ঢাকা     শনিবার   ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পেছন থেকে এসেও বিশ্বকাপ জেতার উদাহরণ আছে

নাজমুল আবেদীন ফাহিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ৮ অক্টোবর ২০২৩  
পেছন থেকে এসেও বিশ্বকাপ জেতার উদাহরণ আছে

এবারের বিশ্বকাপটা নিয়ে এমনি একটু রোমাঞ্চিত। কারণ, প্রথমত আমরা নিকট অতীতে বিশেষত ওয়ানডে সংস্করণে ভালো খেলছি। আমাদের পারফরম্যান্স আগের তুলনায় ভালো। খুব ভালো বলব না, কিন্তু আগের তুলনায় ভালো। সেটা একটা এক্সাইটমেন্টের ব্যাপার। আরেকটা কারণ উপমহাদেশে হচ্ছে বলে। যে কন্ডিশনে খেলা হবে সেই কন্ডিশন আমাদের খেলার সঙ্গে মানায়। 

উপমহাদেশের বাইরে গেলে আমাদের যে চ্যালেঞ্জ গুলোর মুখোমুখি হতে হয় সেটা এখানে হবে না। এটা একটা ইতিবাচক ব্যাপার আমাদের দলের পারফরম্যান্সের জন্য। এই দুইটা ব্যাপারই খুব এক্সসাইটিং আমাদের জন্য। যেহেতু দল আগের তুলনায় ভালো, কন্ডিশনটাও মোটামুটি আমাদের মতোই, আমরা আশা করতে পারি এবার ভালো খেলবে বাংলাদেশ। 

আরো পড়ুন:

একটু দুঃখজনক ব্যাপার হলো এই মুহূর্তে আমাদের দল কিছুটা অগোছালো। কিছুদিন আগেও আমাদের দলটা গোছানো ছিল। মোটামুটি ধারাবাহিকতা ছিল দলের পারফরম্যান্সে। কিন্তু গত কিছুদিনের নানা ঘটনার কারণে এই মুহূর্তে দলটা একটু অগোছালো। কিছু ইনজুরি বা বেশ কিছু ঘটনা, সবকিছু মিলিয়ে আমরা অগোছালো। ওই জায়গাটাই বলবো একটু সংকট আছে।

বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত আমাদের হাতে কিছুটা সময় আছে। এই কিছু সময়ের মধ্যে আমাদের দল গোছাতে হবে। আমাদের উদ্বোধনী, টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের সংকট দেখা যাচ্ছে। দলকে আমরা কিভাবে সাজাবো, আমাদের ৭-৮ নম্বর জায়গায় কে খেলবে না খেলবে এইসব নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আশা করব যে, এগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। নিউ জিল্যান্ড সিরিজ আমাদের ফাইনাল প্রস্তুতি। এই সিরিজের মধ্যে দিয়ে একটা চূড়ান্ত দলও পাবো, ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আমরা আল্টিমেটলি বিশ্বকাপ খেলতে যেতে পারব। 

এবারের বিশ্বকাপ একদিক থেকে চ্যালেঞ্জিং হবে কারণ আগে তিনশ রান আমরা গড় স্কোর ভাবতাম। এবার কিন্তু তার চাইতেও বেশি রান হবে। ইংল্যান্ড যেভাবে খেলছে, অস্ট্রেলিয়া যেভাবে খেলছে, খেলার যে ধারা আগের তুলনায় আরও বেশি আক্রমণাত্মক খেলছে তারা। এমনও হতে পারে আমরা এবার হয়তো আরও অনেক বেশি রান দেখতে পারব। যে গড়  স্কোরটা হয়, সেটা হয়তো বেশি হবে। সেটা একটা চ্যালেঞ্জ হবে আমার মনে হয়। 

একটা ভালো দিক হলো- একটা সময় আমাদের বোলিংয়ে ঘাটতি ছিল। হয়তো পুরো ৫০ ওভারের মধ্যে ৩০ ওভার বোলিং করার মতো বোলার আমাদের ছিল। শেষ ২০ ওভার ভালো করার মতো বোলার আমাদের ছিল না। এখন কিন্তু মোটামুটি ৫০ ওভার বোলিং করার মতো বোলার আমাদের আছে এবং উইকেট নেওয়ার মতো। বিপক্ষ দল যে খুব সহজে আমাদের বিপক্ষে রান করে ফেলবে তা কিন্তু নয়। আমাদের যেটা করতে হবে কম রানে আটকে দিতে হবে। যেটা আমরা ডিফেন্ড করতে পারব। সেই জায়গাটাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে আমাদের ব্যাটারদের। এই জায়গায় কিছু ঘাটতি এখন আছে। যদি সব খেলোয়াড়রা চলে আসে এবং কিছুটা ফর্ম ফিরে পায় আমরা হয়তো ভালো খেলতে পারব। 

