ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নতুন প্রত্যয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে

সালেক সুফী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ১৭ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১২:৩৪, ১৭ এপ্রিল ২০২২
নতুন প্রত্যয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজ বিপর্যয়ের দুঃস্বপ্ন ভুলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সহসাই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে আসা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে নতুন প্রত্যয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা তুখোড় দল। ওদের দেশে ওদের পরিচিত পরিবেশে বাংলাদেশ কেন, যেকোনো বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য লড়াই করে সম্মান রক্ষাই দুরূহ।

কিন্তু অনেক প্রতীক্ষার অবসানে জানুয়ারি ২০২২ নিউজিল্যান্ডের দুর্গম দুর্গে ভালো খেলে টেস্ট জয় এবং সদ্য সমাপ্ত সফরে তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজে পূর্ণ শক্তির স্বাগতিক দলের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ২-১ জয় থেকে অনেকেই ভেবেছিলো টেস্ট সিরিজে ভালো করবে। তদুপরি ৮ জন প্রথম চয়েস খেলোয়াড়কে আইপিএল ২০২২ খেলার জন্য ছেড়ে দেয়া খর্ব শক্তির দলের বিরুদ্ধে অন্তত লড়াই করা প্রত্যাশিত ছিল।  কেন হলো না সেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ আদৌ হবে কিনা জানিনা।  তবে সিরিজের  সামান্য প্রাপ্তি পুঁজি করে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া যে কোনো বিকল্প নেই।

সংক্ষিপ্ত পরিসরে বলবো, যে কোনো বিবেচনায় যে কোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দল পর পর দুটি ম্যাচে স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার দল নয় এখন। দলের শারীরিক ভাষায় আতঙ্ক ছিল। অস্থিরতা ছিল। সংগ্রাম করার প্রত্যয় ছিল না। অথচ দেশ ছাড়ার আগে টেস্ট স্কোয়াডের অনেক খেলোয়াড় দেশের সবচেয়ে  বাউন্সি উইকেটে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছিল। বেশ কিছু দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে টেস্ট দলের অনেকেই গ্যারি কার্স্টেন একাডেমিতে অনুশীলন করলো।

মনে হয় টেস্ট ভেন্যু ডারবানের কিংসমিড মাঠ এবং পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্ক নিয়ে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করা হয়নি। সেটাই বা বলি কি করে? দলের কোচিং স্টাফে যখন স্থানীয় হেড কোচ এবং বোলিং কোচ ছিল। খেলার কৌশল থেকে মনে হয়েছে বাংলাদেশ অনুমান করেছিল উইকেটগুলো পেসি এবং বাউন্সি হবে। কিন্তু পেস বা বাউন্স বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করেনি। বাংলাদেশ নাস্তানাবুদ হয়েছে স্পিন বোলিংয়ের মোকাবেলায় যেটি খেলে বাংলাদেশ সিদ্ধহস্ত বলেই জানে ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু যেভাবে ধসে গেছে বাংলাদেশ তা দেখে মনে করার কারণ আছেই, ‘সারারাত গরুর রচনা পড়ে সকালে প্রশ্ন পত্রে নদীর রচনা দেখে ভড়কে গেছে ছাত্ররা।’

তবুও কিছু অর্জন ছিল ঝরা পালকের ধ্বংসস্তূপে। নবীন মাহমুদুল হাসান জয় প্রথম টেস্টে ১৩৭ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেছেন। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে বাংলাদেশের চার বোলার অনবদ্য বোলিং করেছিল। যদি প্রথম টেস্ট একাদশে তাইজুলকে অবহেলা করা না হতো তাহলে হয়তো ফল ভিন্ন কিছু হতেও পারতো। আমি পরাজয়ের জন্য খেলোয়াড়দের দক্ষতার সীমাবদ্ধতা, প্রয়োগ শক্তির অভাবের পাশাপাশি দলের ভুল কৌশল, একাদশ নির্বাচনে মারাত্মক ভুলকেও সমানভাবে দায়ী করবো। সিনিয়র খেলোয়াড় তামিম, মুশফিক, মুমিনুল দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেননি।

