ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জায়গা ছেড়ে মুশফিকের ব্যাটে প্রাপ্তির আনন্দ ও নির্ভরতার হাসি

ইয়াসিন হাসান, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৫, ২৪ মার্চ ২০২৩  
জায়গা ছেড়ে মুশফিকের ব্যাটে প্রাপ্তির আনন্দ ও নির্ভরতার হাসি

নিজের ব্যাটিং এবং ব্যাটিং পজিশন নিয়ে মুশফিকুর রহিম এতোটই আপসহীন যে, যুৎসই কিছু না হলে অস্বস্তিতে ভোগেন। তার অস্বস্তি মানেই টিম ম্যানেজমেন্টের ‘ঘুম হারাম’। কারণ, ব্যাটিংয়ে মুশফিকই যে মিস্টার ডিপেনডেবল।

লম্বা সময় ধরে মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের ব্যাটিং স্তম্ভ। এমনটাও হয়েছে যে তার ব্যাট হাসলেই হেসেছে বাংলাদেশ। চার নম্বর পজিশন মোটামুটি তার জন্য পাকাপাকি ছিল। ক্যারিয়ারের ২২৯ ইনিংসের ১১৭টিতেই চার নম্বরে ব্যাটিং করেছেন। ৪২.৩৯ গড়ে রান করেছেন ৪৩৬৭।

২০০৬ সালের ৬ আগস্ট মুশফিকের ওয়ানডে ক্রিকেটে পথচলা শুরু। তার অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত চার নম্বরে ব‌্যাটিংয়ে সবচেয়ে বেশি রান কেবল দুজনের। অবসরে যাওয়া রস টেলর ১৮০ ইনিংসে ৭৬৪৪ রান করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬০ খ‌্যাত এবি ডি ভিলিয়ার্স ১২০ ইনিংসে ৫৫৫৫ রান করেছেন।

মুশফিকের ব‌্যাটিং পজিশন নিয়ে এতো আলোচনার কারণ আয়ারল‌্যান্ড সিরিজে ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যানকে নতুন ভূমিকায় দেখা গেছে। তাতে পরিবর্তন হয়েছে তার ব‌্যাটিং পজিশন। চার থেকে মুশফিক নেমেছেন ছয়ে। ৬ বছর পর তাকে দেখা গেছে ছয় নম্বর ব‌্যাটিং পজিশনে।

অবশ্য ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বেশিরভাগ ম্যাচেই ৬ নম্বরেও ব্যাটিং করেছেন। পরের সময়টাতে বেশিরভাগই চার নম্বরে দেখা গেছে তাকে, কিছু ম্যাচে ৫ নম্বরেও ব্যাটিং করেছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম‌্যান। মূলত দলের চাওয়াতেই মুশফিক ছেড়েছেন নিজের পজিশন। ছেড়ে দিয়ে অবশ‌্য খারাপ করেননি। পুরোনো পজিশনে ব‌্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ম‌্যাচেই ২৬ বলে ৪৪ রান করেছিলেন। ঠিক পরের ম‌্যাচেই তার ব‌্যাট থেকে আসে ৬০ বলে ১০০ রানের ঝকঝকে ইনিংস। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ‌্যে দ্রুততম।

ছয় নম্বরে ব‌্যাটিং করার কাজটা কঠিন। এ পজিশনে অভিজ্ঞ কাউকে থিতু করার পরিকল্পনাতেই হাথুরুসিংহে ও তামিম তাকে ছয়ে পাঠিয়েছেন। মুশফিক ভালো করায় স্বস্তি পেয়েছেন তারাও। তাইতো সংবাদ সম্মেলনে মুশফিককে স্তুতিতে ভাসিয়েছেন ওয়ানডে অধিনায়ক।

‘শেষ সিরিজে আমি আর কোচ মিলে ঠিক করেছি ওকে আমরা ছয়ে খেলাব। কারণ, তার চারে খেলানোর বিপক্ষে কিছু নেই, সে সেখানে দারুণ খেলেছে, কিন্তু তাকে ছয়ে নামানোর কারণ, আমরা কখনো কখনো ভালোভাবে শেষ করিনি। তার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। তার হাতে অনেক শট আছে। সেটা সে তার দুই ইনিংসে দেখিয়েছেও। সেটাই কারণ ছিল। কারণ, সে আমার মনে হয় তার হাতে কম ওভার থাকলে সে আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে যায়।’

মুশফিকের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে তাকে সামনেও একই পজিশনে খেলানোর পরিকল্পনা তামিমের। মুশফিক ভালো করলে বাংলাদেশ ক্রিকেট আরও এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করেন ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘ভাগ্য ভালো, বিষয়টা কাজে দিয়েছে। সে অবিশ্বাস্যভাবে ভালো খেলেছে। ও যদি সেটা ক্যারি করতে পারে, তাহলে আমাদের জন্যই সম্ভাব্য সেরা বিষয় হবে সেটা। কারণ, ছয়ে ব্যাট করাটা খুবই ট্রিকিও হতে পারে। সবসময় ভালো শুরু হবে না। ১০০ রানে ৪ উইকেট, এমন পরিস্থিতিতেও তাকে এসে ব্যাট করতে হবে। তো এটা যেই ব্যাট করুক, ছয়ে ব্যাট করাটা যে কারো জন্যেই ট্রিকি।’

শুধু জাতীয় দলেই যে এমনটা করেছেন তা নয়। শেষ বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের দুই ব‌্যাটসম‌্যান তাওহীদ হৃদয় ও জাকির হাসানকে উপরে ব‌্যাটিং করানোর জন‌্য নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। দলটির অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এভাবে বলেছিলেন, ‘মুশফিক উপরে ব‌্যাটিং করে। কিন্তু জাকির ও তাওহীদকে উপরে ব‌্যাটিং করানোর কথা বললে মুশফিক নিজেই তা মেনে নেয়। ও সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজটা সহজ করে দিয়েছিল।’  

পুরোনো পজিশনে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি মুশফিকেরও, ‘ছয় নম্বরে ব্যাটিং করাটা আমার জন্য ভালো সুযোগ ছিল। আমি আগেও ওই পজিশনে ব্যাটিং করেছি। এমন উইকেটে ব্যাটিং করাটা আমি উপভোগ করেছি। কারণ, ব্যাটিং করার জন্য বেশ ভালো উইকেট ছিল। আমি শুধু আমার দক্ষতা কাজে লাগিয়েছি।’

অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে নানা পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছিল। মুশফিককে স্বাচ্ছন্দ‌্যের পজিশন থেকে সরিয়ে দলের চাহিদা পূরণ করতে পাঠানোও সেই পরীক্ষারই অংশ। মুশফিক পরীক্ষায় লেটার মার্কস পেয়ে ড্রেসিংরুমে হাসি ফুটিয়েছেন। পেয়েছেন সিরিজ সেরার পুরস্কার। সামনে এ ধারাবাহিকতা থাকলে নিশ্চিতভাবেই লেট অর্ডারে আগ্রাসী ক্রিকেটে বড় রান করার যে দুর্বলতা তা মুশফিকের ব‌্যাটেই কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ।

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়