ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আড়াল থেকে আরও আড়ালে সৌম্য

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ২২:৫১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আড়াল থেকে আরও আড়ালে সৌম্য

সৌম্য সরকারের আউট নিয়েই বিপিএলে বিতর্কের শুরু হয়েছিল। খুলনার বিপক্ষে তার আউটকে কেন্দ্র করে প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ হন আয়োজকরা। মাঠের আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ করেন। টিভি রিপ্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ারও আউট দেন। কিন্তু সৌম্য এতোটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে ক্রিজ ছাড়ছিলেন না। টিভি আম্পায়ার ফের রিপ্লে দেখে তার সিদ্ধান্ত পাল্টান। সৌম্য বেঁচে যান।

৫ রানে ‘জীবন’ পাওয়ার পর সৌম্যর ব্যাট হাসেনি। ১৬ রানে থেমে যায় বিপিএলের প্রথম ইনিংস! এরপর…সময় তো গড়াল অনেকদূর। কতদূর হাসল তার ব্যাট? পরের চার ইনিংসে একবার চোখ বুলানো যাক। ৬, ৪, ০, ০! সত্যিই তাই— ঢাকা ডমিনেটর্সের এই ওপেনারের পরের চার ইনিংস ছিল একই রকম। এরপর?

আরো পড়ুন:

বাজে ব্যাটিংয়ের এই ধারাবাহিকতা সৌম্য ধরে রাখলেন শেষ পর্যন্ত। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলে ঢাকা ডমিনেটর্স। ১১৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ঢাকা ম্যাচ হেরে যায় ১৫ রানে। সৌম্যর বিপিএল শেষ হয় ২১ রানে। ছোট এ ইনিংস খেলার পথেও জীবন পেয়েছিলেন ৫ রানে।

গোটা প্রতিযোগিতায় সৌম্য প্রতিবার মাঠে নেমেছিলেন বড় কিছুর আশা নিয়ে। দল থেকে বাদ পড়ার কোনো চিন্তা ছিল না। অবারিত সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। পেয়েছিলেন স্বাধীনভাবে খেলার ছাড়পত্রও। কিন্তু বাঁহাতি ওপেনার প্রতিবার মাঠে নেমেই করেছেন হতাশ। রান তো পান-ই নি। উল্টো প্রতিবার আউট হয়েছেন বাজে শটে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। দলকে ডুবিয়ে। একের পর এক ব্যর্থতায় স্তুপে ঢাকা পড়েছে তার নাম। আড়াল থেকে আড়ালে চলে গেছেন প্রতিবার।

গোটা প্রতিযোগিতায় ১২ ইনিংসে মাত্র ১৭৪ রান করেছেন সৌম্য। ব্যাটিং গড় ১৪.৫০। সর্বোচ্চ রান ৫৭। যে ম্যাচে ঢাকাকে খাদের কিনারা থেকে তুলেছিলেন ঠিকই। কিন্তু ব্যক্তিগত মাইলফলক ছোঁয়ার পরই উইকেট উপহার দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। ওই এক ম্যাচ বাদে সৌম্য বিপিএলে বারবার হতাশ করেছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, বিপিএলে তার খেলা নয় আসরে এবারই সবচেয়ে খারাপ সময় কাটিয়েছেন সৌম্য। অবশ্য গত আসরেও বিবর্ণ ছিল তার ব্যাটিং। খুলনা টাইগার্সের হয়ে ৯ ইনিংসে ১৬৪ রান করেছিলেন। যেখানে এক ইনিংসেই করেছিলেন ৮২ রান। বাকি ৮ ইনিংসে রান ৮২!

জাতীয় দলে অভিষেকের আগে বিপিএলে নিজেকে তেমন মেলে ধরতে পারেননি। বিপিএলের প্রথম আসরে ঢাকা গ্লাডিয়েটরসের হয়ে ১ ম্যাচ খেলে কেবল ১১ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় আসরে ৫ ম্যাচে মাত্র ৩৩ রান। যেখানে এক ম্যাচে করেছিলেন ৩০। বাকি ৪ ইনিংসে ৩! ২০১৫ সালে ১২ ইনিংসে ১৭৭ রান, গড় ছিল ১৬.০৯। সর্বোচ্চ রান ৫৮।

জাতীয় দলে ঢুকলেও তার পারফরম্যান্স পাল্টায়নি। ১২ ইনিংসে ১৩৫ রান করেছেন ১২.২৭ গড়ে। সর্বোচ্চ রান ছিল ২৬। পরের আসরে ১১ ইনিংসে ১১ ইনিংসে ১৬৯ রান, ১৫.৩৬ গড়ে। ২০১৯ সালের গড় সবচেয়ে বাজে সবচেয়ে হতশ্রী। ৯ ইনিংসে ১১.৪২ গড়ে রান করেছিলেন ৮০। বিপিএলে তার সাফল্য বলতেই ২০২০ সালের আসর। ১২ ইনিংসে ৩৩১ রান করেছিলেন ৩৩.১০ গড়ে। যেবার তার ব্যাট থেকে এসেছিল ২ ফিফটি। বিপিএলের ইতিহাসে ওই একবারই সৌম্য রান তোলার তালিকায় সেরা ১১ জনে ছিলেন। বাকি সবকটি আসরে সৌম্য ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে, খোলসবন্দী।

সৌম্যর মতো গোটা মৌসুমে বাজে সময় কাটিয়েছে ঢাকা ডমিনেটর্সরও। দলের ব্যর্থতার পেছনে বড় কারণ ছিল টপ অর্ডারে সৌম্যর বাজে ফর্ম। ঢাকার অধিনায়ক নাসির মঙ্গলবার নিজের অসহায়ত্বই প্রকাশ করলেন এভাবে, ‘টপ অর্ডার নিয়ে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই বলতে বলতে শেষ হয়ে গেলাম। আমাদের টপ অর্ডার একদমই ভালো পারফর্ম করেনি। আমরা যদি টপ অর্ডারের পারফর্ম পেতাম তাহলে রেজাল্টটা আরেকটু ভালো হতো।’

সৌম্য শেষ কয়েকমাস ধরেই নিষ্প্রভ। অনেক আশা নিয়ে তাকে বিশ্বকাপের দলে যুক্ত করা হলেও ৪ ম্যাচে ৪৯ রানের বেশি করতে পারেনি। বিসিএল ওয়ানডেতে চারদিনের ম্যাচে ২ ম্যাচে ৯০ এবং ওয়ানডেতে ৩ ম্যাচে মাত্র ৩০ রান করেন। এরপর বিপিএলে তার এমন ফর্ম নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে তার সামর্থ্য। রান না করায় এমনিতেই পিছিয়ে যাচ্ছেন। অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া সৌম্য এখন আড়াল থেকে আরও আড়ালে চলে যাচ্ছেন। যেখান থেকে ফেরার পথটা শুধু কঠিনই নয়, বেশ কন্টকাকীর্ণও।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়