যা কিছু হয়েছে সেগুলো ভুলে এখন নতুন পরিকল্পনায় এগিয়ে যেতে হবে। অনেকেই মুমিনুল হককে অধিনায়ক হিসাবে দেখতে চাইছেন না। তবে মনে হয় না মুমিনুলকে আসন্ন সিরিজে ছেঁটে ফেলা ভালো হবে। মানি দলকে অনুপ্রাণিত করার মতো কিছু করতে পারেননি মুমিনুল। নিজে ভালো খেলতে পারেননি। সফরে দলের সঙ্গে বিসিবির কয়েকজন হাই প্রোফাইল কর্মকর্তা ছিলেন। তারা নিশ্চয়ই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবেন। সামনের সিরিজে যেন ব্যর্থতার একই চিত্র দেখতে না হয় সেই আশায় আছি।

আমি অন্তত আরেকটি সিরিজে মুমিনুলকে রাখার পক্ষপাতী। সে এখনো দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। দেশের মাটিতে ওর ঈর্ষণীয় ব্যাটিং রেকর্ড আছে। ওকে সরিয়ে দিলে ওর ব্যাটিংয়ের উপর প্রভাব পড়তে পারে। বিকল্প হতো সাকিব আল হাসান। কিন্তু টেস্ট খেলতে অনীহা থাকা কাউকে অনুরোধে ঢেঁকি গেলানোও ঠিক হবে না। মুশফিক আর কখনো কোনো ফরম্যাটে অধিনায়ক হবে না বলেই জানি। তামিমকেও ওডিআই নেতৃত্ব নিয়েই মনোযোগ দিতে হবে। অবশ্য দীর্ঘ সময়ের বিকল্প হিসাবে মেহেদী মিরাজ এবং নাজমুল শান্তকে ভাবা যেতে পারে।

দেশে চলছে ঘরোয়া লিগ। সেখানে অভিজ্ঞ এনামুল হক বিজয় (৭৩ গড়ে ৭৩৮ রান) এবং নাঈম ইসলাম (৮৩ গড়ে ৭৫৯ রান) করে শীর্ষে আছেন। টেস্ট সিরিজটি যেহেতু দেশের মাটিতে এবং বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে টেস্ট মেজাজের অভাব আছে। সেই সূত্রে এই দুই ইনফর্ম ক্রিকেটারকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে পারেন নির্বাচকরা।

আমি মনে করি তামিম, জয়, শান্ত, মুমিনুল, মুশফিক ঘুরে দাঁড়াবে। অন্তত মুমিনুল এবং মুশফিকের জন্য এই সিরিজ এসিড টেস্ট। ব্যর্থ হলে ওদের নিজেদের পথ বেছে নিতে হবে। জানিনা সাকিব এই সিরিজেও খেলবে কিনা। যদি সাকিব থাকে তাহলে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজে ফেভরিট হিসাবেই শুরু করবে। লিটন, মেহেদি মিরাজ আর ইয়াসির দলে স্থান নিশ্চিত করে ফেলেছেন। উপরের সারির ব্যাটসম্যানরা বার্থ হলে ওদের ব্যাটিং অর্ডার প্রমোশন বিবেচনা করতে হবে।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে স্পিনিং উইকেট করলে বিপদ হতে পারে। বরং তাসকিন, শরিফুল, খালেদ, এবাদতের উন্নতি বিবেচনা করে সবুজ ঘাসের স্পোর্টিং উইকেট রাখা কাজে দিবে। যদি সাইফুদ্দিন ম্যাচ ফিট থাকে ওকে বিবেচনা করা যেতে পারে। সাকিব থাকুক বা নাই বা থাকুক বাংলাদেশ যেন ৫ জন বোলার নিয়েই খেলে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শোচনীয় টেস্ট বিপর্যয় সত্ত্বেও আমি মনে করি সঠিক পরিকল্পনা করে সঠিক দল নির্বাচন করা হলে এবং মাঠের বাইরে থেকে দিক নির্দেশনা সীমিত করা হলে বাংলাদেশ সিরিজ জয় না করার কোনো কারণ নেই।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়