ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

বুলবুল-সুজন: দিস ইজ নট ক্রিকেট

মানজুর মোরশেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২  
বুলবুল-সুজন: দিস ইজ নট ক্রিকেট

দুজনই বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। দুজনেই ক্রিকেট অন্তপ্রাণ! একজন কাজ করেন দেশে, আরেকজন বিদেশে। একজন ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান, আরেকজন ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারাতে সবচে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অধিনায়কত্বে খেলেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন।

ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা, আর তাই এই দুই কীর্তিমানের সম্পর্কটা শ্রদ্ধার-সম্মানের হবে এটাই প্রত্যাশা করে আপামর ক্রিকেটপ্রেমী। কিন্তু হচ্ছেটা কী? এতো দা-কুমড়া সম্পর্ক! সাফল্য-ব্যর্থতার ক্রিকেট ব্যতিরেকে এতো ব্যক্তিগত আক্রমণ! এতো একজনকে পরাভবের কিনারায় নিতে আরেকজনের নগ্ন আক্রমণ। ক্রিকেট শিষ্টাচারের ধারে কাছে থাকলেন না খালেদ মাহমুদ! প্রশ্ন তুলেছেন আমিনুল ইসলামের যোগ্যতা নিয়ে, যিনি কিনা আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার। আবার আমিনুলও টিম ডিরেক্টর হিসেবে মাহমুদের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বোঝা যাচ্ছে একদা টিমমেট ২ সাবেকের ব্যক্তিগত সম্পর্কটা ভালো নয়!

ক্রিকেটে সংবাদমাধ্যম আশ্রয়ী রেষারেষির সম্পর্কটা ইদানিং বেশ চাক্ষুষ! বয়সে আকাশ-পাতাল ব্যবধান, কিন্তু শীতল সম্পর্ক বিরাট কোহলি আর সুনীল গাভাস্কারের মতো। নানা ইস্যুতে প্রায়ই লেগে যায় তাদের। বিরাটের খারাপ ফর্মের জন্য স্ত্রী আনুষ্কাকে দোষ দিতে ছাড়েননি গাভাস্কার। অথচ ধোনির সাথে দারুণ মেলে বিরাটের। প্রিয় মাহি ভাইয়ের প্রশংসাও করেন তিনি।

তবে এই উপমহাদেশে ক্রিকেটারদের নিজেদের মধ্যে সবচে খারাপ সম্পর্ক বোধহয় পাকিস্তানিদের মধ্যে! ইমরান খান- জাভেদ মিয়াঁদাদ দ্বন্দ্ব এরমধ্যে ঐতিহাসিক। একজন আরেকজনকে দু'চোখে দেখতে পারেন না! তবে ইমরান সে কথা বলেন না, বলেন জাভেদ। ১৯৯৩ সালে দল থেকে বাদ পড়ার দায় জাভেদ চাপান ইমরানের ওপর। ইদানিং বলছেন পিসিবিকে ধংস করেছেন ইমরান, সংস্থাটি বিদেশিতে ভরে ফেলেছেন তিনি। ইমরান দেশের ক্ষতি করেছেন, তিনি গাদ্দার- তার শাস্তি হওয়া উচিত। এসব বলে এখন মাঠ গরম করছেন জাভেদ।

পাকিস্তানে সামনে জাতীয় নির্বাচন, এর একটা নেতিবাচক প্রভাব হয়ত ফেলবে ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে। কিন্তু জাভেদ যে বরাবরের মত ঠোঁটকাটা সেটি যে এই বয়সে এসেও, তার প্রমাণ মিললো!

আবার ফিরি বুলবুল-সুজনে! এরা কেউ মানেগুণে গাভাস্কার, কোহলি, ইমরান, জাভেদের মত জগৎসেরা ক্রিকেটার ছিলেন না! অথচ বর্তমান দলের ক্রিকেটারদের যেভাবে সমালোচনা করেন, তা প্রায়শই দৃষ্টিকটূ! আর সেটাই হয়তো দুজনের লড়াইয়ের ক্ষেত্রও। আমরাও জানি বড় ক্রিকেটার মানেই বড় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নন! এই যেমন শ্রীধরন শ্রীরাম তিনি তো বড় কোন ক্রিকেটার ছিলেন না, অথচ বলা যায় তিনিই এখন বাংলাদেশের হেড কোচ! কাজের ক্ষেত্রে বুলবুল-সুজনও নিজেদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে হয়তোবা টপকে গেছেন। তাদের কাছ থেকে তাই পরিমিতিবোধ একটু বেশি কাঙ্খিত!

কাউকে ছোট করে কেউ কোনদিন বড় হতে পারেনি। চ্যাপেল-সৌরভ বিতর্ক আজ এর বড় উদাহরণ! সৌরভকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন গ্রেগ চ্যাপেল। সেই অধিনায়ক সৌরভ এখন বিসিসিআই সভাপতি, দায়িত্ব নিতে চলেছেন আইসিসিরও। মাঠ তো বটেই, মাঠের বাইরে ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে চ্যাপেলকে টেক্কা দিয়েছেন তিনি! তাইতো বলি, কে যে কখন বড় হয়ে যায় তার ঠিক নেই। আসুন পরস্পরের প্রতি সমমান দেখায়, সমালোচনা হোক বাস্তবতার নিরিখে। পরস্পরকে সৌহার্দে্যর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করুন প্রিয় আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও খালেদ মাহমুদ সুজন।

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়