ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘মূল্যায়ন পাওয়ার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মূল্যায়ন পাওয়ার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি’

হাসান ইমাম

“কয়েক বছর আগের কথা। আমি বিজয় সরণিতে জ্যামে আটকে ছিলাম। তখন আমার পাশে একটা গাড়ি এসে থামে। এক ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নেমে আমার গাড়ির দরজায় নক করে। দরজাটা খুলতেই সেই ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল এবং বলল- ‘আমার বহুদিনের ইচ্ছে ছিল আপনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করব।’ এ কথা বলে নিজের গাড়ি করে চলে যান। এর থেকে বড় সম্মান আর কি হতে পারে? আমি স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক পেয়েছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, এর চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না।” এভাবেই রাইজিংবিডির প্রতিবেদক রাহাত সাইফুলের সঙ্গে নিজের কথা বলছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর তার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মিশ্র অনুভূতি। স্বাধীনতার পর অনেক কিছু আমরা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার আগে আমাদের যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অধিকার থেকে আমরা এখন অনেক উন্নত। এজন্য অবশ্যই ভালো লাগছে।’

দেশ এখন কতটা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। এখন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে, এগুলো ইতিবাচক। আর নেতিবাচক হলো- এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। মৌলবাদী শক্তির উত্থান হচ্ছে। এ দুটো জিনিস আমাদের ক্ষতি করছে। দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে যখন এ ধরনের ঘটনা নতুন প্রজন্মকে প্রভাবিত করবে না। যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছি ঠিকই কিন্তু নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত হচ্ছে। এ প্রজন্ম ভুল পথে যাচ্ছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন আনতে পারে। রাজনীতি তখনই সফল, যখন সোনার মানুষ পায়।’

আমাদের স্বাধীনতা ও ইতিহাস নতুন প্রজন্ম কতটা সঠিকভাবে জানতে পারছে বলে মনে করেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যে ও অপপ্রচার করা হয়েছিল কারণ যে সরকারের সঙ্গে জামায়াত অন্তর্ভূক্ত থাকবে সেখানে কখনই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে পৌঁছাবে না। নিজের কলঙ্কের কথা কি কেউ প্রচার করে? এখন জামায়াতমুক্ত সরকার ক্ষমতায় আছে তারা সঠিকভাবে প্রচার করছেন। নিজেদের জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী থাকব এবং অপরের জাতীয়তাবাদে শ্রদ্ধাশীল থাকব। এটাই হওয়া উচিৎ।’

দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে আপনারা অংশ নিয়েছিলেন। রাষ্ট্র আপনাদের সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছে কি? উত্তরে তিনি বলেন, ‘মূল্যায়ন পাওয়ার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। যখন মুক্তিযুদ্ধ করেছি তখন আমরা কি ভেবেছিলাম যে, আমাদের মূল্যায়ন করা হবে? এটা তো ঠিক না। আমরা সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে যুদ্ধ করেছি। গ্রামে-গঞ্জে যারা যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছেন বা নারীরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাদের মূল্যায়ন সমষ্টিগতভাবে হওয়া উচিৎ। তবে আমরা যারা এখন সুবিধাভোগী শ্রেণী বাংলাদেশে তাদের অনেকের মূল্যায়ন হয়েছে।’

অভিনেতা, আবৃত্তিকার, স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। নাটক সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাও করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে হাসান ইমামকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় শিল্পীদের প্রতিবাদী সংগঠন বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ। যারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান বর্জন করেন। গণআন্দোলনের চাপে পাকিস্তানি সরকার ৮ মার্চ বেতার ও টেলিভিশনের দায়িত্ব বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ২৫ মার্চের পর হাসান ইমাম মুজিবনগরে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের নাট্য বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে নিযুক্ত হন।

সৈয়দ হাসান ইমাম মুজিবনগর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সালেহ আহমেদ নামে বাংলা সংবাদ পাঠ করতেন। হাসান ইমাম ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংবাদ পাঠ এবং নাট্য বিভাগের দায়িত্বভার বহন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জহির রায়হানকে সভাপতি ও হাসান ইমামকে সাধারণ সম্পাদক করে মুজিবনগরে চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী সমিতি গঠন করা হয়। যাদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দলিল ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় হাসান ইমাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ডিসেম্বর ২০১৮/রাহাত/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