ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘বিবি রাসেল আমার প্রেরণা’

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বিবি রাসেল আমার প্রেরণা’

নাজমী জান্নাত

আমাদের বিনোদন ও গণমাধ্যমজগত এখনো যেসব বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছে আছে, তার মধ্যে কস্টিউম ডিজাইনিং একটি।

 

বিশেষ করে আমাদের চলচ্চিত্রেগুলোতে পার্শ্বচরিত্রগুলোর কস্টিউম তো দূরে থাক, কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর পোশাকেও হালের ফ্যাশন ট্রেন্ডের তেমন একটা প্রতিফলন ঘটে না। বিশেষত গানের দৃশ্যে এই বৈসাদৃশ্য চরম হাস্যকর অবস্থার সৃষ্টি করে।

 

তবে এখনো গুটিকয়েক মানুষ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যত্নের সঙ্গে এই সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছেন আর প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন কীভাবে একটি সিনেমার মাধ্যমে নতুন নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড চালু করা যায়।

 

তেমনই একজন হলেন নাজমী জান্নাত। বর্তমানে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি। শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ডিগ্রি নেওয়া এই ফ্যাশন স্টাইলিস্ট এখন ‘ঢাকা অ্যাট্যাক’ ছবিতে কস্টিউম ডিরেক্টরের দায়িত্বে আছেন। এর আগে কাজ করেছেন ‘সাত রঙ এর ভালোবাসা’ সিনেমায়। সময়ের বিবেচনায় নতুন কিন্তু দক্ষ এই ফ্যাশন স্টাইলিস্টের সঙ্গে কথা হয় রাইজিংবিডির সহকারী বার্তা সম্পাদক রাসেল পারভেজের। চুম্বক অংশটুক পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

 

 

রাইজিংবিডি : কেমন আছেন?

নাজমী জান্নাত : এই তো বেশ আছি। কাজের ব্যস্ততার মধ্যে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করছি।

 

রাইজিংবিডি : প্রথমেই যখন কাজের ব্যস্ততা নিয়ে শুরু করলেন,  সে সম্পর্কে একটু বলবেন  কী?

নাজমী জান্নাত : আপাতত ঢাকা অ্যাট্যাক চলচ্চিত্রের কাজ নিয়ে ব্যস্ততা আছে। নতুন কয়েকটি সিনেমায় চুক্তি করেছি, সেগুলো নিয়েও প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি। নতুন নতুন কাজ করছি, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ফ্যাশনে ভালো কিছু দিতে হলে অভিজ্ঞতা ও সৃষ্টিশীলতার বিকল্প কিছু নেই।

 

রাইজিংবিডি : যত দূর কাজ করেছেন, তার আলোকে যদি আপনার লব্ধ অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতেন-

নাজমী জান্নাত : অবশ্যই শেয়ার করতে চাই। তবে একটি বিষয় বলতেই হচ্ছে, ফ্যাশন হচ্ছে এমন একটি বিষয়, যা নদীর স্রোতের মতো বাঁকে বাঁকে রূপ বদলাতে বদলাতে এগিয়ে যায়। ফ্যাশন কখনো স্থির নয়। তবে এক্ষেত্রে একজন কস্টিউম ডিজাইনারের অভিজ্ঞতা হলো- তাকে সব সময় নতুনত্ব নিয়ে ভাবতে হয়। নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারলেই তার আনন্দ।

 

রাইজিংবিডি : তাহলে কি সৃষ্টির আনন্দ থেকেই পেশা হিসেবে কস্টিউম ডিজাইনিংকে বেছে নিয়েছেন?

নাজমী জান্নাত : এক কথায় বলতে গেলে সত্যি তাই। সৃষ্টির আনন্দ থেকে এই পেশায় আসা। তবে কমার্সিয়াল দিকটি তো আছেই। কস্টিউম ডিজাইনিং যেমন সৃষ্টিশীল তেমন এর মধ্য দিয়ে হালের ফ্যাশন তুলে ধরা যায়, যা পোশাকের বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে থাকে। সেক্ষেত্রে একজন কস্টিউম ডিজাইনারকে কোনো চলচ্চিত্রে কাজ করার আগে এসব বিষযে মাথায় রাখতে হয়। তবে আমাদের বিনোদনজগত নতুন ফ্যাশনের প্রবাহ আসে না, তারাই যেন বাজারমুখী ও পুরোনোকে আকড়ে থাকতে চায়। এক একটি চলচ্চিত্র থেকে নতুন ফ্যাশন দাঁড় করানোর সুযোগ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি কাজ করতে চাই।

 

রাইজিংবিডি : একটি চলচ্চিত্রের সফলতার পেছনে কস্টিউম ডিজাইন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

