ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

সেই একই ‘মানসিকতায়’ ক্যারিবিয়ানে ডুবলো সাকিবের দল

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২৮ জুন ২০২২  
সেই একই ‘মানসিকতায়’ ক্যারিবিয়ানে ডুবলো সাকিবের দল

মুমিনুল হক ইস্তফা দেওয়ার আগেই সাকিব আল হাসান টেস্ট অধিনায়ক হচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে। তাই হলো। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্ট ক্রিকেটে নেতৃত্বের ভার যায় দেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয়ের কাঁধে। হারের বৃত্ত থেকে বেরোতে না পারলেও অন্তত লড়াই করতে পারবে বাংলাদেশ; এমন আশা জেগেছিল। কিন্তু কিসের কী। মুমিনুল যুগের সেই মানসিকতাই ক্যারিবিয়ান দ্বীপে ডুবলো সাকিবের দল।

কথা ছিল অ্যান্টিগা টেস্টের ভুল শুধরে সেন্ট লুসিয়ায় ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। ঘুরে দাঁড়ানোতো দূরের কথা উলটো কোনোমতে এড়ায় ইনিংস পরাজয়। শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে ১০ উইকেটে মাত্র ২.৫ ওভারেই। বৃষ্টির বাধা না এলে তৃতীয় দিনই হয়তো হারের গল্প লিখতে হতো। সময়ক্ষেপণ করে সেটি হয় সোমবার (২৭ জুন) ম্যাচের চতুর্থ দিন।

এই নিয়ে চলতি বছর ৮টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ হেরেছে ৬টিতে। বছরের শুরতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১টি জয়, আর ঘরের মাঠে মে’তে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১টি ড্র। সাফল্য এ দুটি ম্যাচেই। এই হার টেস্টে বাংলাদেশের শততম। সবচেয়ে কম সময়ে হারের সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন বাংলাদেশের!

বারেবার ব্যাটসম্যানদের বিব্রতকর আউটে টেস্ট খেলার মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। ক্রিজে টিকে থাকা যখন প্রয়োজন তখন অপ্রয়োজনীয় শটে মাথা নিচু করে ড্রেসিংরুমে যাওয়া যেন বাংলাদেশ ইনিংস চলাকালীন একটি নিয়মিত দৃশ্য। চলতে থাকে আসা যাওয়ার মিছিল। মাঠে নামলেই যেন ড্রেসিংরুমে ফেরার তাড়া। নেই ধৈর্যের ছিটেফোঁটা।

সদ্য সমাপ্ত হওয়া সেন্ট লুসিয়া টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসই ধরা যাক। শুরুতে যেভাবে তামিম ইকবাল (৪) বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে আউট হয়েছেন তা দৃষ্টিকটু। আর সেট হওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত (৪২) একইভাবে বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে আউট হওয়া দায়িত্বহীনতার পরিচয়। মুমিনুল হকের বদলে খেলা এনামুল হক বিজয় দুই ইনিংস মিলিয়ে ত্রিশও (২৩ ও ৪) করতে পারেননি।

লিটন দাসের ৫৩ রানের ইনিংসের পর ইবাদত হোসেন (২১) ও শরিফুল ইসলামের (২৬) কল্যাণে বাংলাদেশ ২৩৪ রান করে প্রথম ইনিংসে। জাবাবে কাইল মায়ার্সের সেঞ্চুরিতে (১৪৬) ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৮ রান করে। বাংলাদেশের সামনে লিড দাঁড়ায় ১৭৪। তা করতে নেমেই ৩২ উইকেটে ৩ উইকেটে ৩ উইকেট হারিয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকেন রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। কেমার রোচ এই ৩ উইকেট নিয়ে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন। টপকে যান মাইকেল হোল্ডিংকে। বৃষ্টি বিঘ্নিত দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৩২।

চতুর্থ দিন ভেজা আউট ফিল্ডের কারণে ৫ ঘণ্টা দেরিতে খেলা শুরু হয়। শূন্যতে দিন শুরু করা মিরাজ ফেরেন চতুর্থ ওভারে ৪ রানে। এরপরই ১৬ রানে দিন শুরু করা নুরুল হাসান সোহান পেটাতে থাকেন। এছাড়া যে বিকল্প নেই। তার ৪০ বলে হাঁকানো ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটিতে বাংলাদেশ ইনিংস হার এড়ায়। খালেদের রানআউটে ১৮৫ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। সোহান ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন। উইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১৩। ১৭ বলে এই রান নিয়ে নেন জন ক্যাম্পবেল (৯) ও ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (৪)। ব্যাট হাতে ১৫৩ রান ও বল হাতে ৬ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন কাইল মায়ার্স।

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মধ্যে সোহান দেখিয়েছেন সাহসিকতা। অ্যান্টিগায় সাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে ইনিংস হার এড়িয়েছিলেন। ফিফটি করে সাজঘরে ফিরেছিলেন। আর সেন্ট লুসিয়াতে লড়েছেন একাই। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মাঝে সর্বোচ্চ ১৩৮ রান সাকিবের আর সোহানের ১৩১। দুজনেই ২টি করে ফিফটি হাঁকিয়েছেন।

অনেক হারানোর মাঝেও প্রাপ্তি থাকে। এই সেন্ট লুসিয়াতেও আছে বাংলাদেশের প্রাপ্তি। খালেদ আহমেদের প্রথম ফাইফার। যা উইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশি কোনো পেসারের প্রথম ফাইফার। ১০৬ রান দিয়ে এই উইকেটগুলো নেন তিনি। দুই টেস্টে ১০ উইকেট নিয়েছেন এই ডানহাতি পেসার। এছাড়া মিরাজ নিয়েছেন ৭ উইকেট।

বোলাররা অনেক সময় সাধ্যের বাইরে গিয়েও সাফল্য এনে দেন। ব্যাটসম্যানরা কবে দায়িত্ব নিতে শিখবে? 

ঢাকা/রিয়াদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়