ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

জীবিকা যাদের বাঁশের মোড়ার গাঁথুনিতে

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৮ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবিকা যাদের বাঁশের মোড়ার গাঁথুনিতে

মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত মনিরামপুরের চিনাটোলার ঋষি পল্লীর মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : গোবিন্দ দাস, নরেন দাস, অনিতা দাস ও শ্যামলী দাস সারিবদ্ধভাবে বসে আপন মনে মোড়া তৈরি করছেন। কেউ বেতি দিয়ে মোড়া তৈরি শুরু করেছেন। কেউবা মোড়ার ফিনিশিং কাজটা করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এমন দৃশ্য দেখা যাবে যশোরের মনিরামপুরের চিনাটোলার ঋষি পল্লীতে গেলে।

মোড়া তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করে এখানকার দেড়শ’ পরিবার। মনিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা গ্রামের বুক চিরে বয়ে যাওয়া হরিহর নদীর তীরঘেঁষা এই ঋষি পল্লীতে দেড়শ’ পরিবারে প্রায় হাজার খানেক মানুষের বসবাস। এই পল্লীতে প্রতি পরিবারের নারী-পুরুষ-এমনকি তাদের সন্তানরাও মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তাদের জীবন-জীবিকার মূল উৎস হলো মোড়া বানানো। পূর্বপুরুষের আদি এ পেশা আঁকড়ে ধরেই স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে নিয়েছেন তারা।

কথা হয় মোড়া বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকা গোবিন্দ দাস, নরেন দাস, অনিতা দাস, গুরুপদ দাস, শ্যামলী দাসসহ অনেকের সঙ্গে। ষাটোর্ধ্ব নরেন দাস বলেন, ‘তোমাগে আশীর্বাদে সৃষ্টিকর্তা ভালোই রাহিছে। দুই বেলা, দুই মুটো খাইয়ে পরে বাঁচে আছি’।

তার মতো ওই পল্লীর প্রত্যেকটি পরিবারের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই এই মোড়া বানানোর সাথে জড়িত।

মোড়া কারিগর গৃহবধূ অনিতা দাস (৩০) বলেন, ‘জমি-জুমা নেই, মোড়াই আমাদের ভরসা’।

 

বাঁশ (তল্লা), কটবেতী, সাইকেলের পুরাতন টায়ার, রং এর সংমিশ্রণে ছাউনি করে টায়ার আড়া ও কোমর পেচি বাঁধাই করে বানানো প্রতি জোড়া মোড়া ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাভ হয়। এভাবে একজন দিনে ৩/৪টি মোড়া  বানাতে পারেন বলে তারা জানান।

গোবিন্দ দাস জানান, ‘তাদের তৈরিকৃত মোড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, বাংলাবান্দা, পঞ্চগড়, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে কিনে নেন। আবার অনেক সময় মনিরামপুর থেকেও তারা পাইকারদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এমনকি বিদেশেও যায় বলে জানান গোবিন্দ দাস। তবে বিদেশে তারা সরাসরি পাঠান না। তাদের কাছ থেকে পাইকারিভাবে যারা কিনে নেন তারাই বিদেশ পাঠায়।

ওই পল্লীর শিশু-কিশোররা পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে বাবা-মায়ের কাজে সাহায্য করে থাকে। ৫ম শ্রেণির ছাত্রী নদী দাস ও ৩য় শ্রেণির ছাত্র বাঁধন দাসের মোড়া বানানোর দৃশ্য দেখলে তা সহজেই অনুমান করা যায়।

মোড়া পল্লীর শিক্ষিত বেকার যুবক পরিমল বলেন, ‘বর্তমান  সময়ে প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহারে আমাদের এ শিল্প মার খেয়ে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ক্ষুদ্র এ কুটির শিল্পে তৈরি মোড়া বিদেশে রফতানি করে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো’।

এ পল্লীর শুভংকর জানান, মোড়া বানানোর জন্য বাঁশের প্রয়োজন হয়। এই বাঁশ তারা বাজার থেকে ক্রয় করে থাকেন। বর্তমানে বাঁশসহ মোড়া তৈরির উপকরণের দাম বেড়েই চলেছে। সেই তুলনায় মোড়ার দাম বাড়েনি। আবার কম দামে প্লাস্টিকের চেয়ার, টুল বাজারে পাওয়া যাওয়ায় দাম দিয়ে বাঁশের মোড়া কিনতে অনেকে অনাগ্রহী হচ্ছে। এজন্য তিনি এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।




রাইজিংবিডি/যশোর/২৮ নভেম্বর ২০১৬/বি এম ফারুক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়