ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাড়িতে প্রতিবেলায় ৫০ জনের রান্না হতো : চঞ্চল

চঞ্চল চৗধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৪, ৯ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাড়িতে প্রতিবেলায় ৫০ জনের রান্না হতো :  চঞ্চল

আয়নাবাজি সিনেমার পোস্টার

চঞ্চল চৗধুরী : আমার গ্রামের বাড়ি পাবনার সুজানগরের কামারহাটে। আমাদের গ্রামে চার/পাঁচটি মণ্ডপ করা হতো, এখনো হয়। একটা মণ্ডপ থেকে আরেকটা মণ্ডপে যেতে পাঁচ মিনিটের মতো সময় লাগে। মানে- একটা থেকে আরেকটার দূরত্ব খুব বেশি নয়। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, দুর্গাপূজা এলে পুরো গ্রামটাই সেজে ওঠে। পূজা এলে ঘর-বাড়ি-উঠান সাজানোর একটা রীতি আছে। পূজা শুরু হওয়ার একমাস আগে থেকেই মায়ের ব্যস্ততা বেড়ে যেত।  

 

আমার মা খুব, খুব ভালো আলপনা আঁকতে পারেন।  ঘরের দরজা, ঘরের বারান্দা এই সব মায়ের হাতের ছোঁয়ায় একেবারে নতুন করে সেজে উঠত।

 

মায়ের সঙ্গে বোনেরাও আলপনার কাজ করত। সাধারণত মেয়েরাই এই কাজ করে। তবে আমিও মায়ের সঙ্গে আলপনার কাজ করতাম। অথবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মায়ের কাজ করা দেখতাম। আমাদের বাড়িটা এমনিতেই ছিল উৎসবমুখর।

 

আমরা আট ভাইবোন। সব ভাইবোনকে পূজায় সাজিয়ে দেবার জন্য নতুন জামা কাপড় কিনে দিতেন। পূজার আগে নতুন জামা-প্যান্ট কাউকে দেখাতাম না। নতুন জামা পরে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়িয়ে পরতাম।

 

পূজা এলেই কি যেন হতো।  সারাদিন ঘুরতাম। এই মণ্ডপ থেকে ওই মণ্ডপে। এটা-সেটা খেতাম কিন্তু ক্লান্ত হয়েছি কি না, মনে করতে পারতাম না। আসলে মনে করার চেষ্টা করতাম না। সে কি আনন্দ। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে পূজা দেখা, ভোগ খাওয়া।

 

ছোট সময় সারারাত পূজার মণ্ডপে থেকেছি এমন স্মৃতিও নেই। রাত এগারোটার মধ্যে ঘুরাঘুরি শেষ হয়ে যেত, লক্ষ্মী ছেলের মতো বাড়ি চলে আসতাম।

 

আমরা আট ভাইবোন তো আছিই। এরপরে আত্মীয়-স্বজন মিলে বাড়িতে যে লোক সমাগম হতো তাতে প্রতিবেলায় কমপক্ষে পঞ্চাশজনের খাবার রান্না করতে হতো। পূজার কটাদিন মা আর বোনরা মিলে রান্নার কাজ করতেন।

পূজা, পার্বণ ছিল আমাদের গ্রামে সামাজিক উৎসব। কোনো ভেদাভেদ থাকে না। দশমীতে পদ্মায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময় হলে, পুরো গ্রামের মানুষ এসে জড়ো হতো। আশেপাশের গ্রাম থেকেও আসতো অনেকে। সেই দৃশ্য আমাকে টানে।

 

এখনো পূজা এলেই গ্রামের বাড়িতে যাবার চেষ্টা করি। গ্রামে আমার বাবা-থাকেন। থাকেন পরিচিতজনেরাও। আছে পরিচিত নদী। নতুন সাজে আসে সার্বজনীন পূজা উৎসব। শেকড়ের টান অনুভব করি। মাটির কাছে যাবার টান। মানুষের কাছে যাবার টান। আমি দেখিনি পূজাকে কেন্দ্র করে আমাদের গ্রামে কোনো সমস্যা তৈরি হতে। ঢাকের তাল-বোল ছড়িয়ে পড়ত সারা গ্রামে। মন নেচে উঠতো। এখনো উঠে। তবে কারণ বদলেছে।

 

নিজে নতুন জামার জন্য বায়না ধরি না। দুর্গাপূজা এলে সবার জন্যই পোশাক কেনা হয়। এই কেনাকাটার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাই। গ্রামে গিয়ে নিজের সন্তান বা ভাইবোনের সন্তানদের যখন আনন্দে মেতে উঠতে দেখি, তখন সব পাওয়া হয়ে যায়। গ্রামের অন্য ছেলে-মেয়েরাও আমাদের বাড়িতে আসে আবার আমরা অনেকের বাড়িতে যাই। পরিচিত মানুষের সঙ্গে ভালো মন্দ কথা হয়। অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়। সব মিলে দুর্গাপূজা একটা উপলক্ষ্য হয়ে আসে, শেকড়ে যাবার উপলক্ষ্য। পুরোনোকে নতুন করে দেখার উপলক্ষ্য। শুধু ধর্মীয় না সাংস্কৃতিক এবং সমাজিক মেলবন্ধনের সুযোগ হয় দুর্গাপূজায়। পূজা ফিরে ফিরে আসে, ফিরে আসে স্মৃতি, সেও এক অনন্দ্যি সুন্দর।

 

অনুলিখন : স্বরলিপি

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ অক্টোবর ২০১৬/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়