বাংলাদেশকে পাত্তা না দিয়ে নিউ জিল্যান্ডের দাপুটে জয়

বিরুদ্ধ কন্ডিশন। কিন্তু অপরিচিত নয় একদমই। চেনা প্রতিপক্ষ। সামর্থ্যও জানাশোনা। নিয়মিত বাউন্স আসবে। শর্ট বল হবে। লাগাতার লাইন ও লেন্থ ধরে বোলিং করে যাবে। কখনো বল সুইং করে ভেতরে ঢোকাবে। কখনো বাইরে নেবে। সবই তো খোলনলচে।
তাহলে ব্যাটসম্যানদের কেন এক ভুল বারবার করবে? কেন ব্যাটসম্যানরা উইকেট উপহার দেবে প্রতিপক্ষকে? তামিম, লিটন, সৌম্য, মিথুনরা কবে উইকেটের গুরুত্ব বুঝবেন!
আরও একবার ব্যাটিংয়ে ফ্লপ বাংলাদেশ। সুপার ফ্লপ বললেও ভুল হবে না। শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে একেবারেই হতশ্রী পারফরম্যান্স। বিশেষজ্ঞ কোনো ব্যাটসম্যানের নুন্যতম লড়াইয়ের মনোভাব নেই। নেই টিকে থাকার মানসিকতা। প্রতি আক্রমণে রান তোলার সাহসও নেই। নেই প্রতিপক্ষকে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সামর্থ্য। বোল্ট, নিশাম, হেনরিদের গতি, সুইং ও বাউন্সে কুপোকাত ব্যাটসম্যানরা। যা কাটিয়ে উঠতে না পারায় ১৩১ রানে অল আউট বাংলাদেশ। সহজ লক্ষ্য তাড়া করে ডানেডিনে নিউ জিল্যান্ড জিতে যায় ৮ উইকেট ১৭২ বল হাতে রেখে। তিন ম্যাচ সিরিজে তারা এগিয়ে ১-০ ব্যবধানে।
২১১তম ওয়ানডে খেলতে নামা তামিম ইকবাল কেন ভাববেন বোল্ট বল সব সুইং করাবেন? বাঁহাতি পেসারের ইনিংসের প্রথম বলটিই ছিল ডেডলি ইয়র্কার। এক বল পর জবাব দিয়েছিলেন ছক্কায় উড়িয়ে। এরপর সুইং করিয়ে সব বল বাইরে টেনেছেন বোল্ট। ব্যাটসম্যানকে পুরোপুরি সেট আপ করিয়েছেন ফ্রন্টফুটে খেলতে। পঞ্চম ওভার করতে এসে অ্যাক্রস দ্য সিম সোজা ডেলিভারী বোল্টের। তাতেই আউট তামিম। জন্মদিনে আনলাকি ১৩ এ বধ বাঁহাতি ওপেনার।
ওই ওভারে সৌম্য পেলেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ডাক। বোল্টকে উইকেট দিলেন আলগা শটে। যেন ফিল্ডারকে ক্যাচ প্র্যাকটিস করালেন। লিটন টুকটাক শটে দ্যুতি ছড়ালেও জীবন পেয়েছিলেন শুরুতে। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। জিমি নিশাম বোলিংয়ে এসে তার উইকেট পান অতি সহজে। বোলারের গতি পরীক্ষা করতে গিয়ে ১৯ রানে উইকেট বিসর্জন দেন লিটন।
টপ অর্ডারে টপাটপ উইকেট যাওয়ায় মিথুন ও মুশফিকের ইনিংস ছিল অতি সাবধানী। রান তোলার থেকে তারা নজর দেন উইকেটে টিকে থাকার। কিন্তু পারেননি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। মুশফিক নিশামের অফস্টাম্পের বাইরের বল পয়েন্টের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ২৩ রানে। মিথুন রান আউট হন মাহমুদউল্লাহর স্ট্রেইট ড্রাইভে। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা যেখানে ব্যর্থ সেখানে দুই মেহেদীর করার ছিল সামান্য। তবুও অভিষিক্ত মেহেদী এক ছক্কা ও চারে কিছুটা স্কোর বাড়িয়ে দলের রান একশর কাছাকাছি নিয়ে যান। এরপর আত্মাহুতি শটে উইকেট হারান। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর ২৭ ও তাসকিনের ১০ রানে বাংলাদেশের রান কোনোমতে ১৩১।
শুরুর পর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের লেজ কাটেন বোল্ট। ২৭ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন স্ট্যানার ও নিশাম।
লক্ষ্য তাড়ায় গাপটিলের শুরুর ঝড়ে এলোমেলো বাংলাদেশ। ডানহাতি ওপেনার ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ১৯ বলে তোলেন ৩৮ রান। উদ্বোধনী জুটিতেই কিউইদের রান ৫৪। ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে এসে তাসকিন থামান গাপটিলকে। আগ্রাসী ব্যাটসম্যানকে তালুবন্দি করান উইকেটের পেছনে। দ্বিতীয় উইকেটে নিকোলস ও কনওয়ের জুটি ৯০ বলে ৬৫ রানের। তাতে লক্ষ্য হাতের মুঠোয় চলে আসে স্বাগতিকদের।
জয়ের থেকে ১৩ রান দূরে থাকতে কনওয়ে ২৭ রানে আউট হলেও নিউ জিল্যান্ডের কোনো সমস্যা হয়নি। বরং আরেক অভিষিক্ত উইল ইয়ং ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১১ রান তুলে নেন। নিকোলস অপরাজিত থাকেন ৪৯ রানে।
সম্ভাব্য সেরা প্রস্তুতি নিয়ে প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামার কথা বলেছিলেন অধিনায়ক তামিম। মাঠে দেখা গেল উল্টো চিত্র। ব্যাটসম্যানদের হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর বোলারদের বোলিংও নির্বিষ। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে ভাগ্যের পরিবর্তন হয় কিনা সেটাই দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন
আরো পড়ুন