ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে হঠাৎ পরিবহণ ধর্মঘট, ভোগান্তি

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫২, ৩০ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টাঙ্গাইলে হঠাৎ পরিবহণ ধর্মঘট, ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়া সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৭-এর অস্পষ্টতা দূর করে সংশোধনের দাবিতে টাঙ্গাইলে বৃহস্পতিবার দিনভর বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ ছিল।

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অধিকাংশ যান চলাচল বন্ধ করে দেয় চালক ও শ্রমিকরা। ধর্মঘটের ফলে টাঙ্গাইল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা।

বিকেল ৪টায় জেলা বাস-কোচ-মিনিবাস মালিক সমিতি ও বাস-কোচ-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করায়। শ্রমিকদের দাবি, এমন কোনো আইন করা হোক, যা চালক-শ্রমিকদের জন্য সহনীয় হবে। 

বাস চালকরা জানান, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ করা হচ্ছে। সে আইনের অধিকাংশ ধারা চালকদের বিরুদ্ধে। এ আইনের বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পাস, চালকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান, আমলযোগ্য অপরাধে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেপ্তার করতে পারার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়- বলে তারা জানিয়েছেন।

চালকদের দাবি, নিজের জীবনের মায়া কার না আছে? আর কোনো চালকই ইচ্ছা করে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটায় না। কিন্তু দেশের আইনই যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে, এ অবস্থায় কীভাবে গাড়ি চালাবেন তারা। এ অভিযোগে প্রতিটি চালকই গাড়ি চালানো বন্ধ রাখেন।

আরেক বাস চালক রুবেল হোসেন বলেন, যারা আজকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে, তারপর তারা ড্রাইভার হয়েছে। এখন কি তারা আরও তিন বছর লেখাপড়া করতে পারবে? যারা লেখাপড়া করে না তারাই পরিবহণ  শ্রমিক হতে আসে। কারণ তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না।

দুপুরে জেলা শহরের একমাত্র বাসস্ট্যান্ড নতুন বাস টার্মিনালে দেখা যায়, পরিবহণ শ্রমিকদের কোনো ঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘটে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন  সাধারণ যাত্রীরা। দীর্ঘক্ষণ বাসস্ট্যান্ডে বসে থেকে বাস না পেয়ে অনেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পায়ে হেঁটেই যাত্রা করেছেন গন্তব্যে।

ঢাকাগামী যাত্রী মজিদ মিয়া জানান, আকস্মিক বাস বন্ধ হওয়ায় প্রয়োজন সত্ত্বেও তার ঢাকা যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা যাবে বলে কয়েকটি বাসের শ্রমিকরা যাত্রী ঢাকছে কিন্তু ভাড়া চাচ্ছে ডাবল।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীর লুৎফর রহমান লালজু বলেন, গত ২৭ মার্চ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে পরিবহণ আইন সংশোধন করে যে আইন অনুমোদন হয়েছে, এতে চালকদের মনে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। আইনে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তার জন্য চালক-শ্রমিকদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা দীর্ঘ দিন এ সেক্টরে কর্মরত আছে, তাদের অনেকেই লেখাপড়া জানে না। নতুন আইন অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পাস না হলে তাকে ড্র্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে না। এ সব বিষয়ের কারণে শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে জেলার ৮০ শতাংশ যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলা এ ধর্মঘটে শ্রমিক ইউনিয়নের কোনো সমর্থন ছিল না বলে জানিয়েছেন তিনি।

মীর লুৎফর রহমান লালজু বলেন, জনগণের দুর্ভোগের কথা ভেবে মালিকদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আলোচনা করে শ্রমিকদের অনুরোধ করে ধর্মঘট প্রত্যাহার করিয়েছেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/৩০ মার্চ ২০১৭/শাহরিয়ার সিফাত/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়