ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এত দিন যা মুভিতে দেখতাম

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এত দিন যা মুভিতে দেখতাম

সাইফ বরকতুল্লাহ : সময় রোববার (২৯ নভেম্বর ২০১৫) দুপুর ১টা। গায়ে মেরুন কালার ফুল হাতা গেঞ্জি। পরনে নরমাল প্যাণ্ট ও জুতা, বাম হাতে কালো ফিতার ঘড়ি। টাই আর চোখে কালো চশমা পড়া এক ব্যক্তি বাম পাশে । সঙ্গে কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়ে হাঁটছেন। পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আছেন। অ্যাকশন দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন হরর সিনেমার কোনো চিত্রায়ন। কিন্তু না, উদ্দেশ্য তেজগাঁও শিল্প এলাকায় রাস্তার ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ ট্রাক টার্মিনালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো।

 

রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক অভিযান পরিচালনার সামগ্রী ও দুই প্লাটুন পুলিশ নিয়ে হাজির হন সেখানে। আনিসুল হক দেখতে পান, বেশ কয়েকটি কাভার্ডভ্যান রাস্তার ওপর পার্ক করে রাখা হয়েছে। তিনি একটি কাভার্ডভ্যানের সামনে গিয়ে চালক জসিমকে আধঘণ্টার মধ্যে সেটি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। আধঘণ্টা সময় অন্যত্র অভিযান চালিয়ে পরে মেয়র ওই স্থানে গিয়ে দেখেন, গাড়িটি সে ভাবেই রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মেয়র রেকার লাগিয়ে গাড়িটি সরিয়ে নিতে বলেন। সরানোর সময় গাড়িটি কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

হ্যাঁ প্রিয় পাঠক, তারপরের দৃশ্য আরো ভয়াবহ। চলুন দেখি সেই ঘটনার দৃশ্য।

 

অভিযানের সময় পরিবহন শ্রমিকরা আকস্মিক ঘটনাস্থল লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। মুহূর্তেই শতশত শ্রমিক বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ততক্ষণে মেয়রকে কর্ডন করে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক নিজের গাড়িতে উঠে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এসময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরিবহন শ্রমিকরা সাত রাস্তার মোড়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। মেয়রের প্রটোকলের দুটি গাড়ি সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় পরিবহন শ্রমিকদের কবলে পড়ে ভাংচুরের শিকার হয়। এসময় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা রাস্তার ওপর বেশ কয়েকটি কাভার্ডভ্যান ফেলে ব্যারিকেড তৈরি করে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। তারা রাস্তার ওপর কয়েকটি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। তারা মেয়রের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে।  কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়েন মেয়র আনিসুল হক। প্রায় এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব আসে।

 

এসময় সাংবাদিকরা তার মুখোমুখি হলে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, বাইরে চার-পাঁচজন লোক হৈহৈ করলেই তাদের কথা মানতে হবে- এমন কোনো কারণ নেই। নগরীর মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে, সে কাজ তিনি করছেন। অভিযান শুরুর আগে তিনি বলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং ঢাকার মানুষ তার সঙ্গে আছেন। এখানে রাস্তার ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ পার্কিং তিনি বন্ধ করে ছাড়বেন। এখানে কারও মাস্তানি চলবে না। অবৈধভাবে গড়ে তোলা ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে একটি আধুনিক ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করবেন।

 

মেয়রের এমন দৃঢ়চেতা কন্ঠ টেলিভিশনে দেখে অনেকেই সাধুবাদ দিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন। হ্যাঁ, সত্যিই তো তাই। এই আধুনিক যুগে আধুনিক টার্মিনাল হবে, পরিচ্ছন্ন নগরী হবে, জলাবদ্ধতা থাকবে না, বিশ্বের বড় বড় আধুনিক শহরের মতো সময়ের পালে ঢাকাও হয়ে উঠবে সেরা বাসযোগ্য শহর। আর এর জন্য ভালো কাজ করতে গিয়ে যদি বাধার মুখে পড়তে হয় তবুও কাজ সম্পন্ন করার প্রাণপন চেষ্টাই সাফল্য এনে দেয়।

 

আমরা এর আগেই দেখেছি, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে আনিসুল হক হাতে ঝাড়ু নিয়ে নগরীর রাস্তা পরিষ্কার করেছেন। জাপানি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নগরীর ময়লা পরিষ্কার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এমন দৃশ্য আমরা ছোট বেলায় বিভিন্ন সিনেমায় দেখতাম। কিন্তু সময় বদলেছে। পাল্টে গেছে বিশ্ব। ডিজিটাল সময়ে মানুষ উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে। ২০১৫ সালে তেমনি আনিসুল হক ‘আমার ঢাকা’ কর্মসূচি নিয়ে সিটি নির্বাচনে চমক দেখিয়েছেন। নির্বাচনের পরও তেমনি চমক একটার পর একটা দেখাচ্ছেন। অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের কারণে তাকে অনেক সাধুবাধ জানায় ঢাকাবাসি।

 

আনিসুল হকের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তারপর ব্যবসায়ী হিসেবেও তার সুনাম-সুখ্যাতি রয়েছে। একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হয়েও তেজগাঁওয়ের মতো সাহসী ঘটনা ঢাকাবাসীকে আশাবাদি করে তুলেছে।

 

আমরাও আশা করব, আনিসুল হক বলিষ্ঠতা, দৃঢ়তা ও কঠোরতা নিয়ে ঢাকা শহরকে আধুনিক শহর বানাবেন। এর জন্য যদি সিনেমার হরর দৃশ্যের মতো অভিনয়ও করতে হয় তা তিনি করবেন। তেজগাঁওয়ের ঘটনার জন্য ধন্যবাদ মেয়র।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ নভেম্বর ২০১৫/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়