ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চিতলমারীতে শহীদের স্মরণে নির্মাণ হচ্ছে স্মৃতিফলক

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ২৫ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিতলমারীতে শহীদের স্মরণে নির্মাণ হচ্ছে স্মৃতিফলক

গণহত্যার স্থান দেখাচ্ছেন প্রমিলা মণ্ডল

বাগেরহাট প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী গ্রামে বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।

একাত্তরে  পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের নানা কাহিনী এখান থেকে উঠে এসেছে। সেই ২৫ মার্চ এখানে অসংখ্য নিরীহ লোককে ধরে হত্যা করা হয়েছিল। সে ইতিহাস এতদিন অনেকের কাছে অজানা ছিল। এখানে সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের অনেকের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। প্রথম বারের মত শনিবার সকালে সেখানে শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলায়  আষাঢ় মাসের ৫ তারিখ সকালের দিকে পাকবাহিনী ও  তাদের দোসরা এলাকায় আক্রমণ চালায়। বলেশ্বর নদী দিয়ে গানবোটযোগে তারা প্রবেশ করার পথে নির্বিচারে গুলি  চালায়। এ সময় লোকজন প্রাণভয়ে এদিক ওদিক পালাতে থাকে।

আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশ্রয়  নিতে আসা লোকজন এবং অনেক গ্রামের মানুষ উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে হোগলা ও নলবনে লুকিয়ে থাকার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখতে পেয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য নীরিহ লোকজনকে হত্যা করে। এদের অনেকের বাড়ি পিরোজপুর, নাজিরপুর, উজিরপুর ও কচুয়াসহ আশপাশের এলাকায় ।

চিতলমারী উপজেলার পূর্বখড়মখালী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি গৌর চন্দ্র মজুমদার সেদিনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, সেদিন বলেশ্বর নদী দিয়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা আক্রমণ চালায়। গুলির শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। অনেকে খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী  গ্রামের একটি  মাঠের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখে ফেলায় গুলি চালিয়ে খড়মখালী  গ্রামের বিমল কান্তি হীরা, ভদ্র কান্তি  হীরা, রাজদেব হীরা, যোগেন্দ্র নাথ মজুমদার, মহেন্দ্র নাথ মণ্ডল, আদিত্য মজুমদার, নীলকমল  মণ্ডল, জিতেন মজুমদার, খগেন  মণ্ডলসহ আশপাশের এলাকা থেকে আশ্রয় নেওয়া অসংখ্য লোককে হত্যা করা হয়।

 



খলিশাখালি গ্রামের বৃদ্ধা প্রমিলা মণ্ডল বলেন, আমি নিজেই হত্যাযজ্ঞের সেই ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের আমি রান্না করে দিয়েছি।

চিতলমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো. আবু তালেব শেখ জানান, ওইদিন বাগেরহাট থেকে কুখ্যাত রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে পাকবাহিনী এলাকায় প্রবেশ করে বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগসহ হত্যাযজ্ঞ  চালায়।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও এ স্থানটি এতদিনে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা  হয়নি।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ জানান, মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী খলিশাখালী এলাকায় গণহত্যার সন্ধান পাওয়া যায়।

ওই স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া  হয়েছে। এ ছাড়া যারা শহীদ হয়েছেন তাদের খোঁজ নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার।



রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/২৫ মার্চ ২০১৭/আলী আকবর টুটুল/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়