সেই তামিম এই তামিম
স্থান মিরপুরের একাডেমি মাঠ। জাতীয় দলের অনুশীলন চলছিল মিরপুরের একাডেমি মাঠে। সদ্যই ইনজুরি থেকে ফেরা তামিম নিজেকে ফেরাতে আলাদা করে ব্যাটিং করছিলেন সেন্টার উইকেটে। ওদিকে যুব দল ইনডোর থেকে ফিরে একাডেমিতে ঢুকছিলেন। কি মনে করে যুব দলের ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম চলে গেলেন মাঠের গেটে। ছাউনিতে বসে দেখছিলেন তামিম ইকবালের ব্যাটিং। কতো স্বপ্ন তার চোখে মুখে। ইশ, তামিমের মতো যদি ব্যাটিং করতে পারতাম! স্বপ্নগুলো ডানাপালা মেলতে শুরু করে আরো কত কিছু ভাবায় তার মনে।
একটু পর তামিম ফেরেন নেট থেকে। জুনিয়র তামিমের পাশে বসে তামিম বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ব্যাট-প্যাড খুলে মাঠ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেবারই প্রথম এতো কাছ থেকে প্রিয় ক্রিকেটার বা আইডলকে সামনে থেকে দেখা তানজিদ হোসেন তামিমের। কিন্তু তাকে সাহস করে বলতে পারেননি নিজের মনের কথা। বলতে পারেননি, ‘আমার নামও তামিম। আন্ডার নাইন্টিনে খেলি
বছর পেরিয়েছে। সেই তামিমকে নিজ থেকে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জেতায় শুধু তামিম ইকবালই নন, গোটা বাংলাদেশ চিনে যায় আরেক বাঁহাতি ওপেনার তামিমকে। দুজনের পরবর্তী সাক্ষাৎ ২০২০ সালের অক্টোবরে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে। যেখানে দুই তামিমই খেলেন একই জার্সিতে। সেবারই প্রথম কথা দুজনের।
ক্রিকেট দুই তামিমের পথ মিলিয়ে দেয়। সেই পথে যে এতোটা নাটকীয়তা, এতোটা উঠা-নামার গল্প থাকে তা কতজন ধারনা করতে পারে। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন তামিমের পূরণ হতে যাচ্ছে। আসন্ন এশিয়া কাপের জন্য তামিমকে রেখে ১৭ জনের স্কোয়াড দিয়েছে বিসিবি। যে দলে থাকার কথা ছিল ‘বড়’ তামিমেরও। কিন্তু চোটের কারণে নেই বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। তার জায়গাতেই আজ প্রথমবার জাতীয় দলে জুনিয়র তামিম।
কাকতালীয় হতে পারে। কল্পনাতীতও হতে পারে। যাকে দেখে বড় হওয়া, যার প্রতি শটে আনন্দ খুঁজে পাওয়া, যার মতো করে কভার ড্রাইভ আর পুল করা, যার মতো বড় ছক্কা মারার স্বপ্ন দেখা তার জায়গা-ই নেওয়া! তানজিদ তামিমের জন্য রোমাঞ্চের সঙ্গে যেন ‘শূন্যতার’ লড়াই।
যদিও দলে জায়গা পাকাপাকির পর ম্যাচ সিনারিও অনুশীলনে তার ব্যাটিং দেখে একটুও জড়তা পাওয়া যায়নি। তাসকিনকে পয়েন্টের ওপর দিয়ে দারুণ কাট আর লেগ সাইডে ফ্লিক করে যে ছক্কাটি মেরেছেন তাতে বার্তা স্পষ্ট, বড় কিছু পেতে তৈরি হয়েই এসেছেন তিনি।
তবে এতদূর আসতে তার পথ মসৃণ ছিল না। কন্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। বগুড়া থেকে উঠে আসা তামিমের বাবা স্বাস্থ্য পরিদর্শক তোজাম্মেল হোসেন চেয়েছিলেন পড়াশোনা শেষ করে ছেলে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হবেন। কিন্তু তামিম ছিলেন ক্রিকেটপাগল। মা রেহেনা ছেলেকে ক্রিকেটার হতে উদ্বুদ্ধ করেন। আশ্বাস দেন পড়াশোনায় ভালো করলে ক্রিকেট খেলার সুযোগ মিলবে। কিন্তু বাবা কোনোভাবেই তা মানতে পারেননি।
ক্রিকেট খেলার কারণে তামিমকে তিনবার ঘর থেকে বের করে দেন। কিন্তু জেদি তামিম পড়াশোনা ও ক্রিকেট পাশাপাশি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসিতে এবং ২০১৭ সালে সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পান তামিম। এরপর আর তাকে থামানো যায়নি। অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর তামিমকে ২৫ হাজার টাকায় ব্যাট কিনে দেন। তামিমকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ব্যাট-বলের দারুণ রসায়নে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তামিম এখন জাতীয় দলের স্বপ্নসারথিদের একজন।
সামনে তার দিগন্ত বিস্তৃত ক্যানভাস। যে ক্যানভাস চাইলেই তামিম রঙিন করতে পারেন নিজের ব্যাট দিয়ে তুলির আঁচড় ছিটিয়ে। অমিত সম্ভাবনা আর বুক ভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেরাদের লড়াইয়ে টিকে যেতে পারলে এই তামিমও ছাড়িয়ে যেতে পারেন বিশ্ব ক্রিকেটের পরিচিত ও নন্দিত তামিমকে। এমনটা হয়তো তামিম ইকবাল নিজেও চাইবেন।
ঢাকা/রিয়াদ
আরো পড়ুন