ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জাতীয় দলে খেলতে চান ফুটবলার সুমাইয়া

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৮, ২৩ মে ২০২২   আপডেট: ১৩:১২, ২৩ মে ২০২২
জাতীয় দলে খেলতে চান ফুটবলার সুমাইয়া

সুমাইয়া। কক্সবাজারের মহেশখালী কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের নয়াপাড়া এলাকার সন্তান। উদীয়মান ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি কালারমারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বালিকা ফুটবলে তাকে চেনেন না এমন মানুষ কক্সবাজারে কম পাওয়া যাবে। ঘরোয়া ফুটবলে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য স্থানে। জাতীয় ফুটবল দলে খেলার স্বপ্ন বুনছেন স্বপ্নবাজ এই কিশোরী। 

শৈল্পিক খেলায় সুমাইয়া নিজের স্কুল, ইউনিয়ন ও উপজেলার গণ্ডি পেড়িয়ে খেলেছেন রাজশাহী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফেনী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ একাধিক জায়গায়। মাঠের লড়াইয়ে অত্যন্ত দাপট খাটিয়ে চলছেন প্রতিনিয়ত। ফুটবল টুর্নামেন্টের বিভিন্ন পর্যায়ে তার নৈপুণ্য ছিল শীর্ষে। তিনি অল্প সময়ে নিজেকে পরিচিত করেছেন জেলার আনাচে-কানাচে। সপ্তম শ্রেণির এই অদম্য কিশোরী খেলে জেলা মহিলা ফুটবল দলে। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন মা-বাবা, স্কুলের শিক্ষক, এলাকাবাসী ও ফুটবল বিশ্লেষকরা। তার নৈপুণ্যতার কারণে একাধিক ট্রফি, মেডেল ও প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার তার ঝুলিতে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া পরিদপ্তর আয়োজিত চলমান বঙ্গমাতা অনুর্ধ্ব-১৭ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে মহেশখালী উপজেলার হয়ে অংশগ্রহণ করেছে সুমাইয়া। উখিয়া উপজেলার সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন এই ফরোয়ার্ড।  

কিন্তু তার স্বপ্ন রুখে দিচ্ছে দারিদ্র্য। জেলে বাবা সৈয়দ আলমের দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারের মেয়ে সুমাইয়া। বাবা মাছ ধরতে যেতে না পারলে উপোস থাকতে হয় তাদের। ৫ সদস্যের পরিবারে অভাব অনটনে কেটে যায় দিন। 

সুমাইয়ার বাবা সৈয়দ আলম বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারলে চুলায় আগুন জ্বলে। দুঃখ-কষ্টে পার করছি দিন। এর মধ্যে সুমাইয়ার বুট, জার্সি ও খেলার সরঞ্জাম কিনে দেওয়া আমার সম্ভবের বাইরে। অনেকবার চাল না কিনে মেয়ের ফুটবলের সরঞ্জাম কিনে দিয়েছি। সে যেহেতু খুব ভালো খেলে, এলাকার সবাই চান খেলাধুলায় জড়িত রাখতে। কিন্তু আমি তো পারছি না।  আমার দারিদ্র্যর কাছে হেরে যাচ্ছে সুমাইয়া।’

তিনি বলেন, ‘সুমাইয়ার খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে উপজেলা-জেলার হয়ে তাকে খেলতে নিয়ে যায়। জেলার বাইরেও খেলে পুরস্কার জিতে আসে আমার সুমাইয়া। সে দিন দিন যত ভালো খেলছে, তত তাকে নিয়ে আমার স্বপ্নটা বড় হচ্ছে। অভাব-অনাহারে থাকলেও মেয়ের প্রতিভার কাছে এসব তুচ্ছ মনে হয়। কিন্তু দিন শেষে সন্তানদের খরচের জন্য আটকে যাই আমি। আমার স্বপ্ন একদিন আমার মেয়ে জাতীয় দলে খেলবে। আমার সেই আশা আল্লাহ্ যেন পূরণ করেন।’

সুমাইয়া বলেন, ‘আমার জীবনটাই ফুটবলকে ঘিরে। খেয়ে না খেয়ে এই ফুটবল নিয়ে পড়ে আছি ছোটবেলা থেকে। আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে ফুটবল নিয়ে। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন বুনছি। কিন্তু আমার জেলে বাবার পক্ষে আমার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় খেলাধুলার সরঞ্জাম কিনতে হয়। সেগুলো কিনে দিতে বাবার অনেক কষ্ট হয়। তারপরও স্বপ্ন লালন করছি। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পেলে জাতীয় দলে খেলতে পারবো। জাতীয় দলে খেলে আমি দেশের সুনাম বয়ে আনতে চাই।’

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, ‘গরীবের ঘরে এমন প্রতিভাবান মেয়ে আল্লাহর অপূর্ব নিয়ামত। সুমাইয়ার খেলা দেখে মুগ্ধ না হয়ে কেউ থাকতে পারবে না। অসাধারণ খেলে মেয়েটা। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তার শৈল্পিক খেলা সত্যিই উপভোগ করার মতো। তার নিখুঁত খেলা দেখে আমরা তাকে জেলা মহিলা ফুটবল দলে সুপারিশ করি। ছোট্ট এই মেয়ে এখন সে জেলা টিমে খেলছে। জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেলে মেয়েটি দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে অনেক ভালো ভালো নারী খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার যে মুকুট পরেছে বাংলাদেশ, সেই সাফল্যের অন্যতম কারিগরও কক্সবাজারের মেয়ে সাহেদা আক্তার রিপা। তিনিও দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে গেছেন। ঠিক তেমনি সুমাইয়াকে নিয়েও আমরা স্বপ্ন দেখি। সংশ্লিষ্টদের নজরে সুমাইয়ার বিষয়টি আসলে হয়তো সেও জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবে। অনেক কষ্ট করে সুমাইয়াদের সংসার চলে। জেলে বাবার পক্ষে আসলে সুমাইয়ার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সুমাইয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বসে আলাপ করবো।’ 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল বলেন, ‘সুমাইয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আছে। তার প্রতিভাকে মূল্যায়ন করবে জেলা প্রশাসন। বর্তমানে সে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে। টুর্নামেন্ট শেষে তার বিষয়টা জেলা প্রশাসন দেখবে।’

গরীব পরিবারের সন্তান হলেও হাল ছাড়েননি সুমাইয়া। জাতীয় দলে খেলার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিয়মিত অনুশীলন ও খেলার মধ্যে যাচ্ছে তার সময়। বাফুফে যদি সুমাইয়ার মতো মফস্বলের নারী খেলোয়াড়দের নজরে আনে, তাহলে বাংলাদেশ ফুটবল বিশ্বে আরও এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।

/এইচএম/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়