ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গরুর মাংসে যত উপকার

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ৯ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১৬:৩০, ৯ জুলাই ২০২২
গরুর মাংসে যত উপকার

আগামীকাল রোববার (১০ জুলাই) কোরবানির ঈদ। আমাদের দেশে যে পশুটি সবচেয়ে বেশি কোরবানি দেয়া হয় তা হলো গরু। অনেকেই গরুর মাংস দেখলে আঁতকে ওঠেন। তাদের ধারণা, গরুর মাংস খেলেই ভুগতে হবে। 

আসলে তা কিন্তু নয়। বরং গরুর মাংস খেলে এমনকিছু উপকার পাওয়া যায়, যা সত্যিই চমকে ওঠার মতো। তবে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক হবে না। গরুর মাংস কিভাবে রান্না করা হচ্ছে এবং কি পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে তার ভিত্তিতে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হতে পারে। এখানে স্বাস্থ্যকর উপায়ে সীমিত পরিমাণে গরুর মাংস খাওয়ার কিছু চমকপ্রদ উপকারিতা পুষ্টির আলোকে উল্লেখ করা হলো।

* এল-কারনিটিন: এল-কারনিটিন হলো একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড যা মাংস জাতীয় খাবারে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়। এল-কারনিটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো চর্বি বিপাকে সহায়তা করা। আমাদের শরীর সাধারণ কাজের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে এল-কারনিটিন তৈরি করতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের মাধ্যমে এল-কারনিটিন গ্রহণ বাড়ালে কিছু উপকার পাওয়া যেতে পারে। এল-কারনিটিন হৃদরোগীর অবস্থা ভালো করতে পারে। এটি উচ্চ রক্তচাপ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, নাইট্রিক অক্সাইড ও প্রদাহের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে হৃদরোগের উন্নতি করে। আরেকটি সিস্টেমেটিক রিভিউ বলছে, এল-কারনিটিন হার্ট ফেইলিউরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের মাধ্যমে গৃহীত এল-কারনিটিন টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ফাস্টিং গ্লুকোজ লেভেল ও কোলেস্টেরল প্রফাইল উন্নত করেছে। 

* গ্লুটাথিওন: গ্লুটাথিওন হলো একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেটাকে মাস্টার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণার সারাংশ হলো- খাবার থেকে গৃহীত গ্লুটাথিওন বয়স্কতার নিদর্শন কমায়, আয়ু বাড়ায়, রোগপ্রতিরোধ করে, ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমায় ও রোগদমন তন্ত্রকে শক্তিশালী করে। গ্লুটাথিওন ঘাটতি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে ক্রনিক রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

সার্বিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় গ্লুটাথিওন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীর তিনটি অ্যামাইনো অ্যাসিড (সিস্টেইন, গ্লুটামেট ও গ্লাইসিন) ব্যবহার করে গ্লুটাথিওন তৈরি করে। গরুর মাংসে এসব অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। তাই গরুর মাংস খেলে সিস্টেইন, গ্লুটামেট ও গ্লাইসিন পাওয়া যাবে এবং শরীর মাস্টার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি করবে। এছাড়া গরুর মাংসে যথেষ্ট পরিমাণে প্রি-ফর্মড ডায়েটারি গ্লুটাথিওনও রয়েছে।

* প্রোটিন: শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিন নিশ্চিত করার অনেক কারণ রয়েছে। কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হলো: প্রোটিন হলো শারীরিক মেরামত এবং হাড়-ত্বক-তরুণাস্থি গঠনের বিল্ডিং ব্লক, পর্যাপ্ত প্রোটিন চর্বিহীন পেশি ঘনত্ব অর্জনে সহায়তা করে। ১৭০ গ্রাম চর্বিহীন গরুর মাংসে ৪৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। গরুর মাংসে চর্বি যত কম থাকবে, প্রোটিন তত বেশি থাকবে। বার্ধক্যে চর্বিহীন পেশি ঘনত্ব অর্জন কঠিন বলে অল্প বয়সেই বিষয়টাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। চর্বিহীন পেশি ঘনত্ব ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থেকে সুরক্ষা দিতে পারে, অসুস্থতা বা রোগ সারাতে সাহায্য করে, হাড়কে মজবুত ও সুস্থ রাখে এবং পড়ে যাওয়া ও হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমায়।

