স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের বাফুফের সংবর্ধনা
কেউ গুলি-বন্দুক নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, কেউ-কেউ শেষ সম্বলটুকু বিলিয়ে দিয়েছেন মাতৃভূমিককে শত্রুমুক্ত করার জন্য। তাদের মধ্যে একদল আছেন যারা পা দিয়ে ফুটবল খেলে যুদ্ধ করেছেন। বলছি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই দলের সদস্যদের সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মতিঝিলের বাফুফে ভবনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্না, অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুসহ মোট ১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আখতারুজ্জামানসহ আরো অনেকে।
বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। তাদের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরা এনায়েতুর রহমান খান। তিনি কেন উপস্থিত ছিলেন না জানতে চাইলে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক সাইদূর রহমান প্যাটেল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে বেশ কয়েকবার বলেছি, আমাকে আসবেও বলেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন আসেননি আমি বলতে পারছি না।‘
রাইজিংবিডিকে একই কথা বলেছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। তিনি বলেন, ‘আমি একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কেন আসেননি আমি বলতে পারছি না এই মুহূর্তে।‘
দুপুর দেড়টার দিকে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুর বক্তব্যের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, ‘আমার সৌভাগ্যের বিষয় যে আজ আমরা সবাই একসঙ্গে বসেছি। এমন সৌভাগ্য আমার জীবনে বহুবার এসেছে। সালাউদ্দিনকে ধন্যবাদ এমন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য। আমার সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, অনেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা হয়েছে মাঝে মাঝে। আবার দেখাও হয়নি। আমি অধিনায়ক হিসেবে আমার যে দায়িত্ব সেটা দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। বয়স ৮২, প্রথম বারের মতো ফুটবল ফেডারেশনে ব্লেজারের মাপ নিয়েছে এটা আমার ভালো লেগেছে। অনেকেই আমাদের ভুলে গেছে।‘
প্রধান অতিথি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ধন্যবাদ দিতে চাই তাদের যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন দল গঠন করেছিল যা ছিল নজিরবিহীন। যাদের কারণে যাদের অবদান, ত্যাগের কারণে স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করতে পারছি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যুদ্ধের সময় তারা বসে না থেকে ফুটবলের মাধ্যমে যুদ্ধ করেছে।‘
বাফুফে সভাপতি ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য সালাউদ্দিন বলেন, ‘যে দল যুদ্ধের সময় অংশ নিয়েছিল তাদের দাওয়াত দিয়েছি। কারণ তাদের দাওয়াত দিতে পারে গর্ব হচ্ছে। সবাই তো আর বন্দুক দিয়ে যুদ্ধ করেনি তাই আমাদের দায়িত্ব ছিল ফুটবলার খেলা। আমার রোহিঙ্গাদের দেখে মনে পড়ে আমরা যখন কলকাতায় ছিলাম তখন রোহিঙ্গা হিসেবে ছিলাম। আমি স্বাধীন বাংলা দল নিয়ে অনেক কিছু করিনি কারণ আপনারা হয়ত বলবেন আমি ওই দলের সদস্য ছিলাম দেখে এসব করেছি। তবে আমি কয়েকটা কাজ না করে পারিনি। তাই আজ এই আয়োজন।‘
বক্তব্য শেষে সবাইকে ক্রেস্ট দেওয়া হয়। এরপর বাফুফে ভবনেই চলেছে মধ্যাহ্নভোজ। ভোজ শেষে অথিতিদের নিয়ে বাফুফে ভবনের প্রাঙ্গনে চলে ফটোসেশন। এরপরেই ইতি ঘটে এই আয়োজনের।
এই সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন- ম্যানেজার: তানভীর মাজহার তান্না
সংগঠক: সাইদুর রহমান প্যাটেল
স্বাধীন বাংলা দলের জাকারিয়া পিন্টু (অধিনায়ক), প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, মোহাম্মদ কায়কোবাদ, শেখ আশরাফ আলী, বিমল কর, কাজী সালাউদ্দিন, সুভাষ সাহা, ফজলে সাদাইন খোকন, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল মমিন জোয়ারদার, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, বীরেন দাস বীরু, মঈন উদ্দিন সিনহা, আবুল কাশে খান, তসলিম উদ্দিন, আব্দুল সাত্তার ছিলেন।
ঢাকা/রিয়াদ/ফাহিম