ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আকবরদের সিংহাসন টিকিয়ে রাখার মিশনে রাকিবুলরা

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫২, ২০ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:০৮, ২১ ডিসেম্বর ২০২১
আকবরদের সিংহাসন টিকিয়ে রাখার মিশনে রাকিবুলরা

শীতের বিকেলের মিষ্টি রোদ পড়ছে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক অঞ্চলে। মাঠে চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) দ্বিতীয় রাউন্ডের দ্বিতীয় দিনের খেলা। কিন্তু গণমাধ্যমের সব ক্যামেরা তাক করা প্রধান ফটক পেরিয়ে বাম দিকে বিসিবি একাডেমি ভবনের দিকে। রহস্য আগে থেকেই জানা, ফটোসেশন হবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকা ক্রিকেটার-কোচদের।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে খেলার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন তারা। সে উপলক্ষেই এই ফটোসেশন। আরব আমিরাতে এশিয়া কাপ খেলার পর পুরো দল উড়াল দেবে ক্যারিবিয়ানে। ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ থেকে শুরু হবে এশিয়া কাপ। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপ শুরু হবে ১৪ জানুয়ারি থেকে। ৩০ ডিসেম্বর এশিয়া কাপ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশে না এসে সরাসরি দল চলে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পর স্যুটেড-বুটেড হয়ে একে একে বেরিয়ে আসেন তানজীম হাসান সাকিব-আইচ মোল্লারা। এসেই ব্যস্ত হয়ে যান ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ছবি তোলায়। তাদের আসার সঙ্গে সঙ্গেই গণমাধ্যম কর্মীদের হুড়োহুড়ি লেগে যায়। পাশের সবুজ গলিচা ছাপিয়ে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন এই যুবারা। হবেই না বা কেন? তারা যে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ খেলার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ছেন রাত পোহালেই। যুব বিশ্বকাপে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, রাকিবুল হাসানদের কাঁধেই যে ভার আকবর আলীদের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার। তাই একটু আলোর ঝলকানি থাকাতো স্বাভাবিকই বটে।

আলোর ঝলকানির মধ্যে শেষ হয় ফটোসেশন। কোচিং স্টাফদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছবি তুলেন যুবারা। এরপরেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন অধিনায়ক রাকিবুল হাসান, ব্যাটসম্যান মাহফিজুল ইসলাম রবিন ও পেসার আশিকুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন কোচ নাভিদ নেওয়াজ ও গেম ডেভলপমেন্টের ম্যানেজার আবু ইনাম মো. কাউসার।

আকবর আলীদের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার ভার এই যুবাদের কাঁধে। চারজন আছেন যারা আগের বিশ্বকাপের দলের সঙ্গেও ছিলেন। রাকিবুল হাসান ও তানজীম হাসান সাকিব খেলেছেন আর একাদশে জায়গা পাননি প্রান্তিক নওরেজ নাবিল ও এসএম মেহরব হাসান। নেতৃত্বের ভার রাকিবুলের কাঁধে। এই স্পিনার জানিয়েছেন এবারের বিশ্বকাপে ভালো করবে তার দল।

‘গতবার যখন আমরা গিয়েছিলাম তখন ভালো প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছি। খেলোয়াড় হিসেবে আমি নতুন ছিলাম এবার পুরোনো। গতবার যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি সেটাই দলের ক্রিকেটারদের সাথে ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেছি। আর আমাদের দলটাও ভালো আছে, আশা করি আমরা ভালো করবো’-বলছিলেন রাকিবুল। 

‘দেখেন বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে কোনো দলই ছোট না। আমরা সব দলকেই সম্মান জানাই। আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হলে ছোট বড় সব দলকেই হারাতে হবে। আমরা আমাদের সেরা প্রস্তুতি নিয়েই ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো’- আরও যোগ করেন যুবা অধিনায়ক।

২০২০ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ট্রফি জেতে বাংলাদেশের যুবারা। এবারও ভারতের মাটিতে তাদের উড়িয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। উইন্ডিজের মাটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কী তারাই?

রাকিবুল বলেন, ‘এটা আসলেই ভালো লাগে ভারতের মতো দলকে গত সিরিজে তাদের মাটিতে গিয়ে হারিয়ে আসছি। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল, ভালো প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে গিয়েছি। আর বিশ্বকাপে শুধু ভারত না, অন্যান্য আরও ভালো ভালো দল আছে। আমরা চেষ্টা করবো আমাদের সেরা খেলাটা খেলে ভালো পারফর্ম করার।’

বিশ্বকাপ হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। উপমহাদেশের কন্ডিশনের চেয়ে ভিন্ন সেখানকার কন্ডিশন। রাকিবুল জানান সে ব্যাপারে তিনি ধারণা নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছ থেকে।

রাকিবুল বলেন, ‘দুই-একদিন রিয়াদ ভাইয়ের সাথে নেটে দেখা হয়েছিল। উনি ওখানকার উইকেট সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে উইকেট কেমন হতে পারে সে ধারণা দিলেন। এতটুকুই কথা হয়েছে।’

কোচ নাভিদ নেওয়াজের কণ্ঠে ঝরছে আত্মবিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমি আগেও বলেছি, আমরা অনেক দূর তাকাচ্ছি না। কিন্তু আমাদের একটা পরিকল্পনা রয়েছে, এখন দেখা যাক আমরা কেমন পারফর্ম করি। আমরা পুরো কম্বিনেশন সেট করেছি। অবশ্যই আমরা জয়ের জন্যই যাবো।’

কোচের পরিকল্পনা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোনো। তার মতে, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি ম্যাচ ধরে ধরে এগোনোর ব্যাপারটি। আর এটাই হবে টুর্নামেন্টে প্রবেশের আগে আমাদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

আকবর আলীর দল বিশ্বকাপ জিতে নতুন দিনের সূচনা করে দিয়েছেন দুবছর আগেই। এবার সেই নতুন দিনের জয়গান টিকিয়ে রাখার ভার রাকিবুলদের কাঁধে। পারবেনতো তারা?

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়