* মিনারেল: শরীরে বিভিন্ন ধরনের মিনারেল যোগাতে অন্যতম সেরা উৎস হলো গরুর মাংস। এই একটি মাত্র খাবার থেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে অনেক মিনারেল পেয়ে যাবেন। ১৭০ গ্রাম চর্বিহীন গরুর মাংস থেকে দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রার ৭২ শতাংশ জিংক, ৫২ শতাংশ সেলেনিয়াম, ৩৮ শতাংশ ফসফরাস, ২৬ শতাংশ আয়রন, ১৮ শতাংশ পটাশিয়াম ও ১০ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। এসব মিনারেলের একটি করে উপকারিতা হলো (যথাক্রমে)- রোগদমন তন্ত্রকে শক্তিশালী করে, স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমায়, হাড় ও দাঁতকে মজবুত করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তচাপ স্বাস্থ্যকর সীমায় রাখে এবং মাইগ্রেনের মাথাব্যথা প্রতিরোধ করে। নিয়মিত গরুর মাংস খেয়ে জিংক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস ও আয়রনের অভাব জনিত উপসর্গ প্রশমন করা যাবে, যেমন- আয়রনের ঘাটতি জনিত রক্তশূন্যতার উপসর্গ। প্রতিবছর রক্তশূন্যতায় হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। কাজেই এই স্বাস্থ্য সমস্যাকে অবহেলা করা যাবে না। গরুর মাংসে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্যালসিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজও রয়েছে।

* কারনোসিন: গরুর মাংস খাওয়ার আরেকটি সুবিধা হলো, এতে প্রচুর পরিমাণে কারনোসিন রয়েছে। কারনোসিনের সর্বোচ্চ উৎসগুলোর একটি হলো গরুর মাংস। এটা একটি শক্তিশালী অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা মানুষের স্বাস্থ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। মুরগির মাংসের তুলনায় গরুর মাসে ৫০ শতাংশ বেশি কারনোসিন রয়েছে। 

* ভিটামিন: গরুর মাংসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি রয়েছে, বিশেষ করে বি ভিটামিনের উপস্থিতি বেশি। ১৭০ গ্রাম গরুর মাংসে দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রার ৮২ শতাংশ ভিটামিন বি১২, ৫০ শতাংশ ভিটামিন বি৩, ৩৬ শতাংশ ভিটামিন বি৬, ১৮ শতাংশ ভিটামিন বি২ ও ১৪ শতাংশ ভিটামিন বি৫ রয়েছে। এছাড়া গরুর মাংসে অল্প পরিমাণে ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে রয়েছে। ভিটামিন বি১২ একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং একমাত্র প্রাণীজ খাবারেই পাওয়া যায়। এই ভিটামিন ত্বককে প্রাণবন্ত করে, মেজাজকে ইতিবাচক রাখে, ঘুমের মান বাড়ায় এবং স্নায়ুকোষ মেরামত/পুনর্গঠন করে। ভিটামিন বি১২ ঘাটতি বিষণ্নতা ও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

* কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড: সিএলএ নামেও পরিচিত কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড হলো প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ট্রান্স ফ্যাট। ট্রান্স ফ্যাট নাম শুনেই ভীত হবেন না, এটা আর্টিফিশিয়াল ট্রান্স ফ্যাটের মতো ক্ষতি করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শরীরের চর্বিও কমিয়ে থাকে। সিএলএ এর শীর্ষ উৎস হলো- মাংস ও দুগ্ধজাত খাবার। ভেড়া ও পনিরের পর গরুর মাংসেই বেশি সিএলএ পাওয়া যায়। ঘাস খাওয়া গরুতে সিএলএ এর পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।

* ক্রিয়েটিন: আমাদের অনেকেই ক্রিয়েটিন সাপ্লিমেন্ট সম্পর্কে অবগত আছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, গরুর মাংসেও ক্রিয়েটিন রয়েছে? সাধারণত ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ৩৫০ মিলিগ্রাম ক্রিয়েটিন থাকে। ক্রিয়েটিনের উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা হলো- এক্সারসাইজ পারফরমেন্স বৃদ্ধি করে, পেশির গঠন ও বিকাশে সহায়তা করে, পেশিকে শক্তিবহুল করে ও পেশিকে বলিষ্ঠ করে।

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়