ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

তুরস্কের হার, জয় এরদোয়ানের

তৈয়বুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ৩০ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তুরস্কের হার, জয় এরদোয়ানের

তৈয়বুর রহমান : রাজনীতিকদের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়লে লোকজন প্রায়ই বলে থাকেন, এর চেয়ে সামরিক শাসনই ভালো। ডান্ডার বাড়ি ছাড়া এদেশের লোক কোনো দিনই ঠিক হবে না। এটি অবশ্য ক্ষোভের কথা, রাগের কথা ; অবশ্যই, মনের কথা নয়। যিনি বলছেন, তিনিও জানেন, সমরিক অভ্যুত্থান একটি দেশে ভয়বহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমরা তো ভালোভাবেই বুঝি, তুর্কিরাও কম বোঝে না। কেননা সে দেশের ইতিহাসেও গণতন্ত্র বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে জেনারেলদের বুটের তলায়।

সম্প্রতি তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা হয়। প্রাণ হারায় আড়াই শতাধিক লোক। এরপরই প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান শুরু করেন শুদ্ধি অভিযান। এ পর্যন্ত চাকরি হারিয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। বোঝাই যাচ্ছে, অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পুরো ফায়দা লুটছেন এরদোয়ান, শক্তিশালী করছেন তার নিজের অবস্থান, বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার জন্য যা করা দরকার তিনি তা-ই করছেন এবং ভবিষতেও করবেন।

সামরিক অভ্যুত্থান কোনো দেশের জন্য আসলেও ভালো নয়। সফল হলেও ভালো নয়, ব্যর্থ হলেও ভালো নয়, অর্থাৎ যেতেও কাটে, আসতেও কাটে। রীতিমতো করাত। তাহলে সামরিক অভ্যুত্থান মানে বিপর্যয়, কিন্তু এই বিপর্যয় কার? এক কথায় এর উত্তর দেওয়া যায় ‘পাবলিকের’। এই যেমন, এরদোয়ান নিজের হাত শক্তিশালী করতে বিরোধীদের কণ্ঠ চেপে ধরেছেন। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার মাসুল দিচ্ছেন জনগণ। আসলেও ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।’

 


ফেতুল্লাহও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। অনেকটা তিক্ততার সঙ্গে বললেন এক তুর্কি রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ‘ফেতুল্লাহ আমাদের কোনোভাবে সহয়তা করছেন না। বরং পুরোপুরি এরদোয়ানের হাতে আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন।
 
গুলেনবাদীরা মূলত দুটি ভিন্ন উপায়ে কাজ করে থাকে। প্রথমত, স্কুল, কলেজ, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, প্রচারমাধ্যম ইত্যাদির কাছে মধ্যপন্থি হিসেবে তাদের পরিচিত গড়ে তুলেছে। দ্বিতীয়ত, তাদের আবার গোপন সংগঠনও রয়েছে। এই সংগঠন সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী অর্থাৎ বিভিন্ন বিভাগে গোপনে কাজ করে থাকে। সুতরাং এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, গুলেনের কর্মকান্ড চরমপন্থিদের মতো। শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছে তারা, তা পেলেও দেখা যাবে তাদের আসল চেহারা!

এতেই প্রমাণ হয়, ইউরোপের সঙ্গে থাকলেও তুরস্কের সার্বিক রাজনীতি কিন্তু অতটা মসৃণ নয়। ইউরোপে যেমন গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে, তুরস্কে কিন্তু গণতন্ত্রের সুবাতাস মোটেও নেই। বরং আছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। তাই দেশটিতে প্রায়ই ঘটে সামরিক অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা। কখনো সফল হয়, কখনো আবার ব্যর্থ হয়। ব্যর্থ হলে অভ্যুত্থানকারীরা হয় দেশদ্রোহী, আর সফল হলে হয় বিপ্লবী।


যাই ঘটুক, অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারী বা নেতারা লাভবান হতে পারে, কিন্তু মোটেও লাভবান হয়নি তুরস্ক ও তুরস্কের জনগণ।

