ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

স্পিন বধ্যভূমিতে তিনের গেরো ছুটানোর অপেক্ষা

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩  
স্পিন বধ্যভূমিতে তিনের গেরো ছুটানোর অপেক্ষা

‘হাফ জব ডান, হাফ জব রিমেইন।’-বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সিলেট টেস্ট জয়ের পর যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সারাংশ দাঁড়ায় এই। ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজ জয়ে চোখ তার। অবশ্য সিলেটে মাঠে নামার আগেই শান্ত নিজের লক্ষ্য জানিয়েছিলেন এভাবে, ‘এই দুইটা ম্যাচ আমরা জিততে পারি। জেতার জন্যই খেলব। সবার মধ্যে এই বিশ্বাসটা আছে।’

সিলেটে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে, ড্রেসিংরুমে ‘আমরা করবো জয়’ গান গেয়ে শান্তর আত্মবিশ্বাস এতোটাই বেড়েছে যে, ঢাকায় জয় ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারছেন না। প্রথম সেশনের আগে দলের জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় দ্রুততম সময়ে ঢাকায় ফিরে আসেন অধিনায়ক। পরিবারকে বাড়তি এক দিন সময় দিয়ে ফুরফুরে থাকতেই তার ছুটে আসা। শুধু অধিনায়ক নন, তার সঙ্গী হয়েছেন আরো অনেকেই। বাকিরা আজ দলের সূচি অনুযায়ী সিলেট থেকে ঢাকায় পৌঁছেছেন। 

বিশ্বকাপের পরপর টেস্ট সিরিজ থাকায় দলের ভেতরে একপ্রকার অস্বস্তি ছিল। বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে গুমোট হয়ে ছিল পরিবেশ। কিন্তু সিলেটে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলায় সেই অস্বস্তি কেটে গেছে নিমিষেই। এখন ঢাকায় মিশন কমপ্লিটের পালা। তবে এবারের ক্যানভাসটা আরো বিশাল। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দীর্ঘ ২৩ বছরের পথচলায় ফি বছর তিনটির বেশি ম্যাচ কখনো জেতেনি বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে এক বছরে তিনটিই জয়ই সর্বোচ্চ অর্জন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ তিনটি করে ম্যাচ জিতেছিল। সুযোগ ছিল আরো বেশি ম্যাচ জেতার। কিন্তু পারেনি। এবার সেই গেরো ছুটানোর বড় সুযোগ রয়েছে শান্ত অ্যান্ড কোম্পানির সামনে।

সাদা পোশাকে বাংলাদেশের বছর শুরু হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। মিরপুরে একমাত্র টেস্ট জিতেছিল ৭ উইকেটে। এরপর জুনে আফগানিস্তানকে আতিথেয়তা দিয়ে বাংলাদেশ মিরপুরে ম্যাচ জেতে ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে। যা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়। সবশেষ সিলেটে নিউ জিল্যান্ডকে হারানোর স্মৃতি এখনও তরতাজা। ঢাকায় ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় টেস্ট। বছরের শেষ টেস্ট ম্যাচটি জিততে পারলে নিশ্চিতভাবেই সাদা পোশাকে নিজেদের সেরা বছর হয়ে থাকবে ২০২৩। সঙ্গে যোগ করা ভালো, ঢাকায় নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে পারলে এবারই প্রথম কোনো বছরে ম্যাচ না হারার রেকর্ড গড়বে বাংলাদেশ। 

২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকে পর প্রতি বছর একটি হলেও টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০০, ২০০৯, ২০১৫, ২০১৬, ২০২০ সালে একটি করে ম্যাচ হেরেছে। এর চেয়ে বেশি পরাজয় তো আছেই। ঢাকায় ব্যাট-বলের দোর্দণ্ড প্রতাপ অব্যাহত থাকলে ম্যাচ জয় অস্বাভাবিক কিছু নয়। সবচেয়ে বড় আশার বিষয়, ম্যাচটা হবে মিরপুরের স্পিন বধ্যভূমিতে। এ বছর মিরপুরে যে দুটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, সেগুলো দুই পরিকল্পনায় এগিয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন রাজ্য। আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্পোর্টিং উইকেট। দুই পরিকল্পনায় সফল বাংলাদেশ। 

কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাসমান পাড়ের দেশটিকে স্পিন বধ্যভূমিতে নাকানিচুবানি খাওয়াবেন তা অজানা নয় কারোই। অতীতে উপমহাদেশের বাইরের দুই দল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে একই টোটকায় খাবি খাইয়েছেন তিনি। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করা সিরিজে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে অতিথিদের ৩২ উইকেট নিয়েছিলেন স্পিনাররা। পরের বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ড্র করা সিরিজেও ৩৪ উইকেট পেয়েছেন স্পিনাররা। মিরপুরের সাফল্যের হার আরেকটু বেশি। 

শেষ ৫ বছরে মিরপুরে হওয়া ৭ টেস্টে বোলাররা পেয়েছেন ২১৫ উইকেট। যেখানে স্পিনাররা নিয়েছেন ১২৬ উইকেট। পেসাররা ৮৯। বাংলাদেশের সাফল্য ১০৮ উইকেট। দশ স্পিনার পেয়েছেন ৬৯ উইকেট। ৬ পেসাররা পেয়েছেন বাকি ৩৯ উইকেট। এই বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সিলেট টেস্টের নায়ক তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনার ২৫.৩৮ গড় ও ২.৫৩ ইকোনমিতে পেয়েছেন ৩১ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ ২৮.৬১ গড় ও ২.৫২ ইকোনমিতে ১৩ উইকেট পেয়েছেন। সমান সংখ্যাক উইকেট সাকিবের। তার গড় ২৪.৪৬, ইকোনমি ২.৮৯। এছাড়া নাঈম হাসানের উইকেট ১২টি। 

তাইজুলের সঙ্গে মিরাজ ও নাঈম খেলেছিলেন সিলেটে। ঢাকায় নিশ্চিতভাবে স্পিন ত্রয়ী হাত ঘুরাবেন। মিরপুরের স্পিন বধ্যভূমিতে আরেকটি বড় দলকে ‘শিকারের’ অপেক্ষায় বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় বাজে না খেললে ম্যাচের সম্ভাব্য ফল নিজেদের পক্ষে ধরে নেওয়া ভালো।

ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়