মিরপুরে জয়হীন এক বছর
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
দুইটি পরিসংখ্যান দিয়ে ম্যাচের বর্ণনায় যাওয়া যাক। তাহলে আসল চিত্র খুঁজতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
প্রথম, ওয়ানডেতে ২০০৭ সালের পর এই প্রথম মিরপুরে কোনো ম্যাচ জেতা ছাড়াই বছর শেষ করল বাংলাদেশ। ওই বছর দুই ওয়ানডে খেলে কোনো জয় পায়নি। এবার পাঁচটিতে জয়হীন। দ্বিতীয়, এ বছর ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ১২ ইনিংসে আগে ব্যাট করে ছয়বারই অলআউট বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ১৯ ইনিংসে ১০ বার অলআউট! বিশ্বকাপ বছরে এমন পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই নিজেদের নামের পাশে, সামর্থ্যের পাশে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিতে যথেষ্ট নয় কি?
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে দুই ওয়ানডে হেরে শুরু বাংলাদেশের। এরপর চট্টগ্রামে গিয়ে তাদেরকে হারায় বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি এবার দেশের মাটিতে খেলা বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড হয়। দ্বিতীয় ম্যাচে সফরকারীরা জেতে ৮৬ রানে। এবার ব্যবধানে গিয়ে দাঁড়াল ৭ উইকেটে। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতল কিউইরা। ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম সিরিজ জিতল তারা।
বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এজন্য মুশফিক, শান্ত, শরিফুলকে ফিরিয়েছিল ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তাতেও ভাগ্য পাল্টায়নি। বরং ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ অলআউট মাত্র ১৭১ রানে। সেই রান তাড়া করতে গিয়ে সফরকারীরা ম্যাচ জিতেছে ৯১ বল হাতে রেখে।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ফিন অ্যালেন ও উইল ইয়ং ৪৯ রানের জুটি গড়েন। ওখানেই লড়াইয়ের সব তাড়না হারায় বাংলাদেশ। অবশ্য শরিফুলের করা দশম ওভারে কিছুটা আশার আলো দেখেছিল স্বাগতিকরা। শরিফুলের এক বিধ্বংসী ওভারে জোড়া সাফল্য আসে। ফিন অ্যালেন ২৮ রানে মিড উইকেটে ক্যাচ দেওয়ার পর অভিষিক্ত ডিন ফক্সফর্ট বোল্ড হন। তৃতীয় উইকেটে হেনরি নিকোলস ও উইল ইয়ং আবার জুটি গড়েন। ১১৮ বলে ৮১ রান যোগ করে জয় সহজ করে ফেলেন। শেষ কাজটা করেন ব্লান্ডেল ও নিকোলস। উইং সর্বোচ্চ ৭০ রান করেন। নিকোলস ৫০ ও ব্লান্ডেল ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র ছিল স্রেফ হতশ্রী। দলে ফেরা শান্ত বাদে কেউই লড়াই করতে পারেননি। দ্বিতীয় ওভারে তিনে নামা শান্তকে ব্যাটিংয়ে আসতে হয়। ক্রিজে ছিলেন ৩২তম ওভার পর্যন্ত। এ সময়ে ৮৪ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন ১০ চারে। অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা রান পেতে ভুগেছেন, শান্তর ব্যাটিংয়ে একটুও জড়তা ছিল না। বরং বেশ সাবলীল ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন ফিফটি।
বোল্টকে দারুণ কভার ড্রাইভে তানজিদের ইনিংস শুরু হলে সেই রেশ বেশিক্ষণ থাকেনি। বোল্টের দ্যুতি ছড়ানো বলে স্লিপে ক্যাচ দেন মাত্র ৫ রানে। অভিষিক্ত জাকির পেসার মিলনের বলটা ঠিকঠাক দেখেছিলেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তো ছিলই। ৫ বলে তার ইনিংস থেমে যায় ১ রানে। তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম বেশ ভালো শুরু পেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। দুজনই ফেরেন ১৮ রান করে। মিলনের বল বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে কভারে ক্যাচ দেন তাওহীদ।
মুশফিক ফার্গুসনের পেসে হয়েছেন এলোমেলো। কিউই অধিনায়কের বাউন্সার ঠিকঠাক রুখে দিলেও তার ব্যাট ছুঁয়ে পায়ের গ্যাপ দিয়ে যায় স্টাম্পে। পা দিয়ে ব্যাকহিল করে উইকেট বাঁচাতে চেয়েও পারেননি। মাহমুদউল্লাহ আরেকটি বড় ইনিংস খেলার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন আলগা শট খেলে। পেসার মিলনের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২১ রানে। অথচ আগের ওভারে ইশ সোধীকে কাভারের ওপর দিয়ে যে ছক্কা মেরেছিলেন তাতে স্টেডিয়াম জুড়ে করতালি পড়েছিল। মাহেদীও ২ চারে মুগ্ধ করেছিল।
কিন্তু পথ ভুলেছেন ওই বাজে শটে। পরের ব্যাটসম্যানরা কেউই পারেননি দলের হয়ে হাল ধরতে। পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৩৪.৩ ওভারে। স্কোরবোর্ডে পুঁজি মাত্র ১৭১ রান।
এই সিরিজে বাংলাদেশের প্রাপ্তি একদমই নেই। বরং বিশ্বকাপের ঠিক আগে বাজেভাবে দুইটি ম্যাচ হেরে আত্মবিশ্বাস আরও তলানিতে নিয়ে গেল বাংলাদেশ।
ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়