ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

টিএসসিতে ইফতার - অন্যরকম ভালোলাগা

নাসির উদ্দিন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৮ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টিএসসিতে ইফতার - অন্যরকম ভালোলাগা

বন্ধুরা মিলে টিএসসিতে ইফতার (ছবি : সংগৃহীত)

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : টিএসসিতে সারা বছরই আড্ডা লেগে থাকে। আর রমজান মাস এলে এই আড্ডা হয়ে ওঠে আরো জমজমাট।

দিনভর নানা ঝক্কি ঝামেলা শেষে ইফতার করতে অনেকেই ছুটে আসেন টিএসসির প্রাঙ্গনে। পরিবারের বাইরে দুই একটি দিন বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে পেরে একটু অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব করেন।

বিকেল থেকেই অনেক ছোট বড় জটলা চোখে পড়ে টিএসসি প্রাঙ্গনে। কেউ খোলা মাঠে কেউ বা ছাউনির নিচে জায়গা করে নেয়। আযানের আগ পর্যন্ত চলতে থাকে ইফতারের প্রস্তুতি। আলাদা আলাদা করে দু-একটি জুটি, ছোট ছোট দল কিংবা বিশ-ত্রিশ জন মিলে একসাথে খাওয়া আর আড্ডা।

অভিজাত খাবারের কোনো আইটেম থাকে না টিএসসির এই ইফতার আয়োজনে। থাকে রাস্তার ধারে বিক্রি করা বিভিন্ন ধরনের সাদামাটা ইফতার সামগ্রী। এর মধ্যে আছে মুড়ি, ছোলা, বেগুনি, পিয়াজু, আলুর চপ, খেজুর, কলা, জিলাপি, বুন্দিয়া, শরবত ইত্যাদি। আর এসব ইফতার সামগ্রী পাওয়া যায় অল্পমূল্যে।

টিএসসিতে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আল-নাহিয়ান খান জয়। এ সময় তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, রমজান মাসের যে কোন একদিন বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে টিএসসিতে চলে আসি। সবসময়তো হলে বসেই ইফতার করে থাকি।

একদিন একটু খোলা আকাশের নিচে বসে পুরনো সব বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করলাম। আর একসাথে আড্ডাও দেয়া হল। নিজেরাই চাঁদা দিয়ে এ আয়োজন করেন বলে জানান তিনি।

আমাদের ইফতারের এই আয়োজনে আপনাকে স্বাগতম, জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক ছাত্র রিয়াদ বলেন, টিএসসির সবুজ ঘাসে বসে ইফতার করার মজাই আলাদা। অনেকে এখানে আলাদা আলাদা বসে ইফতার করলেও মনে হয় আমরা সবাই একসঙ্গেই আছি।

এছাড়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সময় পেলেই সপরিবারে চলে আসেন টিএসসিতে ইফতার করতে। আর সেদিন তারা হারিয়ে যান অতীতের সেই ছাত্র জীবনের দিনগুলোতে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই এমন মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।

প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি আমার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করতে চলে এসেছি টিএসসিতে। এখানে এসে পুরনো সব সৃতিগুলো খুব বেশি করে মনে পড়ছে। বন্ধুরা সবাই হৈ হুল্লোড় করে একসঙ্গে কত ইফতার করেছি। সেই দিনগুলো আর নেই। তবে টিএসসি সেই আগের রূপেই আছে।
এখনও অনেক মানুষের আনাগোনা এখানে। তাইতো ইফতার করতে আসা অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। শুধু টিএসসির মাঠই নয়, করিডোরও খালি নেই। যে যেখানে পারছে, ইফতার করতে বসে পরছে। এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

দীর্ঘদিন পর স্বজ্জনদের দেখা-সাক্ষাতের একটা উপায় হিসেবেও এখানকার ইফতার জমজমাট। ইফতারের পর গাল-গল্পের পাশাপাশি চলে হাসি-ঠাট্টা আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন এবং জেলা সংগঠনগুলোও টিএসসিতে ইফতারের আয়োজন করে থাকে। এতে সংগঠনের সব সদস্যের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এটিকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। বেশিরভাগ সময় সকল সদস্যের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে সম্পন্ন হয় এসব সংগঠনের ইফতার।

এভাবেই প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাদামাটা আয়োজনে জমজমাট ইফতারের আসর বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গনে।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। তারপরও ভাঙে না এ আড্ডার মেলা। তবে ঘরে তো ফিরতেই হয়। তাই এক সময় যে যার গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেন এবং সঙ্গে নিয়ে যান একটি দিনের কিছু সময়ের মধুর স্মৃতি।

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮জুলাই,২০১৪/নাসির/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়