নাজমী জান্নাত : খোলামেলাভাবে বলতে গেলে আমাদের দেশে আমরা খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে কস্টিউম ডিজাইনিং নিয়ে রীতিমত গবেষণা চলে। চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলো আরো জীবন্ত হয়ে ওঠে একজন কস্টিউম ডিজাইনারের ছোঁয়াতে। পশ্চিমা ছবিগুলোতে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অন্তর্বাসের ধরনও ঠিক করে দেন একজন কস্টিউম ডিজাইনার। আপনারা বলিউডের পিকে সিনেমায় দেখছেন আমির খান চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে কোন কোন পোশাক পরেছেন। তিনি কিন্তু ইচ্ছামতো পরেননি, একজন কস্টিউম ডিজাইনার তার জন্য ওইসব পোশাক বাছাই করেছেন বলেই তিনি তা পরেছেন। চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে যদি কস্টিউম না করা হয়, তবে চলচ্চিত্র বা নাটক যা-ই হোক না, ফ্লপ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।  চরিত্রগুলো যদি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয় তাহলে আসল মেসেজটাই পৌঁছাবে না দর্শকদের কাছে। তাই আমি মনে করি একটি চলচ্চিত্রকে সফল করতে হলে যুগোপযোগী কস্টিউম ডিজাইনিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। কস্টিউম ডিজাইনিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার আর একটি বড় কারণ এই বিষয়টি।

 

রাইজিংবিডি : এবার আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে যদি বলেন-

নাজমী জান্নাত : যেকোনো ধরনের কাজের ক্ষেত্রেই নতুন কিছু করতে চেষ্টা করি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মধ্যযুগীয় ফ্যাশন ট্রেন্ডের দারুণ ভক্ত। যদি কখনো সুযোগ হয়, তখন এমন একটি কাজ করতে চাই যেখানে সেই রাজা-বাদশাহদের ফ্যাশন ট্রেন্ডটিকে শৈল্পিকভাবে এ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে পারব।

 

রাইজিংবিডি : বর্তমানে যারা কস্টিউম ডিজাইনিংয়ে কাজ করছেন তাদের ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?

নাজমী জান্নাত : অনেকের কাজেরই আমি বিশাল ভক্ত। তবে কারো নাম উল্লেখ করতে চাচ্ছি না। বেশ ভাল কিছু কাজ হয়েছে গেল বছরে, আশা রাখি এবারো এর ব্যতিক্রম হবে না। আর যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে করে কাজ করতে আসছেন, তারাও বেশ দারুণ কাজ করছেন।

 

রাইজিংবিডি : আপনি কি বলতে চাইছেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলে এই পেশায় ভালো করা যায়? না কি আরো কিছু থাকতে হয়?

নাজমী জান্নাত : গতানুগতিক ধারণার বাইরে যদি কথা বলি তাহলে বলব সবকিছুতেই যখন প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানটা থাকবে তখন আপনি অনেক কিছু নিয়েই কাজ করতে পারবেন। কেননা আপনি জানেন কোনটাতে কী ফল আসবে। প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান যদি না থাকে সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে কিছুটা গন্তব্যহীনভাবে এগিয়ে যেতে হয়, যেটা অনেকক্ষেত্রেই আশানুরূপ ফল আনতে পারে না। ফলে কস্টিউম ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দরকার আছে।

 

রাইজিংবিডি : কস্টিউম ডিজাইনিং পেশা হিসেবে কেমন? আপনার মতো করে যদি বলেন-

নাজমী জান্নাত : ধীরে হলেও আমরা উন্নতি করছি, এটা খুবই ভালো দিক। অনেক ভালো ভালো নির্মাতা আসছেন, যার সৃষ্টিশীলতাকে গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশে সৃষ্টিশীল কিছু পরিচালকের জন্য কস্টিউম ডিজাইনিং পেশা টিকে আছে। তবে সার্বিকভাবে অবস্থা ভালো নয়। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। যদি প্রযোজক-পরিচালক না চান, তবে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। বিনোদনজগতকে এগিয়ে নেওয়ার ভাবনাটা থাকলেই এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা পেশাগুলোও এগিয়ে যাবে। আমি মনে করছি, কাজ করার সুযোগ আছে। তবে পেশা হিসেবে কস্টিউম ডিজাইনিং বেছে নেওয়ার আগে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে পরে ভুগতে হতে পারে। 

 

রাইজিংবিডি : শেষ করার আগে জানতে চাইব আপনার ভবিষ্যৎ ভাবনার কথা।

নাজমী জান্নাত : আমার কাজের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলেন বিবি রাসেল। আমি যতই তাকে দেখি ততই মুগ্ধ হই। নিজেকে আজ থেকে কয়েক বছর পর এমন এক অবস্থানে দেখতে চাই যেখানে বিনোদনজগতে বিবি রাসেলের মতো ফ্যাশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। আমিও একদিন বিবি রাসেল হতে চাই। আরো অনেক পরিকল্পনা আছে। তা আপাতত বলছি না যদি কি না পূরণ করতে না পারি, সেই ভয়ে। তবে আমি নিজের প্রতি বিশ্বাসী। সবার দোয়া ও ভালোবাসা থাকলে হয়তো সবই হবে।

 

রাইজিংবিডি : আলাপ শেষ হচ্ছে, তার আগে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার সুস্থ, সুন্দর জীবন ও সাফল্য প্রত্যাশা করছি।

নাজমী জান্নাত : রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলে আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত। রাইজিংবিডি পরিবারকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা জানাচ্ছি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/রাসেল পারভেজ/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়