এ ছাড়া তুরস্কের জনগণের মধ্যে আমেরিকাবিরোধী অসন্তোষ বিরাজ করছে ব্যাপকভাবে। সরকার ও তুরস্কের জনগণ, উভয়ে মনে করে যে, এই অভ্যুত্থান চেষ্টায় আমেরিকার হাত রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায়, যুক্তরাষ্ট্র গুলেনকে হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেনি ঠিক। তবে বলেছে, উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে আঙ্কারার কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে গুলেনকে। আমেরিকার এই বক্তব্যকে তুর্কি জনগণ ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো মনে করছে।

এরওপর স্বেচ্ছা নির্বাসনে গুলেন আমেরিকায় বসবাস করছেন বলে তুর্কি জনগণের বিশ্বাস, এই অভ্যুত্থানের পেছনে আমেরিকার অবশ্যই হাত আছে। যাই হোক, আমেরিকা ও তুরস্কের মধ্যকার সম্পর্ক অভ্যুত্থানে আগেও ভালো ছিল না, ব্যর্থ অভ্যুথানের পর তো ভালো হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

এতে লাভবান হচ্ছে আমেরিকারই শত্রু জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আমেরিকাবিরোধী তুরস্কের নির্বচনী এলাকাগুলো দখলে নিয়ে তাদের তৎপরতার গন্ডি বাড়ালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

 

