ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সাড়া দিচ্ছেন না নির্বাচিত কৃষক, সরকারিভাবে ধান কেনায় গতি কম

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৯, ৩০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সাড়া দিচ্ছেন না নির্বাচিত কৃষক, সরকারিভাবে ধান কেনায় গতি কম

হাওর অঞ্চলসহ সারা দেশে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হয়েছে। কিন্তু লটারিতে নির্বাচিত কৃষকরা ধান বেচতে গুদামে না আসায় বোরো ধান কেনার ক্ষেত্রে গতি নেই।

সূত্র জানায়, বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। সরকার ধান-চাল মিলে এবার সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

লটারিতে নির্বাচিত কৃষকদের বাইরে ফড়িয়া, স্থানীয় মিল মালিক, অন্য কোনো কৃষকের কাছ থেকে বোরো ধান না কেনার সিদ্ধান্ত হয়। লটারিতে নির্বাচিত কৃষকের কাছ থেকে বোরো ধান ২৬ টাকা কেজি দরে কেনার কথা বলা হয়। কিন্তু স্থানীয় বাজার বোরো ধান সাড়ে ২৬ টাকা থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করতে পারায় তারা সরকারি গুদামে ধান নিয়ে আসছেন না। তাই গত ২৬ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। সিদ্ধ চাল ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ও আতপ চাল ৩৫ হাজার মেট্রিক টন কেনা হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ধান-চালের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরকার চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল কিনবে। ধান-চাল মিলে এবার সরকারিভাবে সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনার ভয়ে ও স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় জেলা-উপজেলার নির্বাচিত কৃষকরা ধান নিয়ে  সরকারি গুদামে আসছেন না। বাজারে একটু  বেশি দাম পাওয়ায় সরকারি গুদামের ধান বিক্রি না করে তারা বাজারে বিক্রি করছেন। এ কারণে সরকারিভাবে ধান কেনার গতি কম। বিষয়টি মন্ত্রী-সচিবকে  জাননো হয়েছে।  দ্রুত এ বিষয়ে  নির্দেশনা আসবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি টার্গেট পূরণে তালিকার বাইরে থাকা ফড়িয়া, স্থানীয় মিল মালিকসহ অন্য কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনা হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আমদানি করে মজুদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রকৃত কৃষকদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে তাদের তালিকা ইউনিয়ন অফিসে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো ফড়িয়ার কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে না। নির্বাচিত কৃষকদের ফোন করে ও বাড়ি গিয়ে তাগাদা দিলেও তারা ধান-চাল নিয়ে গুদামে আসছেন না।  তাই  ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলায় জেলায়  নির্দেশনা দ্রুত যাচ্ছে। নির্দেশনা থাকবে লটারিতে নির্বাচিত কৃষক না আসলে  স্থানীয় অন্য কৃষক কিংবা ফড়িয়াদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার জন্য। সরকারি এ নির্দেশনা গেলেই ধান কেনার গতি বাড়বে। লক্ষ্যমাত্রা আগামী ১৫ দিনে পূরণ হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচিত কৃষকদের বাইরে অনেকেই ধান-চাল দিতে চায়। অনেক কৃষক সামান্য লাভে সরকারি গুদামে না দিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। অনেকে বেশি লাভের আশায় মজুত রাখছেন।’

কুড়িগ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ‘সরকার ২৬ টাকা কেজিতে ধান কিনছে। আমি স্থানীয় বাজরে ২৭ টাকায় বিক্রি করতে পারছি। একটু দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি গুদামে না দিয়ে বাজারে বিক্রি করছি। যেখানে বেশি দাম সেখানেই বিক্রি করব, এটাই স্বাভাবিক।’

কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ জেলায় ২০ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা  নির্ধারণ করা হলেও  ২০ জুন পর্যন্ত ৩১০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। সিদ্ধ চাল ১৭ হাজার ১২৯ মেট্রিক টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে ২ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন।  আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন, সংগ্রহ হয়েছে ৯০০ মেট্রিক টন। নির্বাচিত কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনা হচ্ছে। নতুন কোনো নির্দেশনা আসলে সেভাবে কেনা হবে।’

খাদ‌্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সরকার ধান কেনার কারণে কৃষক তার ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক কৃষক ধান-চাল বিক্রি করছেন না। তাদের প্রয়োজন হলেই তারা বিক্রি করবেন।  বোরো ধান সংগ্রহের গতি বাড়াতে কর্মকর্তাদের নতুন নির্দেশনা দেওয়া হবে। করোনাভাইরাসের কারণে ধীর গতি হলেও আশা করি, নির্দিষ্টি সময়ে ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’

 

ঢাকা/আসাদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়