কিছুদিন আমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছি, যেটা এখনকার ট্রেন্ডের সঙ্গে যায়। বিষয়টা যদি আমরা করতে পারি, আমরা আফগানিস্তানের (এশিয়া কাপে) সঙ্গে যে ম্যাচটা খেললাম, এই রকম ম্যাচ খেলার ক্ষমতা আমাদের আছে কিন্তু। জিনিসটা হলো সেই জায়গাটায় বোঝানো। একটা দল বিশ্বকাপে খেলতে যাবে, ঠিক সময় মতো যদি আমরা পিক করতে পারি, সময় মতো ড্রেসিংরুটাকে ওই জায়গায় নিতে পারি, সবার মানসিকতায় ওই জায়গায় পৌঁছানোর ব্যাপার থাকে। তাহলে কিন্তু আল্টিমেটলি এই দল ভালো করবে।

আমাদের দল এই বিশ্বকাপের সেরা দল নয়। আমাদের প্রত্যেককে নিজেদেও সেরা ক্রিকেটটা খেলতে হবে। ক্যাপ্টেনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল- সবার খেলাটাকে আদায় করে নেওয়া। সেই পরিবেশ তৈরি করা। সেইভাবে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া। প্রয়োজনীয়  কিছু করা। পারফরম্যান্সটা আদায় করে নেওয়ার বড় দায়িত্ব থাকবে সাকিবের। 

অস্ট্রেলিয়া বলি-ইংল্যান্ড বলি, সবাই কিন্তু খেলতে আসে, বিশেষ করে ভারতে আইপিএলে  খেলতে আসে। ওরা বরঞ্চ আমাদের চাইতে ভালো জানে, ওই দেশের মাঠের ক্রিকেটের কি অবস্থা। আগের যে রহস্য ছিল, সেটা কিন্তু নেই। ওই অ্যাডভান্টেজ, সাব কন্টিনেন্টের দেশ হিসেবে ওই অ্যাডভান্টেজ আমরা পাবো না। ওরা স্পিনে খারাপ খেলে বা কন্ডিশন ওরা চেনে না, ব্যাপারটা তা না। বরঞ্চ ওরা আমাদের চাইতে বেশি চেনে। 

সেই সব হিসাব-কিতাব করলে কিন্তু ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে রাখতে হবে। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া, ভারত যেহেতু হোম টিম এবং খুবই ভালো দল। ভারতের ব্যাপারে বলতে হবে, তারা খুব চাপে থাকবে। ইনিশিয়ালি যদি খুব ভালো রেজাল্ট করতে না পারে তাহলে ওরা খুব চাপে থাকবে। পাকিস্তানের ভালো করার সম্ভাবনা আছে। কারণ পাকিস্তান ভালো  খেলছে এবং মোটামুটি ভালো দল। ওরা চাপ না নিয়ে খেলছে কিন্তু। ওরা চারদিক থেকে সমর্থন পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া আছে, ইংল্যান্ড আছে, নিউ জিল্যান্ডও আছে কিন্তু। নিউ জিল্যান্ড গতবারের ফাইনালিস্ট। ওরাও যে কোনো সময়, যে কোনো ম্যাচ জিতে যেতে পারে কিন্তু। বেশ কয়েকটা দল আছে কিন্তু। 

যেভাবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট খেলছে রিসেন্টলি, ওদের যেই ফর্ম...বেন স্টোকস, মঈন আলী, ক্রিস ওকস এরা সবাই দারুণ করছে। উইকেটরক্ষক বাটলারসহ সবাই আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দারুণ কিন্তু। ইংল্যান্ডকে বোধহয় খানিকটা এগিয়ে রাখতে হবে। নট নেসেসারিলি সেরা দলই সব সময় জেতে। 

অনেক বিশ্বকাপে আমরা দেখেছি সেরা দল জেতেনি, পেছন থেকে এসে বিশ্বকাপ জিতেছে। সেটা আমাদের জন্য একটা অনুপ্রেরণার । আমরাও সেরা দল নই, তবে আমরাও ফেলে দেওয়ার মতো একটা দল না কিন্তু। আমরা যদি আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারি, আমরাও কিন্তু ভালো করতে পারব এই বিশ্বকাপে। আবার বলছি, সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলেই ভালো কিছু সম্ভব। 

লেখক: নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ক্রিকেট উপদেষ্টা, বিকেএসপি

ঢাকা/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়