<2lbJdQFji6hH/DVSFlX6+LudyvL/8A2FOf59rRNfOqc/8Aobf9OtUvCqzbXuLtu7Jsh/KvIHZe8hv5YGsAb7nClaquTTNMjXs94d0Ka3lewa9yn/HTj/6dUdlx9ny/nVakq+Itu3gPbaAT3BL3FjfQKaObgwlsY4mh7iKVUU7f/wDd3UPk6cxWv/NX/cqWGUOrr6W9lknk9jSa0CZmEmRz2agrpHw+md8n/rTY8aClf+StP81GPdu0ktkS29TsHGM1LR+KOMW8rqyOoU3HGutP+fl/uRu4f/y/y5q+XfC3JpFMaprDU/iSuPyLbWQ9wAsbsVb4POLbtx27AQRtxFVnDqcHU/y2/wA1bvt52P5VvL+PrUf+b3v8uGiz3WN1e9wi+J5FlWxbvT/c1DAu8kzfFkMH/YvoDMdCAVf8X4dgsKPrLwturk6/ua8T8E9xtfo28O3Th/7Cnb26dzVVq77nKav1nzf9Tt0/LikYK4Unsun+DNPNeV2XyVdXHin/AAH2UxbJpvqMa4lzzpEPlCzTzPxK7unulmaW3AFQ0A0Wv4On07dq/GvNDMcOxJy+nrxP97nz/wDSt1XaNFoc5dTyTkcdeWdxxvoy0jRoANKJ/iyJYXuHscz5QOq0DyPtfS3HL6KnJ39/u8v+Xjqs5xVO/LTaunGvD8uWqspnUrnjbqOJoHub3dnHdNo79ts6g+b1T69rxPz/APLSirz/AO7/APqrMXhjZoSNzf3U4pyPH0TIgEg016rqNuqDumyUxouPRLe5JYkSfmhEnC4PIhN11euZTCr6i2J3DsmrE5i2UMshw1dWlcWroFQshZiMpTm3xvLVc4fzUva1oN/8km0Sx9ZhDOW1MTVxYBSrlI3lePX/ACUI/wDu/q/3JTguHcmAPArqVY/tvbvlzjJ4wD2XVBJVYuNx8v8AvUl4bX6m4p9R/wD49K/+pCVYepVyaB95HWs9tDct4/WGgdx10WYxACJpf81ArD5Dy7LeXf3/APeca/8AoVdPzD8PyT1EIopkEho9hG3VG95LhTYJD90pv5KB9ZJS2yLoYuFeiZTTl0nOq4HdA7KC2vgd298OB41Dtlrv2/imjt+UjaMp/uWTMryh+f8Ayotp8Rr/ABB3+TpSuyVzP+NegzhxvfqSV3iLLITi4jIEjTuE7nltra3BkOkI9xKhMLz7k1e/8x+bhT/JI8n5fw93Tubfo48v81zcEbzp5Z2LWfAxvzDJHK5uZsbqxMPt/IquyF5fyrUjRKdXvyfPXX5qcvzXJvzHf812axCOVZuXoPIH+1SFs/dRMPXdPrbrul2g0UnctCQa/wBxFd1zmsRNt11SGfP1TuOtP1f5JeknQy7vi6diLfCYgW12Vy8JzXbuGQHoVT5vnfv+amfD/wD8mzb5lOkP0ZyqTv6Gs+Uww5nFGFw1DC4D8li+PHbyTopRxbG7iD+BW3XPyn5f7fTbZYzl/wDzZ6U+c/2t/wD1LPxZ2vdpqa80RpqW3LZyCxsI47Z9XuGtCqcZ5LmQyyGtfVMpK8Ry7v8A/WpT8uK6x/J1/JPoqbtGupzm7T0LZ47bRzOBIrqFo0fi1pewMlDAZGjQqgeHbfmN/wAVs+H/ALLdvyVc8zWOkmikbdTzl9wbN9ne9l2lD/vVXc0MAqr992v/AMudt+n4qiz/ACD8Fsp0RzORG96iWSMDg31Tq6iHaa9Rn/UH+5Slx/4rd9kWL67CLeQ6gTlswhZT/JMhv+a6n5x/v2U6bX4C8cyyTxzHOcZSParBasFxFOyPfiVHWP8A4x+Xbon+G/8Acb/KdkpdRpBsx7I43mQ68iu1ky3idSgNUV5/bf8AN8xXC1+cf71cmvUlrfJQPn7YjB4KVvfJX2Vs36Zg5nQ0VWs//Ll2/JOZv7za7V/X8v8AkhfUoGaQ5ND8JdN5AaXDeDTudlM31sMBfthaeTJTqufh/wD+MHDhWg/8X5//AO5ol+R7x8q8tP739z8uGiKu3y9O5ayr8ej7Dy8xszom3kXy7ii64y6juCIMhrTaQ719E58f5fQP5d2nH/3HHh+XHVMnU7Zp2/m/TWv+a6OSfj1Odj/5NB95D47Fnce6F8YbdU/7do2cKLDcphpsTPJazNPcbpxI0Xo/DcvphXnt/wBSnP8A5KLMPuTw+ojp9PWorx593f8AXXRc9ddOp0Zt3WhnGKFsbgx37jGxutApl2Zs7B4OPt2zAacyNVCy077vk261qpLDcO26v09a/r5V/wAlGN23W0Yt7dyhrqSOJ8jyU2Ridb8mtr72jYarc8N5RaW8LBkJOD30DK03osjwnH6+Kv0u/wCnl/uTnyz/AMhv9zpTht/yf/VLtPzP1Onm2/4ql9jSM3fCeclr+dQSNa6Ku29ybRss5Py1TDC8/ohy+prT/wBxw5/+nSiO/wD/AMdPSv5b/wCa0W6nDrG3R9ykZy6OQvpJBrruo54dxDE4j/uu/wB+6J3z9FehSxyZUMoU2mTx35fkmkyaLGh3RV6Izui6KCT/2Q==" alt="" />


ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ফলে রাষ্ট্র হিসেবে তুরস্কের ক্ষতি অবশ্যই হলো। সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করারও মাসুল দিতে হচ্ছে তুরস্ককে। শিয়া-সুন্নি, কুর্দি-অকুর্দিদের মধ্যে সংঘাতেরও মূল্য দিতে হচ্ছে তাদের।

অথচ এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পুরো ফসল ঘরে তুলতে পারতেন এরদোয়ান। দ্বিধাবিভক্ত তুর্কি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারতেন। কিন্তু সেই পথে তিনি হাঁটলেন না, হাঁটলেন তার নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে আরো সুসংহত করার পথে। দেড় হাজার প্রচারমাধ্যমের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছেন। একের পর এক ছাঁটাই করছেন রাষ্ট্রের কর্মচারীদের। অবশ্য রাষ্ট্রের কর্মচারী বললে ভুল বলা হবে, বরং বলা উচিত এরদোয়ানবিরোধীদের।

সুতরাং তুরস্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। সময়ের বিবর্তনে এরদোয়ানের অফিসে তালা ঝুললে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৬/তৈয়বুর/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়