জন্মদাগের রঙ পিংক, নীল অথবা উজ্জ্বল লাল হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রান্তীয় অঙ্গ, মাথা অথবা ঘাড়ে দাগটির আবির্ভাব ঘটে। ছোট ও সমতল আকৃতি নিয়ে হেমানগিওমাসের যাত্রা শুরু হলেও একসময় তা বাড়তে বাড়তে অস্বাভাবিক উঁচু ও বড় হতে পারে। শিশুরা কৈশোরে পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক হেমানগিওমাস দূর হয়ে যায়। শিশুর ত্বকে একাধিক হেমানগিওমাস দেখলে শরীরের অভ্যন্তরেও রয়েছে কিনা পরীক্ষা করা উচিত।

ত্বকের নিচে ছোট ছোট রক্তনালীর গঠনে অস্বাভাবিকতা থাকলে পোর্ট-ওয়াইন স্টেইনস বা নিভাস ফ্লামিয়াস নামক জন্মদাগ হয়। এগুলো সময়ের আবর্তনে মিলিয়ে যায় না এবং চিকিৎসা না করলে আরো কালচে হতে পারে। ত্বকও খুবই কালচে, পুরু অথবা নুড়িময় হতে পারে। 

জন্মদাগের চিকিৎসা

অধিকাংশ জন্মদাগই নির্দোষ প্রকৃতির এবং চিকিৎসা বা অপসারণের প্রয়োজন হয় না। কিছু জন্মদাগের কারণে সৌন্দর্যে অস্বস্তি বোধ হতে পারে। কোনো কোনো জন্মদাগ মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন: স্কিন ক্যানসার। জন্মদাগ অপসারণের পদ্ধতি হলো: লেজার থেরাপি, বিটা-ব্লকার্স, করটিকোস্টেরয়েডস ও সার্জারি।

লেজার থেরাপি দিয়ে পোর্ট-ওয়াইন স্টেইন দূর করা যায়। এই দাগের চিকিৎসা শুরুর দিকে করলে সফলতার সম্ভাবনা বেশি। লেজার থেরাপি জনিত অস্বস্তি কমাতে চিকিৎসক লোকাল অ্যানেস্থেটিক দিতে পারেন। এই চিকিৎসার অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো সাময়িক ফোলা বা কালশিটে। লেজার থেরাপি ব্যবহারে স্থায়ীভাবে জন্মদাগ দূর করা যায়।

সার্জারির মাধ্যমে জন্মদাগ অপসারণের পর স্কার কমাতে টিস্যু এক্সপানশনের প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে অপসারিত জন্মদাগের পাশে সুস্থ ত্বকের নিচে বেলুন প্রবেশ করানো হয়। এতে নতুন সুস্থ ত্বকের বিকাশ হয়। চিকিৎসক যখন প্রয়োজন মনে করবেন ওটা খুলে নেবেন।

ফিরোজ/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়