ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভাসমান সেতু এখন উৎসবস্থল ও পিকনিকের স্পট

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাসমান সেতু এখন উৎসবস্থল ও পিকনিকের স্পট

বি এম ফারুক, যশোর : যশোরের মণিরামপুরে ঝাঁপা বাঁওড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার কষ্ট লাঘবে অর্ধশতাধিক যুবকের অর্থায়নে গড়ে তোলা ভাসমান সেতুটি এখন রীতিমতো উৎসবস্থল ও অর্থনৈতিক আয়ের উৎসস্থলে পরিনত হয়েছে।

ভাসমান সেতুটি ইতিমধ্যেই দৃষ্টি কেড়েছে মানুষের। সেতু দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিনিয়ত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আশেপাশের বিভিন্ন এলাকাসহ দূর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ সেতু দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। তবে ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের চাপ থাকছে সবচেয়ে বেশি।

এমন কী অনেকে এখানে দল বেঁধে পিকনিক করতেও আসছেন । সেতুর পশ্চিম পাড়ে ঝাঁপা গ্রামে একটি পিকনিক স্পটও গড়ে উঠেছে। সেতু নির্মাণ কমিটিসহ স্থানীয়দের প্রায় ত্রিশ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে স্পটটি। আবার দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে ওই পাড়ে বসেছে নাগরদোলা। একইসাথে সেতুর দুই পাড়ে বসেছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী দোকান। ফলে সেতুটি ঘিরে কর্মসংস্থানের পথও তৈরি হয়েছে । বেড়েছে দোকানপাট ও বেচাকেনা।

সেতুটি ঘুরে দেখতে দর্শনার্থীদের জন্য ৫, ১০ ও ২০ টাকা মূল্যে টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। ব্রিজের দুই পারে ৫-৬ জন্য ব্যক্তি এই টিকিট বিক্রির কাজে ব্যস্ত। দিনে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টিকিট বিক্রি করে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করছেন সেতু নির্মাতা কমিটি।

দর্শনার্থীদের চাপে ব্রিজ সংরক্ষণে ব্রিজের কারিগর রবিউল ইসলামকে সবসময়ই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। ভাসমান সেতুর কারিগর রবিউল ইসলাম জানান, ‘মূলত গ্রামবাসীর পারাপারের জন্যই ব্রিজটি তৈরি করা হয়েছে। এত চাপ হবে বুঝতে পারিনি। তাই ব্রিজ সংরক্ষণে গত তিনদিন ধরে কাজ করছি।’
 


ভাসমান সেতু দেখতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোটরসাইকেলে এসেছেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তিন ছাত্র। কথা হয় তাদের সঙ্গে। জানালেন, ফেসবুকে সেতুটি দেখে তারা এসেছেন। সেতু দেখে তাদের অনেক ভাল লাগছে।

যশোরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভাসমান সেতু দেখতে এসেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান। তার গাড়ির চালক জানালেন, ব্রিজ দেখে তার স্যার খুবই খুশি।

সদর উপজেলার রুপদিয়া এলাকা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন রিয়াজ উদ্দিন তুহিন । জানালেন তার কাছেও ব্রিজটি দেখতে অসাধারণ।

এমনি প্রতিদিনই প্রিয়জনকে নিয়ে আসছেন হাজারও মানুষ। আবার অনেকে সেতু দেখতে এসে বাড়তি আনন্দ পেতে চড়ে বসছেন নৌকায়, ঘুরে দেখছেন বাঁওড়।

সেতু দেখতে আসা লোকজনকে আনন্দ দিতে বাঁওড়ের পশ্চিম পাড়ে নাগরদোলা বসিয়েছেন সদর উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামের আক্কাস আলী। তিনি বলেন,‘গত শুক্রবারে এসেছি। প্রতিদিন পনেরশ থেকে আঠারশ টাকা আয় হয়। সেখান থেকে এখানকার কমিটিকে দুইশ করে টাকা দিয়ে যা থাকছে কোনরকম চলছে।’
 


বাঁওড়ের পশ্চিম পাড়ের মিষ্টির দোকানদার আকতারুজ্জামান লালটু বলেন, ‘আগে দোকানের পাশাপাশি গাড়ি চালাতাম। দোকানের আয়ে সংসার চলত না। এখন ব্রিজ হওয়ায় গাড়ি বাদ দিয়ে সারাদিন দোকানে থাকছি। প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা বিক্রি হয়।’ এছাড়া বাঁওড়ের দুই তীরে বাদাম, চটপটি, ঝালমুড়ি ও চানাচুরসহ কয়েকটি দোকান বসেছে। সবার বেচাকেনা ভাল বলে জানান দোকানদাররা।

ভাসমান সেতুটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘জেলা প্রশাসক সেতু’। জানতে চাইলে ভাসমান সেতুর উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু বাঁওড়টি সরকারি। জেলা প্রশাসক বাঁওড় নিয়ন্ত্রণ করেন। তাছাড়া সেতু নির্মাণে শুরু থেকে জেলা প্রশাসক আমাদের পাশে ছিলেন। এই ডিসি তো আর স্থায়ী থাকবেন না। পরবর্তী কোন ডিসি এসে যদি প্রশ্ন তোলেন, কেন বাঁওড়ের ওপর সেতু নির্মাণ করা হলো।’ এসব সমস্যা এড়াতে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়েছে,‘জেলা প্রশাসক সেতু’ বলেন তিনি।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সেতু দেখতে আসা মানুষের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। দর্শনার্থীদের চাহিদার কথা ভেবে এখানে এলাকাবাসীর ত্রিশ বিঘা জমির ওপর মেহগনি ও আম বাগানে একটা পার্ক তৈরি করা হয়েছে। পার্ক সাজাতে কাজ চলছে। উপস্থিত দুটি টয়লেট ও একটি টিউবয়েল স্থাপন করা হয়েছে। এই পর্যন্ত গত দুই শুক্রবারে চালুয়াহাটির একটি মাদরাসা থেকে ও ইউনিলিভার কোম্পানির মণিরামপুরের একটি গ্রুপ এখানে পিকনিকে এসেছে। আগামী শুক্রবারে ঝিকরগাছা থেকে একটি দল পিকনিকে আসার কথা রয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের বিষয়টি এখন আমরা প্রচার করতে চাচ্ছি না। আগামী ২৭ তারিখে আমাদের একটা মিটিং আছে। মিটিং এর পর আয়ের বিষয়টি আপনাদের জানানো যাবে।’

উল্লেখ্য, ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে সেতুটি তৈরি করেন। নিজেদের পরিকল্পনা দিয়েই ৮ শতাধিক প্লাস্টিকের ড্রাম, ৮০০ মণ লোহার অ্যাঙ্গেল পাত ও ২৫০টি লোহার সিটের মাধ্যমে লোহার পাত দিয়ে একেরপর এক ড্রাম যুক্ত করে তৈরি করেন চার ফুট চওড়া এক হাজার ফুট দীর্ঘ সেতুটি। গত ২ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দীন সেতুটি উদ্বোধন করেন।



রাইজিংবিডি/যশোর/২৪ জানুয়ারি ২০১৮/বি এম ফারুক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়