ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘স্ট্যান্ড স্টিল, গড উইল ফাইট ফর ইউ’

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২১, ৩১ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ১২:২২, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
‘স্ট্যান্ড স্টিল, গড উইল ফাইট ফর ইউ’

শর্ট বলটা দুই ফিল্ডারের ফাঁক দিয়ে বের করতে পারলেন আমানজত কৌর। স্কোরবোর্ডে যোগ হলো আরো ৪ রান। ইতিহাস গড়তে ২ রানের প্রয়োজন ছিল ভারতের। ওই চারে সীমানা পেরিয়ে ভারত চলে যায় স্বপ্নের বিশ্বকাপের ফাইনালে। 

সাবেক বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে মাটিতে নামিয়ে ৩৩৮ রানের বিশাল বাধা টপকে সেমিফাইনাল জিতেছে ভারত। মুম্বাইয়ের নাভিতে ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে লেখা হয়ে যায়, ভারত নারীদের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়ল। এ জয়ের রচয়িতা জেমিমা রদ্রিগেজ। 

২২ গজে তুলির আঁচড়ে অনিন্দ‌্য সুন্দর রান তাড়ায় দলকে ফাইনালে তুলেছেন জেমিমা। পুরো বিশ্বকাপে পারফরম‌্যান্সের ওঠা-নামায় নিজের ছায়া হয়ে থাকা জেমিমা বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিবেদন, সততা থাকলে সৃষ্টিকর্তাও একদিন না একদিন মুখ তুলে তাকাবেন, বিজয় তিলক পড়াবেন।

১৩৪ বলে ১২৭ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। এমন ইনিংস পুরো ক্রিকেটীয় জীবনে একবারই খেলা যায় বলে মত দিলেন ইয়ান বিশপ। রান তাড়ায় কত কিছুই না হলো জেমিমার সঙ্গে। তাকে তিন নম্বরে ব‌্যাটিংয়ে পাঠানো হবে জানতেন না। শাওয়ার নেওয়ার সময় সতীর্থকে বলে গিয়েছিলেন ডাকতে। হুট করেই তাকে বলা হয়, হাতে ৫ মিনিট সময় আছে প্রস্তুত হওয়ার।

জীবনের মোড় ওই ৫ মিনিটেই ঘুরে যায় জেমিমার। এরপর মাঠে নামলেন, খেললেন, হাসলেন, ভুল করলেন। আবার জেগে উঠলেন। আবার ভুল করলেন। আবার লড়লেন। পুরো চক্রের মতো ঘুরতে থাকলেন। কিন্তু, শতভাগ নিবেদন দিয়ে, অযুত-নিযুত ঘামবিন্দু ঝরিয়ে চুন্নি-পান্নার উজ্জ্বলতায় জ্বলে আলোকিত তিনি।

পুরো ক্রিকেট বিশ্বের কুর্ণিশ আদায় করে নেওয়া জেমিমা দুই হাত জোর করে প্রার্থনায় মগ্ন থাকলেন। বাবা-মাকে জড়িয়ে কাঁদলেন। সতীর্থদের ভালোবাসায় আবদ্ধ হলেন। কোচ, টিম ম‌্যানেজমেন্টদের স‌্যালুট পেলেন।

এই লড়াই, তেজোদীপ্ত হয়ে ওঠা—সবটাই সম্ভব হয়েছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসার কারণেই। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে অশ্রুসিক্ত জেমিমা কথার ঝাঁপি খুলে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করলেন, “যত সময় শেষ হয়ে আসছিল, তখন বাইবেল থেকে একটা স্ক্রিপচার বারবার বলছিলাম। সেটা হলো, স্ট্যান্ড স্টিল, গড উইল ফাইট ফর ইউ। ঠিক তা-ই হয়েছে। গড লড়লেন আমার জন্য। আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম শান্ত থাকতে।”

জেমিমা কাঁদছিলেন অঝোরে। কিছুতেই থামছিল না সেই কান্না। কাঁদতে কাঁদতেই জেমাইমা বলছিলেন, “জেসাসকে ধন্যবাদ। তিনি না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। আমার মা–বাবা, কোচ এবং টিমের সবাইকে ধন্যবাদ। কারণ, আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন সবাই।”

পুরো ইনিংসের পেছনের গল্প শোনাতে গিয়ে জেমিমা বলেছেন, ‘‘আমি জানতাম না যে, ৩ নম্বরে ব্যাট করতে হবে। আমি স্নান করছিলাম। শুধু বলেছিলাম আমাকে জানাতে। মাঠে নামার পাঁচ মিনিট আগে, আমাকে বলা হয়েছিল যে, আমি ৩ নম্বরে ব্যাট করছি। আজ আমার পঞ্চাশ বা শতরানটা বিষয় নয়। ভারতকে জিতিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল। একটা সেটআপ ছিল। আগে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো আমরা হেরেছি।”

বিশ্বকাপের মঞ্চে ভালো করতে না পারার আর্তনাদ ফুটে উঠে তার কণ্ঠে, “গত বছর আমাকে এই বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কোনোকিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এই সফরে আমি প্রায় প্রতিদিনই কেঁদেছি। মানসিকভাবে ভালো জায়গায় ছিলাম না। একটা উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। জানতাম, আমাকে জ্বলে উঠতে হবে।”

“আমার চারপাশে দুর্দান্ত সব মানুষজন আছে, যারা আমার ওপরে আস্থা রাখে। দল থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার কাছে চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়ায়। তবে, আমি ভেবেছিলাাম যে, আমায় দেখিয়ে দিতে হবে।”

জেমিমা হাতে ম‌্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে নিজেকে সামলে নেন। চোখের কোণে অশ্রু জমে আছে— আনন্দাশ্রু। পুরো ভারতবর্ষ পেরিয়ে ক্রিকেট বিশ্বও সেই আনন্দে শামিল। 

ঢাকা/ইয়াসিন/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়