ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

উন্নত জীবনের হাতছানি ও বাস্তবতা

নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ৩০ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উন্নত জীবনের হাতছানি ও বাস্তবতা

আলী নওশের : ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের উদ্দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ। আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে তারা যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রায়ই তারা দুর্ঘটনায় পড়ছে ও প্রাণ হারাচ্ছে।

 

তা সত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা বন্ধ হচ্ছে না। তাদের লক্ষ্য সমৃদ্ধ জীবন ও প্রাচুর্য। কিন্তু উন্নত জীবনের আশায় তারা যে নিজের জীবনের পাশাপাশি পরিবারকেও ঠেলে দিচ্ছে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে তা তারা অনুধাবন করতে পারছে না। 

 

লিবিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় প্রায়ই  নৌকাডুবির ঘটনা ঘটছে। সাগরে ডুবে মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। জাতিসংঘের হিসাবে এ বছরের প্রথম আট মাসেই এমন নৌকাডুবির ঘটনায় মারা গেছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ।
 গত ২৭ আগস্ট লিবিয়ার উপকূলে দুটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ৮২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুই শিশুসহ ছয় বাংলাদেশির মৃতদেহও রয়েছে।

 

এদিকে লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে থাকা উদ্ধার বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে লেবার কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলাম জানতে পেরেছেন, আরও ১৮ বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। এদের কেউই আর বেঁচে নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

প্রায় ৫০০ যাত্রী নিয়ে ইঞ্জিনচালিত দুটি নৌকা ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। ২০০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে হয়েছে দুই শর বেশি যাত্রী। বিবিসিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খরব অনুযায়ী দুটি নৌকায় ৭৮ জন বাংলাদেশি ছিলেন। এদের মধ্যে ৫৪ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া নৌকা দুটির আরোহীদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, পাকিস্তান, সিরিয়া ও মরক্কোর নাগরিক ছিলেন।

 

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ইতালি গমনেচ্ছু বাংলাদেশিরা অনেক দিন ধরেই লিবিয়ায় অবস্থান করছিলেন। সঙ্গে থাকা অনেক শিশুর জন্মও হয়েছে সেখানেই। লিবিয়ার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর থেকেই তারা বহু কষ্টে সেখানে দিন কাটাচ্ছিলেন। কেউ কেউ লিবিয়া ছেড়ে পাশের দেশেও আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু উপযুক্ত কাজের অভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁদের সেখানে টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। তাই অনেকটা উপায়ান্তরহীন হয়েই তারা এমন ঝুঁকিপূর্ণ পথে পা বাড়িয়েছিলেন।

 

এদিকে, মধ্য ইউরোপোর দেশ অস্ট্রিয়ায় একটি লরি থেকে শিশুসহ ২৬ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন বলে পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। গত ২৮ আগস্ট অস্ট্রিয়ার ব্রাউনাউ জেলায় লরিটি আটক করা হয়। এ ঘটনায় পালিয়ে যাওয়ার সময় লরির চালককে আটক করা হয়েছে।

 

এর আগের দিন (২৭ আগস্ট) অস্ট্রিয়ায় একটি কাভার্ড ভ্যানের ভেতর থেকে অর্ধশতাধিক লোকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দরজা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে দম বন্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। এদের প্রায় সবাই মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়া কোনো দেশের শরণার্থী। অর্ধশতাধিক ওই মরদেহের মধ্যে কোন বাংলাদেশি ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি।

 

সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের দূর্গম পাহাড়ি-বনাঞ্চলে গণকবরে পাওয়া গিয়েছে বহু লাশ। গহীন জঙ্গলের পাশাপাশি বিশাল সমুদ্রেও নৌকাডুবি ও না খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছে শতশত অভিবাসন প্রত্যাশী। এদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশির লাশ পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে তারা। এ ছাড়া কোনরকম জীবন বাঁচিয়ে মৃত্যুর ছোবল থেকে ফিরেছেন ও ফিরছেন হাজারো অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশি।

 

দেশব্যাপী সক্রিয় মানবপাচার চক্রের মূল উৎপাটন করা না গেলে অবৈধ পন্থায় অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনা দূষ্কর। দেশে চাহিদানুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় নিরুপায় হয়ে বিদেশে যেতে বাধ্য হন অনেকে। সাধারণ মানুষের একটি বৃহৎ অংশ বেকার। তারা হতাশায় ভুগছেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে হতাশ মানুষের অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে না। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। 

 

তরুণ বা যুবকদের ঝুঁকিপূর্ণ বিদেশ যাওয়া রোধে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বেকার সমস্যার দূরীকরণ, মানব পাচার বন্ধ, রেমিটেন্স বাড়ানোর উদ্যোগ, শ্রমিকদের দক্ষ করে তোলার মতো নানা পদক্ষেপ নিয়ে সরকারের অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।


 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ আগস্ট ২০১৫/নওশের/রণজিৎ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়