ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বাগতিকদের স্বপ্ন ভেঙে সেমিতে ক্রোয়েশিয়া

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ৭ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাগতিকদের স্বপ্ন ভেঙে সেমিতে ক্রোয়েশিয়া

ক্রীড়া ডেস্ক: মারিও ফিগুয়েরা ফার্নান্দেজ নিজেকে নায়ক ভাববেন নাকি খলনায়ক? তার গোলেই ১১৫তম মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সময়তায় ফেরে রাশিয়া। মিনিট দশেকের ব্যবধানে পথ হারিয়ে বসেন ফার্নান্দেজ।

টাইব্রেকারে তার শটে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘন্টা বেজে যায় রাশিয়ার। দৌড়ে এসে তার পাগলাটে শট বেরিয়ে যায় বারপোস্টের কাছ ঘেঁষে! সেখানেই বিশ্বকাপ শেষ রাশিয়ার। টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে রাশিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো শেষ চারে উঠল ক্রোয়েশিয়া।

সোচি স্টেডিয়ামে দুই দলের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের লড়াইয়ের প্রথম অর্ধের দশম মিনিটে (১০০তম মিনিটে) গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে নেন ডমাভোজ ভিডা। লুকা মড্রিচের কর্ণার কিক হেড দিয়ে বল রাশিয়ার জালে পাঠান ভিডা। 

দ্বিতীয় অর্ধের ১১৫ মিনিটে রাশিয়াকে ম্যাচে ফেরান মারিও ফিগুয়েরা ফার্নান্দেজ। ডি বক্সের খানিকটা বাইরে হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে রাশিয়াকে ফ্রি কিক উপহার দেন জোসিফ পিভারিক। দ্রোয়েজগোয়েভের ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ এক হেড নেন ফিগুয়েরা ফার্নান্দেজ। গোল রক্ষক চেরিশেভের ওই আক্রমণ ফেরাতে পারেননি।

২-২ গোলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে শেষ হাসিটা হাসে ক্রোয়েশিয়া।

শুরুতেই রাশিয়ার ফেদর স্মলভের শট ঠেকিয়ে দেন সুবাসিচ। ক্রোশিয়ার হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ব্রজোভিচ। দ্বিতীয় শটে রাশিয়ার খাতা খুলেন অ্যালন দ্রোয়েজগোয়েভ। রাশিয়াকে এরপর ম্যাচে ফেরান আকিনফিভ। বামদিকে ঝাঁপিয়ে কোভাসিচের শট রুখে দেন রাশিয়ার অধিনায়ক।

রাশিয়ার তৃতীয় শটে সব এলোমেলো করে দেন মারিও ফিগুয়েরা ফার্নান্দেজ। নায়ক থেকে বনে যান খলনায়ক! পিছিয়ে পড়ে রাশিয়া আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। লুকা মড্রিচ, ডমাভোজ ভিডা ও ইভান রাকিতিচ সফল শট নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার জয় নিশ্চিত করেন। রাকিতিচ শেষ ম্যাচে সাডেন ডেথে গোল করে ক্রোয়েশিয়ার জয় নিশ্চিত করেন। এবার তাই। স্নায়ু পরীক্ষায় শতভাগ সফল বার্সেলোনার হয়ে খেলা এ মিড ফিল্ডার। রাশিয়ার শেষ দুটি শটে গোল করেন সের্গেই ইগনাশেভিচ ও কুজিয়ায়েভ। কিন্তু তাদের সফল স্পটকিক পরাজয়ের ব্যবধান কমায় মাত্র।

সোভিয়াত ইউনিয়নের থেকে আলাদা হওয়ার পর এবারই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল খেলল রাশিয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এটাই তাদের সবথেকে বড় প্রাপ্তি। বিশ্বকাপের শেষ পাঁচ আসরে স্বাগতিক দল যারা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল প্রত্যেকেই গিয়েছিল সেমিফাইনালে। ১৯৯০ সালে ইতালি, ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স, ২০০২ সালে সাউথ কোরিয়া, ২০০৬ সালে জার্মানি এবং ২০১৪ সালে ব্রাজিল সেমিফাইনাল খেলেছিল। পাঁচ আসর পর রাশিয়া সেই পথ থেকে ছিটকে গেল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মেক্সিকো শেষ স্বাগতিক দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়েছিল। রাশিয়া অনুসরণ করল তাদের পথ। তবুও ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট রাশানরা।

সোচিতে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে দুই দল। দুই দলের মাঝমাঠ ছিল গোছানো। সম্মিলিত আক্রমণে প্রতিপক্ষ শিবিরে কাঁপন ধরাচ্ছিলেন বারবার। কিন্তু লক্ষ্যভেদ করতে পারছিল না কোনো দল।

২০ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার তিনটি এবং রাশিয়ার দুটি আক্রমণ ছিল অন টার্গেটে। ১১ মিনিট পর রাশিয়া লিড পায় অসাধারণ এক গোলে। ডেনিস চেরিশেভের ডি বক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ের বাঁকানো শট হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে খুঁজে পায় ক্রোয়েশিয়ার জাল। বিশ্বকাপে এটি চেরিশেভের চতুর্থ গোল। ক্রোয়েশিয়ার গোল রক্ষক ডেনিস সুবাসিচের দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না ওই মুহূর্তে।

পিছিয়ে পড়ে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় ক্রোয়েশিয়া। ৮ মিনিট পর ফলও পেয়ে যায় তারা। মাঝ মাঠ থেকে কাট ব্যক পাসে বল পান মারিও মানজুকিচ। বাম প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ভেতরে ঢুকেন এ স্ট্রাইকার। ততক্ষণে ডি বক্সের ভেতরে আন্দ্রেজ ক্রামারিক। তাকে ঘিরে চার রাশান। কিন্তু মানজুকিচের নিখুঁত ক্রস ঠিকই খুঁজে নেয় ক্রামারিককে। তার হেডে বল যায় রাশিয়ার জালে।  

আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ জমিয়ে তুলে দুই দল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে গোল পায়নি কেউ। অতিরিক্ত সময়ের দুই গোলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। শেষ হাসিটা হাসে মড্রিচ, মানজুকিচ ও রাকিতিচরা। ক্রোয়েশিয়া দ্বিতীয় দল হিসেবে এক আসরে পরপর দুবার টাইব্রেকারে ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব দেখাল। প্রথম দল হিসেবে এমন কীর্তি গড়েছিল আর্জেন্টিনা।   

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জুলাই ২০১৮/ইয়াসিন

 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়